প্রধান সংবাদ
ঘূর্নিঝড় বুলবুলের তান্ডব \ গৌরনদীর ৩ হাজার পান চাষীর ৫ কোটি টাকার ক্ষতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/
ঘূর্নিঝড় বুলবুলের তান্ডবে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পান চাষীদের ভাগ্য । গৌরনদী উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে সরকারী হিসাব অনুযায়ী ৩ হাজার পানচাষী পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বুলবুলের তান্ডবে পান চাষীদের ৫ কোটি টাকার বেশী ক্ষতি হয়েছে বলে সংশি¬ষ্টরা জানান। বেঁেচ থাকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পান চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস, পান চাষী ও ক্ষগ্রিস্থদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪ শত ২০ হেক্টর জমির পান বরজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ৭টি ইউনিয়নে ২ শত ৬০ হেক্টর জমির পান বরজ সম্পূর্ণভাবে ও ১শত ৬০ হেক্টর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমান সব চেয়ে বেশী। বুলবুলে চাদশী ইউনিয়নে ১ শত ৮০ হেক্টর ও পান বরজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উপজেলায় ৩ হাজার পান চাষী পরিবারের প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা জানান। তবে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ি পান বরজের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সাড়ে তিন কোটি টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের বোরাদী গরঙ্গল, গরঙ্গল, কান্ডপাশা, চাদশী ইউনিয়নের চাদশী, উত্তর চাদশী, দক্ষিন চাদশী, পশ্চিম শাওড়া, নরসিংহলপচ্রি, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মাগ্ররা, কমলাপুর খাঞ্জাপুর, মেদাকুল সমরসিংহ, বার্থী ইউনিয়নের বাউরগাতি বেজগাতি বাঘমারা, বার্থী, কটকস্থল, গোরক্ষডোবা এলাকায় গত রোববার ঘূর্নিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্থ পান চাষীরা অনেকেই তাদের পান বরজ হারিয়ে দিশেহারা ও পাগল প্রায়। উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের বোরাদি গরঙ্গল গ্রামের বারেক ফকির (৫৫) বলেন, মুই নিঃশ্ব হয়ে গেছি, মোর বাঁচার কিছুই থাকল না। এ্যাহন কি দিয়া পোলাপান লইয়া বাঁচমু। তিনি জানান, ধার দেনা ও ঋৃন নিয়ে ৩০ শতাংশ জমিতে পান বরজ করেন। পানবরজের ওই ফসল দিয়েই সংসার চলত বুলবুলে সব শেষ হয়ে গেছে। একই কথা জানালেন ওই গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৪৫)সহ কয়েকজন।
চাঁদশী গ্রামের সুকণ্ঠ সরকার (৫০) বলেন, সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যায়ে ৩৬ শতাংশ জমিতে পানবরজ করে ছেলে মেয়ে নিয়ে খেয়ে দেয়ে সুখেই ছিলেন কিন্তু ঘূর্নিঝড় বুলবুল পথের ফকির বানিয়ে দিল। ঝড়ে ফসলসহ তার প্রায় ৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের জীবন হালদার, কমল দাস, উত্তর কর, স্বপন সরদার, মোকলেস সরদারসহ ২০ পান চাষী একমাত্র বাঁচার অবলম্বন পান হারিয়ে হতাশার কথা জানান। কমলাপুর গ্রামের পানচাষী আব্দুল কাদের (৫০) ধানডোবা গ্রামের সরোয়ার হোসেন (৪০) গোরক্ষডোবা গ্রামের জামাল বেপারী (৪৬) জানান, ঘূর্নিঝড় বুলবুলে গৌরনদী উপজেলার প্রায় ৪/৫ হাজার পানচাষী নিঃস্ব ও সর্বসান্ত হয়েছে। খাঞ্জাপুর গ্রামের পান চাষী আবু তালেব (৬০) বলেন, সব শেষ হয়ে গেছে। ঋণ নিয়ে ধার দেনা করে ১০ শতাংশ জমিতে পান বরজ করেছিলাম সব লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। সামনের শীত মৌসুমে পানে খুবই ভাল দাম পাওয়া যেত। আশা ছিল এবারে পান বিক্রি করে কিছু পানবরজ বাড়াবো কিন্তু সর্বশান্ত হয়ে গেলাম । একই কথা জানালেন বাউরগাতি গ্রামের পানচাষী রবিউল হক (৫২)। তিনি বলেন, এবারে জম্মের মত (খুব বেশী) ফলন অইছে, মুই খুশিতে আটখান (আত্মহারা) অইয়া গেছিলাম তয় সুখ শইল না। ঝড় সব শ্যাষ করইরা দিয়া গেছে। কি দিয়া মুই পোলাপান লইয়া বাঁইচ্যা থাকমু। এ কান্না শুধু রবিউলের নয়, এ কান্না শত শত পানচাষীর।
ক্ষতিগ্রস্থ পানচাষীরা বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘূর্নি ঝড় বুলবুলে গৌরনদী উপজেলায় পান চাষীদের অপুরনীয ক্ষতি হয়েছে এতে প্রায় তিন হাজার চাষীর প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পূর্নবাসনের সুপারিশসহ বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষেকে অবহিত করা হয়েছে।