গৌরনদী
ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করায় গৌরনদীতে শিক্ষক গ্রেপ্তার \ বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ , সাময়িক বরখাস্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ দশম শ্রেনির পাঠদানের সময় ইসলাম সম্পর্কে কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করার অভিযোগে গত রোববার বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মেদাকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উজ্জল কুমার রায়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি। এদিকে সোমবার বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির জরুরুী সভায় সহকারী শিক্ষক উজ্জল কুমার রায়কে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় লোকজন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্ধরা জানান, রোববার মেদাকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উজ্জল কুমার রায় (৪৮) দশম শ্রেনির রসায়ন বিষয়ে পাঠদানের জন্য শ্রেনি কক্ষে গিয়ে ইসলাম সম্পর্কে কুরুচিপূর্ন ও বিরুপ মন্তব্য করেন। স্কুল ছুটির পরে শিক্ষর্থীরা বিষয়টি অভিভাবক ও এলাকাবাসিকে জানালে সকলেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এ ঘটনার জের ধরে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিক্ষক উজ্জল রায়ের ওপর হামলা চালিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এক পর্যায়ে সহকারী শিক্ষক উজ্জল রায় প্রান রক্ষায় খালের মধ্যে ঝাপ দিয়ে খাল সাতরিয়ে কালকিনি উপজেলার ভাউতলী গ্রামের নাইয়াপাড়া আব্দুর রব সরদারে ঘরে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টারদিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে সহকারী শিক্ষক উজ্জল কুমার রায়কে আটক করে ।
ইসলাম সম্পর্কে কুরুচিপূর্ন কটুক্তি ও বিরুপ মন্তব্য করার প্রতিবাদে ও ঘটনায় জড়িত শিক্ষক উজ্জলের দৃষ্ঠান্তমূলক বিচারে দাবিতে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসি প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিক্ষোভ মিছিল করে । খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ নুর আলম সেরনিয়াবাত ও গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার সভাস্থলে পৌছে বিচারের আশ্বাস দিলে কর্মসূচী স্থগিত করা হয়।
গৌরনদী মডেল থানা হাজতে থাকা অবস্থায় সহকারী শিক্ষক উজ্জল কুমার রায়ের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি গো-মাংস খাওয়া নিয়ে কথা বলেছি কিন্তু কোরআন, নবী ও ইসলাম সম্পর্কে কুরুচিপূর্ন খারাপ কোন কথা বলিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণকান্ত ঘরামী বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সহকারী শিক্ষক উজ্জল কুমার রায়কে সাময়িকভাবে বরখান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য আবদুল আহাদ মিয়াকে আহবায়ক ও প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণকান্ত ঘরামী, দাতা সদস্য প্রজবাসি পোদ্দার, শিক্ষক প্রতিনিধি সমীর কুমার দে ও ইসলাম ধর্ম শিক্ষক মোঃ আমানুল্লাহকে সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে রিপোর্টের ভিত্তিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত গ্রহন করা হবে। খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ নুর আলম সেরনিয়াবাত এ প্রসঙ্গে বলেন, সহকারী শিক্ষক উজ্জল কুমার রায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করে শ্রেনিকক্ষে কথা বলায় এ পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়। বিচারের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ গোলাম ছরোয়ার বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে সহকারী শিক্ষক উজ্জল কুমার রায়কে গ্রেপ্তার করে সোমবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।