প্রধান সংবাদ
আগৈলঝাড়ায় প্রাচীণ ঐতিহ্যবাহী ২৪০তম মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লির সংস্কৃতির ধারক হিসেবে খ্যাত দুইশত চল্লিশ তম ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা ২০২০ বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলার আয়োজন করা হয়। বরিশালের আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, উজিরপুর, বানরীপাড়া, বাকেরগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, মাদারীপুরের ডাসার কালকিনিসহ পাশ্ববর্তি জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজার-হাজার নারী-পুরুষ মারবেল মেলা উপলক্ষে মারবেল খেলায় অংশ নেন।
এ মেলা বাস্তবায়নের জন্য ৩৫ সদস্য একটি মেলা উদ্যাপন কমিটি গঠন করা হয়। মারবেল মেলা আয়োজন কমিটি ২০২০র সভাপতি দ্বিগবিজয় বিশ্বাস জানান, ১৭৭৯ সালে রামানন্দের আঁক গ্রামে ৬ বছল বয়সী আউলিয়া মা সোনাই চাঁদের বিয়ে হয় একই গ্রামের এক কিশোর ঠাকুরের সঙ্গে। বিয়ের এক বছর পরে স্বামী কিশোর ঠাকুর মারা গেলে নি:সন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন আউলিয়া মা সোনাই চাঁদ। সে একটি নিমগাছের গোড়ায় শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা আরম্ভ করে আউলিয়া মা সোনাই চাঁদ। ক্রমশ: তাঁর অলৌকিত্ব ছড়িয়ে পরলে ওই স্থানে বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ইং সাল থেকে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্নের অয়োজনের মাধ্যমে মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাঁর মৃত্যুর পরে ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।
প্রতিবছর এই দিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে সোয়ামণ চালের গুড়ার সাথে সোয়ামণ আঁখের গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় কলাসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরী করে মেলায় আগত দর্শণার্থীদের প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হয়। হিন্দু স¤প্রদায়ের অন্যতম আকষর্ন পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ২৪০ বছর ধরে এ গ্রামে মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
মারবেল মেলার মারবেল খেলা সম্পর্কে স্থানীয় প্রবীন পরিমল বাড়ৈ (৬৫) হরেন বিশ্বাস (৮২) জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল যা আজও অব্যাহত রয়েছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা সেই প্রাচীণ ঐতিহ্য ধরে রেখিছি। এদিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে মহোৎসবের আমেজ থাকে। গ্রামের লোকজন তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মারবেল মেলায় আমন্ত্রণ জানান এবং মেলা উপলক্ষে স্বজনরা একত্রিত হন।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রামানন্দের আঁক গ্রামের প্রায় ৭ কি.মি এলাকা জুড়ে মারবেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ সর্বত্রই মারবেল খেলার আসর বসেছে। জমিতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা।
উজিরপুরের হারতার পরিমল মÐল ও কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে মেলায় আগত বৈষ্ণব মন্ডল (৪০) জানান, এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলার প্রতি বছর স্বজনদের নিয়ে যোগদান করে সকলে মিলে আনন্দ উপভোগ করেন। রাজিহার গ্রামের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র আরিফুল হক ও ১০ম শ্রেণীর স্বপন বৈরাগী জানায়, সারা বছর টিফিনের টাকা থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখি এ মেলায় মারবেল খেলার জন্য। আমরা সকলেই মিলে আনন্দ ও উল্লাস করি খুব ভাল লাগে। এ মেলার প্রধান আকর্ষন কিশোর, কিশোরী, যুবক-যুবতীরা মেলার মারবেল খেলায় অংশ নেওয়া। আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস, এম, আফজাল হোসেন জানান, শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় রেখে মেলাকে সাফল্যজনকভাবে শেষ করতে আইন শৃংখলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ সব ধরনের পদক্ষপ নেওয়া হয়েছে।