বরিশাল
উজিরপুরে টাকা দিতে না পারায় নতুন বই পাননি শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বুধবার ছিল দেশব্যাপি বই উৎসবের দিন। বই না পাওয়ায় ওই দিন বরিশালের উজিরপুরের জয়শ্রী-মুন্ডপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭ শতাধিক ছাত্র ছাত্রী উৎসবে সামিল হতে পারেনি। স্কুল স্কুল কর্তৃপক্ষের সেশন ফি নামে ধার্য্যকৃত ৫শত টাকা দিতে না পারায় বই না নিয়ে বাড়ি ফিরলেন শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানান, উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী-মুন্ডপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিনে পরীক্ষা কেন্দ্রে নোটিশ দেয়া হয় যে, ১ জানুয়ারি নতুন বই নিতে প্রত্যেককে সেশন ফি বাবত ৫শত টাকা নিয়ে আসতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য জানান, নোটিশ পাওয়ার পর ১ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক ছাত্র ছাত্রী ৫শত টাকা পরিশোধ করে নতুন বই নেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের ঘোষনা মতে ৫শত টাকা দিতে না পারায় প্রায় ৭শত ছাত্র ছাত্রী নতুন বই না নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান। বই প্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা শ্রেনি শিক্ষকের কাছে ৫শত টাকা জমা দেওয়ার পরে টাকা বুঝে পেয়ে তাদেরকে শ্রেনি শিক্ষক শ্লিপ দেন পরবর্তিতে সেই শ্লিপ জমা দিয়ে বই নিতে হয়েছে। যারা ৫শত টাকা দেননি তাদের ভাগ্যে নতুন বই জুটেনি।
বই না পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বাবা টাকা দিতে না পারায় মোগো বই দেয়া হয়নি। সবাই নতুন বই নিয়া আনন্দে বাড়ি গেছে কিন্তু মোরা টাকা দিতে না পারায় নতুন বই পাইনি। কমপক্ষে ১০ জন অভিভাবক অভিযোগ করেন, গত বছর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেকেন্দার আলী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শিকারপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম মাঝি বই দেয়ার সময় প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে তিনশত টাকা করে তিন লাখ টাকা আদায় করেন। এ বছর একইভাবে প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে ৫শত টাকা ধার্য্য করে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টাকা দিয়ে তিনশত ছাত্র ছাত্র বই নিলেও প্রায় ৭শত ছাত্র ছাত্রী টাকা দিতে না পারায় তাদের নতুন বই দেয়া হয়নি। সারা দেশে বই উৎসব হলেও এ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা বছরের প্রথম দিনে বই না নিয়ে হতাশা হয়ে বাড়ি ফিরছেন। গরীব অসহায় ছাত্র ছাত্রীদের ৫শত টাকা যেগার করা দুরুহ ব্যাপার, তাহলে তারা কি নতুন পাবে না? প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি স্বেচ্ছাচারিতা করে সরকারের নতুন বই কর্মসূচীকে ব্যার্থ করার পায়তারা চালাচ্ছে। ৬ষ্ঠ শ্রেনির ছাত্রীর বাবা মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমার মেয়ে স্কুলে গিয়ে বই ছাড়া ফিরে আসে এবং কান্নাকাটি করায় পরবর্তিতে আমি ৫শত টাকা যোগার করে স্কুলে গিয়ে বই এনে দেই। একই অভিযোগ করেন ৭ম শ্রেনির বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি বলেন, বুধবার টাকা দিতে না পারায় ছেলে বই পায়নি। পরবর্তিতে ৫শত টাকা দিয়ে বই আনা হয়। অভিভাবক আইসক্রীম বিক্রেতা আতাহার আলী অভিযোগ করে বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার মোর মেয়ের বই আনার জন্য মোর স্ত্রী তিনশত টাকা নিয়ে হেড স্যারের কাছে গিয়ে মেয়ের বই চেয়ে বহু অনুনয় বিনয় করে কিন্তু মেয়েকে বই দেয়া হয়নি। স্যারে জানায় বই নিতে হলে ৫শত টাকা লাগবে। এ ধরনের ঘটনার বিচার দাবি করেন অভিভাবকরা।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোঃ সেকেন্দার আলী বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সদস্যদের নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছি । তবে ৫শত টাকার কম যারা দিয়েছে তাদেরও বইদেয়া হয়েছে। এ টাকা সেশন চার্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উজিরপুরের শিকারপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম মাঝির কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ৫শত টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, বছরের শুরুতে সেশন চার্জ আদায়ের বিধান থাকায় সেশন চার্জ হিসেবে ৫ শত টাকা আদায় করা হয়েছে। আদায়কৃত টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হয়। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল হক বলেন, দেশব্যাপি শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনে বই পৌছে দেয়া সরকারের বই উৎসব কর্মসূচী। এ কর্মসূচী ব্যাহত করে বই দেয়ার সময় কোন টাকা বা সেশন চার্জ নেয়ার বিধান নেই। আমি বিষয়টি শুনেছি কোন ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।