গৌরনদী
অদম্য মেধাবী ॥ দিন মজুরের স্বপ্ন পুরন সূচনায়ই নিভে যাবে?
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বাউরগাতি গ্রামের দিন মজুর সুজন সরদার এবারের এস,এস,সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। গরীবের পড়াশোনার প্রয়োজন নেই পরিবারে এ সিদ্বান্তকে উপেক্ষা করে পড়াশোনা চালিয়ে সাফল্যজনক ফলাফল করায় খুবই খুশি সুজনের শিক্ষক ও পরিবার। তারা ভবিষ্যাত পড়াশোনা নিয়ে হতাশাগ্রস্থ।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, শিক্ষক, ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বাউরগাতি গ্রামের দিন মজুর বাবা সোবাহান সরদার (৫৫)ও মা বিউটি বেগম (৪৫)র তিন সন্তানের মধ্যে মেজ সন্তান সুজন সরদার। বাল্যকাল থেকেই পড়াশোনার প্রতি সুজনের অত্যাধিক ঝোক ছিল। তাই পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্বান্তকে উপেক্ষা করে দিনমজুরের কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে যান। দিন মজুরের কাজ ও প্রাইভেট পড়িয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে মায়ের চিকিৎসা ও পড়াশোনা করে মেধাবী সুজন হাওলাদার।
তার স্বপ্ন সে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হবে। জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি পড়াশোনা করে এবারে এস,এস,সি পরীক্ষায় বাউরগাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে স্বপ্ন পুরনের শুভ সূচনা করেছে দিনমজুর সুজন সরদার। কলেজে পড়াশোনা নিয়ে সুজন ও তার পরিবার হতাশাগ্রস্থ কি করে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করবে। তার স্বপ্ন পুরন হবে না, সূচনাতেই নিভে যাবে?
বাউরগাতি গ্রামের স্থানীয় সৈয়দ নকিবুল হক(৪২), নিজাম মিয়া (৬৫) জানান জানান, সোবাহান সরদার গাছকাটার দিন মজুর হিসেবে কাজ করে সামান্য আয় দিয়ে কোন রকম সংসার চালান। জমাজমিহীন দিনমজুর সোবাহানের স্ত্রী অসুস্থ্য হওয়ায় ২০১০ সালে সোবাহান বড় পুত্র তুহিন সরদার, ও মেজ পুত্র সুজন সরদারকে ডেকে বলেন, তোদের পড়াশোনার দরকার নাই। দিন মজুরের কাজে গিয়ে অর্থ উপার্জন কর। বড় ভাই তুহিন ও সুজন বাবার সিনদ্বান্ত মেনে শিশু শ্রমিক হিসেবে দিন মজুরের কাজে যোগদান করেন। কিন্তু বাবার পড়াশোনা বন্ধের সিদ্বান্ত উপেক্ষ করে সুজন কাজ করার সাথে সাথে পড়াশোনা চালিয়ে যান।
মেধাবী সুজন সরদার জানান, ২০১০ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় তার মনোবল আরো যায়। সে বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে দিন মজুরের কাজ করে ফাকে ফাকে পড়াশোনা প্রতি আরো মনোযোগী হন। ২০১৩ সালে জে,এস,সি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ বৃত্তি লাভ করে। তখন পড়াশোনার খরচ বেড়ে যাওয়ায় দিন মজুরের কাজ করার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। সুজন তার দারিদ্রতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, পেট ভইররা দুটো ভাত খাইতে পারি নাই, মোর কোন প্রাইভেট মাষ্টার ছিল না, বই খাতা কিনতে পারি নাই। অন্যের বাড়িতে কাম কইররা এব প্রাইভেট পড়াইয়া বাড়ি ফিরে গভীর রাতে নিজের পড়াশোনা শেষ করে ঘুমাইতে যাইতাম, বেইনন্নাকালা(সকালে) আবার কামে যাইতাম ।
সুজন কলেন, আমি আমার স্কুলের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিন ও আলম স্যারসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারাই আামাকে খাতা কলম নিতে দিয়ে সহযোগীতা করেছেন। পুত্রের সাফল্যে খবরে কেমন লাগছে সুজনের বাবা সোবাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মুই অভাবের লাইগ্যা ভুল করছি, রাগ কইররা বাজানরে দিনমজুরের কামে নিছি। কত কষ্ট কইররা লেহাপড়া করছে। আজ আল্লা মোগো দিকে রহম করছে। তিনি হতাশা ব্যাক্ত করে বলেন, কি দিয়া এ্যাহন কলেজে লেহাপড়া করামু। মা বিউটি বেগম ছেলের সাফল্যজনক ফলাফলে খুবই খুশি। তিনি বলেন, পরীক্ষার মধ্যেও মোরা ঠিকমত খাওয়ার দিতে পারি নাই। মোর আশা কলেজে পইররা ও অনেক বড় মানুষ অইবে কিন্তু হেইয়া মোর পক্ষে সম্ভব হবে না। তিনি পুত্রের পড়াশোর জন্য দশের বৃত্তিবান, সামাজিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। বাউরগাতি মাধ্যমিকবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা বেগম জানান, সুজন শুধুই মেধাবী নয়, সে একজন বিম¤্র. ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতিন ছেলে। ও পড়াশোর সুযোগ পেলে অনেক ভাল করবে। তিনিও সুজনের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য সকলের প্রতি সহযোগীতার আবেদন জানান।