গৌরনদী
উজিরপুরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে যাজকদের বিরোধ, জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় সমঝোতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের বৈরকাঠী গ্রামের খৃষ্ঠান চার্চের যাজকদের সঙ্গে স্থানীয় খৃষ্ঠান সম্প্রদায়ের এক বছর ধরে চলমান বিরোধ নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমান। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈরকাঠী চার্চে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, যাজক ও খৃষ্টভক্ত নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টানা সাড়ে তিন ঘন্টার বৈঠকে উভয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়।
সমজোতা বৈঠক সভাপতি বরিশাল জেলা প্রশাসক এস, এম, অজিয়র রহমান উদ্ধোধনী বক্তব্যে বলেন, ধর্ম মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। যাজকদের নিরাপদে দায়িত্ব পালন ও চার্চে খৃষ্ঠভক্তদের স্বাধীনভাবে ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় রাখই এর উদ্দেশ্যে । তিনি আরো বলেন, আগে কে কি করেছে সে অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে উভয়ে মিলেমিশে কি করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে একত্রে থাকা যায় সেটাই বিবেচ্য বিষয়। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিব উদ্দিন, উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রনিতি বিশ্বাস, উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান, পৌর মেয়র মোঃ গিয়াস উদ্দিন বেপারী, গুঠিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ দেলোয়ার হোসেন, চার্চের প্রধান যাজক জেমস আনন্দ বিশ্বাসসহ যাজকগন ও প্রতিপক্ষ মিল্টন সমাদ্দারসহ খৃষ্ঠান নেতৃবৃন্দ। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিরামহীন বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক বলেন, বিরোধ নিরসনের মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে সমজোতা হয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মানে শান্তি সৌহার্দ রক্ষায় মিলেমিশে চলতে উভয়ে একমত হন।
জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের বৈরকাঠী গ্রামের খৃষ্ট ধর্মের অনুসারি হৃদয় সমাদ্দার ফেলোশিপ সম্প্রদায়ের অনুসারিদের প্রার্থনার জন্য ১৯৪৭ সালের ৮ জুন চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন। চার্চের ২শত ৯৮ শতাংশ জমির উপর নির্মান করেন চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চের বিভিন্ন স্থাপনা। সেই থেকে ৭২ বছর গুঠিয়া ইউনিয়নের খৃষ্ঠান সম্প্রদায়ের অনুসারিরা ওই গীর্জায় প্রার্থনাসহ ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে আসছিল। বর্তমানে চার্চে ১০ জন যাজক (পুরোহিত) রয়েছে। ২০১৭ সালে প্রথমে গীর্জা পরিচালনা কমিটি নিয়ে যাজকদের সঙ্গে স্থানীয় মিল্টন সমাদ্দারের (৩৫) বিরোধ শুরু হয়। গত এক বছরে বিরোধ চরম আকার ধারন করলে গত সেপ্টেম্বরে মাসে যাজকরা মিল্টন অনুসারিদের গীর্জায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। যাজকদের অভিযোগ পথভ্রষ্ট খৃষ্টভক্তরা চার্চের সম্পত্তি দখল নিতে একাধিকবার হামলা চালিয়ে যাজকদের প্রাননাশের চেষ্টা করায় সংকট তৈরী হয়। আর খৃষ্ট সম্প্রদায়ের অভিযোগ যাজকরা তাদের পথভ্রষ্ট আখ্যা দিয়ে চার্চে প্রার্থনায় যেতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সংকট তৈরী হয়েছিল।
বৈঠক শেষে চার্চের প্রধান যাজক জেমস আনন্দ বিশ্বাস বলেন, জেলা প্রশাসক সমঝোতার জন্য যে সিদ্বান্ত নিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তা মেনে নিয়েছি। আগামি দিনের কার্যক্রমের উপর সব নির্ভর করবে সমঝোতা কতটা ফলপ্রসু হবে। জেলা প্রশাসরে সিদ্বান্তকে স্বাগত জানিয়ে মিল্টন সমাদ্দার বলেন, উভযে মিলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকার করেছি রক্ষা করে চার্চে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবো।