গৌরনদী
মেডিকেল সনদ দিয়ে এক বছর কর্মস্থলে অনুপুস্থিত, পাঠদান ব্যহত
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কুতুবপুর গোলাম হাফিজ মৃধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক যোগদান করার পর মেডিকেল সনদ দিয়ে গত এক বছর যাবত কর্মস্থলে অনুপুস্থিত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় গ্রামের শিশুদের পড়াশোনার প্রতি এক ধরনের অনীহা দেখা দেয়। স্থানীয় কতিপয় অভিভাবক এলাকায় একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন জানালে নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা নিজে জমিদানসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিমালার শর্ত পুরন করে গ্রামে তার নিজের নামে ২০১৭ সালে গোলাম হাফিজ মৃধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বছর প্রথম শ্রেনীতে অর্ধ শতাধিক ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়। পর্যায় ক্রমে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে শতাধিত শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার দাস জানান, শিক্ষার্থীদের পাঠ দানের জন্য বিদ্যালয়ে তিনিসহ তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৮ সালে সহকারী শিক্ষক দীপংকর কর্মকার ডেপুটিশনে নলচিড়া ইদ্রিস মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। দুইজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান ব্যহত হওয়ায় প্রতিষ্ঠাতা গোলাম হাফিজ মৃধা শিক্ষক চেয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করলে ২০১৮ সালে অক্টোবর মাসে সুমা খানম নামে এক সহকারী শিক্ষককে বিদ্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেন। সুমা খানম যোগদান করে নভেম্বর, ডিসেম্বর (২০১৮) মাস কর্মস্থলে থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে মেডিকেল সনদ দিয়ে গত এক বছর যাবত কর্মস্থলে অনুপুস্থিত রয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পিংলাকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষ জানান, ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে সহকারী শিক্ষক দীপংকর ডেপুটিশনে, সুমা খানম অনুপুস্থিত ও প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার দাস অধিকাংশ সময় প্রশাসনিক কাজে ব্যস্থ থাকেন ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সহকারী শিক্ষক সুমা খানম যোগদানের পর পরই মেডিকেলে সনদ দিয়ে এক বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। একজন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কর্মস্থলে অনুপুস্থিত থেকে তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মারাত্মক ক্ষতি করছেন। বিদ্যালযের ফলাফলে এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে । বিদ্যালয়ের অভিভাবক মোঃ শওকত খান (৪৫) ও মোঃ এনামুল হক (৩৫) বলেন, শিক্ষক সংকটে আমাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা মারাত্মভাবে ব্যহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেয়ার পরেও সেই শিক্ষক মেডিকেল সনদ দিয়ে কর্মস্থলে অনুপুস্থিত থেকে ঢাকায় চাকুরী করবেন তা হতে পারে না। তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী বৃষ্টি আক্তার, মেঘলা আক্তরসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলে স্যার না থাকায় আমাগো লেখাপড়ার ক্ষতি হয়। নতুন বছর শুরুর আগেই আমরা স্কুলে স্যার চাই। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা অভিযোগ করে বলেন, একজন শিক্ষক মেডিকেল সনদ দিয়ে বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপুস্থিত থেকে অন্যত্র কাজ করবেন আর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যহত হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি অবহিত করেছি এবং জরুরুী ভিত্তিতে শিক্ষক সংকট সমাধানের আবেদন করেছি।
অভিযোগের ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক সুমা খানমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিপ করেননি। পরবর্তিতে সুমা খানমের একাধিক স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ফয়সল জামিল বলেন, বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে অবহিত করার পরে শিক্ষক সুমা খানমের সঙ্গে অসংখ্যবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কোন ফোন গ্রহন করেননি। পরবর্তিতে চিঠি দেয়া হলেও তার কাছ থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। আমরা বছরের শুরুতেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের সমাধান করতে পারবো বলে আশা করি।