গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবাসিক এলাকায় মুরগীর ফার্ম অপসারনের দাবিতে মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের ছোট ভাই মোঃ অপু তালুকদার ও তার আত্মীয় সিরাজ মিয়ার বিরুদ্ধে পূর্ব খাজুরিয়া গ্রামের ঘনবসতিপূর্ন আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘেষে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন অবৈধ মুরগির ফার্ম নির্মান করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় ফার্ম অপসারনের দাবিতে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে করেছে আড়াইশত শিক্ষার্থী।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের পূর্ব খাজুরিয়া গ্রামের শিশু শিক্ষা নিশ্চিত করনের লক্ষে এলাকাবাসি ২০১৩ সালে দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমী (নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টিতে প্লে গ্রæপ থেকে ৭ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ানো হয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২শত ৬২ জন ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের আশ পাশে আবাসিক এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার বাস করে আসছেন। ফার্ম অপসারনের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাগধা-সাতলা আঞ্চলিক সড়কের পূর্ব খাজুরিয়া এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, প্রধান শিক্ষক নয়ন তালুকদার, ইউপি সদস্য মোঃ ইউনুস মিয়া।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন (৫২) জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ি মুরগির ফামর্ করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। ৪/৫ বছর ধরে বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের ছোট ভাই প্রভাবশালী মোঃ অপু তালুকদার (৩২)ও তাদের এক অত্মীয় মোঃ সিরাজ মিয়া (৪০) পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে পূর্ব খাজুরিয়া গ্রামের শতাধিক পরিবারের আবাসিক এলাকার মধ্যে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ৪টি পোল্ট্রি মুরগির ফার্ম তৈরী করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মুরগীর চাষ করে আসছে। বর্তমানে দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমী সংলগ্ন বিদ্যালয় ঘর থেকে ১৩/১৫ ফুট দুরত্বে ৯০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রস্থ নতুন একটি ফার্ম নির্মান করেছে। আবাসিক এলাকায় মুরগীর ফার্মের ফলে এলাকার পরিবেশ দূষণ হয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবানু ছড়িয়ে পরছে। এমন কি বাতাস বাহিত জীবানু ছড়িয়ে পরে স্বাসকষ্টসহ রোগ ব্যধিতে দিন দিন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। দূর্গন্ধে বিদ্যালয়ে আড়াইশত শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা এলাকাবাসি বিষয়টি স্থানয়ি চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার পাইনি। বরং মালিক অপু তালুকদার আমাদেরকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে। গ্রামের মমতাজ বেগম, নার্গিস সুলতানাসহ কয়েকজন গৃহবধূ জানান, মুরগির ফার্মের দূর্গন্ধে বাড়িতে বসবাস করতে পারছি না। বাড়ি করে এখন বাড়ি ফেলেও কোথায় যেতে পারছি না। জরুরী ভিত্তিতে মুরগির ফার্ম অপসারনের জন্য আমরা প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নয়ন তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, প্রভাব খাটিয়ে আবাসিক এলাকায় ফার্ম তৈরী করায় ছাত্র ছাত্রীরা প্রায় অসুস্থ হয়ে পরে। স্বাস্থ্য ঝুকিঁতে রয়েছে বিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই শত ছাত্র ছাত্রী।
বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ইউনুস মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুরগীর ফার্মের বর্জের দূর্গন্ধ বাতাস ও পানি দুষণে গ্রামে রোগ ছড়াচ্ছে। এলাকাবাসি স্বার্থে ফার্মের মালিককে ফার্ম সরিয়ে নিতে অনুরোধ করলে তারা দম্ভেক্তি করে জানান নিজেদর জমিতে ফার্ম করছি কারো কথায় কিছু আসে যায় না। ফার্মের মালিক মোঃ অপু তালুকদার অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, জেনে শুনেই ফার্ম করেছি এতে মানুষের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফার্ম করতে ছাড়পত্র লাগে না।
এ প্রসঙ্গে বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি অবহিত করেছে। ফার্মে পরিবেশ দুষন হচ্ছে। অপসারনে বিষয়ে মালিকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগৈলঝাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতিম আজরিনের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় ফার্ম দেয়ার বিধান নেই। মুরগীর ফার্মের কারণে পরিবেশ দুষণের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ আবদুল হালিম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। আবাসিক এলাকা ও বিদ্যালয়ের পাশে মুরগির ফার্ম করার সুযোগ নেই। এলাকাবাসি অথবা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে আমাদের অবহিত করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।