বরিশাল
প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে সরকারি খাল দখল করে স্থাপনা নির্মান
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দাসেরহাট-আগৈলঝাড়া খালের নিমতলা নামক স্থানে এক প্রভাবশালী সরকারি খাল দখল করে স্থাপনা নির্মান অব্যহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাল দখলের ফলে নৌ-পথে ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনে ভোগান্তি, কৃষি জমিতে সেচ সংকটসহ সাধারন মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ক্ষুব্ধ কৃষক ও এলাকাবাসি খালটি দখলমুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী কৃষক, দখলদার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের কূল ঘেষে প্রবাহিত দাসেরহাট-আগৈলঝাড়া খাল। এই খাল দিয়ে দাসেরহাট, গৈলা, নিমতলা, কালুরপাড়সহ আশপাশ বাজারের ব্যবসায়ীরা নৌপথে মালামাল পরিবহনসহ কৃষকরা খালের পানি সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদন করে থাকে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে এই খালের পানি তাদের বোরো চাষের একমাত্র ভরসা। বর্তমানে খালটিতে পানি চলাচল কমে যাওয়ায় সেচ সংকট রয়েছে। খাল দখলের কারনে বোরো চাষীরা চাহিদামত সেচ দিতে পারছেন না। তার মধ্যে সরকারি খাল দখল করে চলেছে স্থাপনা নির্মান। এতে বোরো চাষীদের সেচ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দাসেরহাট-আগৈলঝাড়া খালের নিমতলা নামক স্থানে এক প্রভাবশালী সরকারি খাল দখল করে ৩৫ ফুট লম্বা ও ২৫ ফুট প্রস্থ খালের মাঝখানে স্থাপনা নির্মান করছে ৮/৯ জন শ্রমিক। নির্মানাধীন ঘরের খুটি খাড়া করে পাটাতনের কাজ শেষ করেছেন। একই সঙ্গে ঘরের পশ্চিম পাশের বেড়া কাজ শেষ করে তা স্থাপন করা হচ্ছে। সরকারি খাল দখল করে স্থাপনা নির্মান সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্মান শ্রমিকরা জানান আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের মৃত হাশেম আলী খলিফার ছেলে হ্যাচারীর মালিক প্রভাবশালী হাবিব খলিফার (৬২) নির্দেশ তারা গত তিন দিন ধরে ঘর নির্মান করছেন।
এ সময় এলাকাবাসি জানান, গত বুধবার প্রভাবশালী হাবিব খলিফা সরকারি খাল দখল করে খালের মাঝে স্থাপনা নির্মান শুরু করলে তারা খালে মধ্যে ঘর নির্মান করতে নিষেধ করে। এতে হাবিব খলিফা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হুমকি দেন এবং নির্মান কাজ চালিয়ে যান। স্থানীয় কৃষকরা জানান, খালের পানি দিয়ে খাল পাড়ের দু’পাশের ১০টি বোরো প্রকল্পে সেচ দেয়া হয়। এ খালটিতে স্থাপনা নির্মান করায় খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে এবং বোরো চাষীসহ সাধারন মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দখলদার হাবিব খালের মধ্যে নির্মান কাজ অব্যহত রাখলে বৃহস্পতিবার এলাকাবাসি বিষয়টি আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। খালের সুবিধাভোগীরা খালটি দখলমুক্ত করে খালে স্বাভাবিক পানি চলাচল ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।
আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়ন ভুমি কার্যালয়ের সহকারী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, প্রভাবশালী হাবিব খলিফা সরকারি খাল দখল করে খালের মাঝখানে গত ৩/৪ দিন ধরে অবৈধ স্থাপনা নির্মান করেছেন। খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মান কাজ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেন কিন্তু হাবিব খলিফা তাদের নির্দেশ তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নির্মান কাজ অব্যহতভাবে চালিয়ে যান। অভিযোগের ব্যাপরে দখলদার মো. হাবিব খলিফার কাছে জানতে চাইলে তিনি সরকারি খাল দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই খালের জমি আমি দক্ষিন শিহিপাশা গ্রামের কামাল বেপারীর নিকট থেকে দেড় লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে। সরকারি খাল কারো ক্রয় বিক্রয় করার অধিকার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারি খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়ার পরে লোক পাঠিয়ে নির্মান কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি তা জানা নেই। তবে দখলদার যতই ক্ষমতাধর ব্যক্তি হোক না কেন কাউকে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করতে দেয়া হবে না। খালটি দখলমুক্তসহ দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।