গৌরনদী
৭২ ঘন্টা বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটবিহীন ঘুর্নিঝড় বুলবুলে তিন উপজেলা লন্ডভন্ড, নিহত-১, শতাধিক
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/
ঘূর্নিঝড় বুলবুলের আঘাতে বরিশালের গৌরনদী,আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। তিন উপজেলায় শনিবার রাত তিনটা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রায় তিন লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। শনিবার রাত থেকে ঝড় ও দমকা হাওয়া শুরু হলেও গত রোববার দুপুর সোয়া ১টায় ব্যপকভাবে আঘাত হানে। এতে তিন উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ গৃহহীন পড়েছে। লক্ষাধিক গাছপালা উপরে পরেছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে গাছ যানবাহন চলাচল ৪ঘন্টা বন্ধ থাকে। তিন উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তিন উপজেলায় ৭২ ঘন্টা মোবাইল নেটওযার্ক, ইন্টারনেট ও বিদ্রুৎ বিহীন তিন উপজেলা। ঘূর্নিঝড়ে গাছচাপা পরে উজিরপুরে একজন নিহত ও তিন উপজেলায় শতাধিত আহত হয়েছে। গত তিন দিনে গনমাধ্যম কর্মীরা কোন সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, প্রশাসন কর্মর্কতা, জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাত সোযা ১২টা থেকে এ তিন উপজেলায় ঝড় শুরু হয়। তাতে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও রাত আড়াইটা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। গত রোববার সোয়া একটায় ঘূর্নিঝড়ের ব্যাপক তান্ডব শুরু হয়। ২০ মিনিট স্থায়ী ঝড়ে গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১০ হাজার, আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৮ হাজার ও উজিরপুর উপজেলায় ৭ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন নিশ্চিত করেছেন। তবে পুনাঙ্গ তালিকায় এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
রোববার দুপুরে ঝড়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর বার্থী, ইল্লা, কটকস্থল, বিজয়পুর, আশোকাঠী ও মাহিলাড়াসহ বিণিœ স্থানে গাছ পরে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস ষ্ঠেশন ইনচার্জ মোঃ কাঞ্চন আলী মৃধা জানান, ফায়ার কর্মী ও স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে রোববার দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গাছ অপসারন করে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল চালু করা হয়। এ ছাড়া বরিশাল গোপালগঞ্জ সড়কে গাছ পওে দুই ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। বরিশাল পল্লিবিদুৎ সমিতির গৌরনদী জোনাল ম্যানেজার প্রকৌশলী জাহিদা খানম জানান, তিন উপজেলায় বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৩৩ কেভি ১১ কেভি ভোল্টের অসংখ্য খুটি ভেঙ্গে গেছে। এতে প্রায় তিন লাখ গ্রহন বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পরেছে। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ লাইন চালু হবে তা এখনই বলঅ যাচ্ছে না। তবে উপজেলা সদওে আজ মঙ্গলবার বিদ্যুৎ সংযোগ চাল ুকরার আপ্রান চেষ্টা রয়েচে। সম্পূর্ন বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে এক থেকে দেড় মাস লাগবে। বিদ্যুৎ না থাকায় রোববার থেকে মুঠেেিফান নেট ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে গেছে।
গতকাল সোমবার গৌরনদীর নলচিড়া, মাহিলাড়া, চাঁদশী, বার্থী আগৈলঝাড়ার রাজিহার রতœপুর,বাকাল উজিরপুরের শোলক, শিকারপুর, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে ঘূর্নিঝড় বুলবুলের তাÐব। সর্বত্রই একই দৃশ্য সব যেন লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। তিন উপজেলায় গাছ চাপা পরে প্রায় শতাধিক আহত হযেছে। গৌরনদীর বানিয়াশুরী গ্রামের মরিয়ম বেগম (৭০) বলেন, সিডর রাতে হয়েছে দেহি নাই। এমনি ঝড় জীবনে দেহি নাই। তিনি আরো বলেন, বাহিরে তাকাতেই দেহি যেন এক দানব ধ্বংশ যজ্ঞে নেমেছে। মুহুর্তেই নিজের ঘরে বিশাল এক রেন্ড্রি গাছ উপরে পরে। এ যেন এক কেয়ামত। ঘরের নাতিপুতি নিয়ে বাইরে ঝাপিয়ে পরে প্রান রক্ষা পাই। আগৈলঝাড়ার রাজিহার গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৬০)বলেন, ঝড়ের তান্ডবে গ্রামটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। উজিরপুর শোলক গ্রামের মমতাজ বেগম (৬৫) বলেন, এমনি ঝড় আমার জীবনে দেহি নাই। গৌরনদীর কান্ডপাশা গ্রামের আক্কেল আলী, দুলুফা বেগম আমেনা আকতার জানান, ঝড়ে তাদেও বসত ঘর সম্পূর্নভাবে উরে গেছে। উজিরপুর উপজেলার দক্ষিন মাদার্শী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ধীরেন মজুমদারের বসত ঘরে গাছ চাপা পরে সম্পূর্নভাবে ভেঙ্গে গেছে। এ সময় গাছ চাপায় ধীরেন মজুমদারের স্ত্রী আশা লতা মজুমদার (৬০) মারা গেছে। বরিশাল জেলা প্রশাসক এস, এম, অজিয়র রহমান নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে শান্তনা এবং লাশ সৎকারের জন্য ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক জানান, ঘূর্নি গ্াছ চাপায় প্রায় ৫০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে ২৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও জরুরী বিভাগের চিকিৎসক দেওয়ান আবদুস সালঅম জানান, ঘূর্নিঝড়ে গাছ চাপায় প্রয়া ২৫ জন আহত হয়। আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার বক্তিয়ার আল মামুন জানান, এ উপজেলায় ২৫ জন আহত হয়েছে । গুরুতর আহত নিলুফা বেগম(২০), কার্তিক মিস্ত্রি (৪০), মনির মোল্লা (৪০) ও জান্নাতকে (৮) বরিশালে প্রেরন করা হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান, ঘূর্নিঝড়ে গৌরনদী উপজেলায় ১০ মানুষ বসত ঘর হারিয়েছে। জরুরী ত্রান হিসেবে ২০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ এক লাক টাকা পাওয়া গেচে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন কাজ অব্যহত রয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস জানান, আগৈলঝাড়া উপিজেলা টি ইউনিয়নে ২ হাজার সম্পূর্ন ও আংশিকসহ ৮হাজার মানুষ বসত ঘর হারিয়েছে। সরকারি জরুরী ত্রান হিসেবে ২০ মেট্রিকঁন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। গাছপালা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাছুমা আক্তার জানান, ঘূর্নিঝড় বুলবুলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ন ২ হাজার ও আংশিকসহ প্রায় ৭ হাজার মানুষ বসত ঘর হারিয়েছে বলে তাৎক্ষনিকভাবে জানা গেছে। তবে চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা তালিকা তৈরী কাজ অব্যহত চলছে এর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। জরুরী ত্রান হিসেবে ১ লাখ টাকা ও ২০ মেট্রিকঁন চাল পাওয়া গেছে।