গৌরনদী
গৌরনদীতে ক্ষতিপুরন নিয়েও অধিগ্রহনকৃত জমি জবরদখল করায় লিংক রোড নির্মান হচ্ছে না, এলাকাবাসির ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অধীনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর সাউদেরখাল এলাকায় সেতু নির্মান প্রকল্প গ্রহন করেন (প্রকল্প নং-ডবিøউবিবিআইপি-৪)। প্রকল্প বাস্তবায়নে সেতুর গোড়ায় পূর্ব পাশে ১০টি পরিবারকে ১ কোটি ১৮ লাখ পরিশোধ করে জমি অধিগ্রহন করা হয়। প্রকল্প কাজ প্রায় শেষ করা হয়। প্রভাবশালী জমির মালিকরা অধিগ্রহনকৃত জমির দখল না ছাড়ায় সাউদেরখাল সেতুর গোড়া থেকে পূর্ব দিকে লিংক রোড করতে পারছে না ঠিকাদার। অতি পুরাতন লিংক রোড নির্মান করতে না পারায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভোগান্তি পরেছে এলাকার হাজার মানুষ। অধিগ্রহন করা জমি দখলমুক্ত করে লিংক রোড নির্মানের দাবি জানিয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক ও প্রকল্প ব্যবস্থাপকের কাছে লিখিত আবেদন করেছে এলাকাবাসি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ঢাকা-বরিশাল সহাসড়কের গৌরনদীর সাউদেরখাল এলাকায় পুরানো সেতুটির পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ডাবিøউ, বি.বি.আই পি প্রকল্পের অধীন আরসিসি কংক্রিট সেতু নির্মান প্রকল্প গ্রহন করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মেসার্স ডিয়েনকো লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মূল সেতু নির্মানের কাজ শেষ করে সেতুর গোড়ায় দুই পাশের সড়ক নির্মান কাজ শেষ করেছেন। বর্তমানে ফিনিসিং কাজ চলছে। বরিশাল ভূমি অধিগ্রহন শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অধীনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর সাউদেরখাল এলাকায় সেতু নির্মান প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেতুর দক্ষিন মাথায় পূর্ব পাশে সাউদেরখাল গ্রামের মৃত নেছার মাঝির ছেলে আদু মাঝি, আলী আহম্মেদ মাঝির ছেলে হালিম মাঝি, দেলোয়ার মাঝি, আদু মাঝির ছেলে টুটুল মাঝিসহ ১০ জনের বসতঘর, স্থাপনাসহ ২৪ শতাংশ জমি অধিগ্রহন করা হয়। অনেক আগেই তাদের ক্ষতিপুরনের ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
প্রকল্প তদারকি কাজে নিয়োজিত প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ জাকির হোসেন জানান, সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বেই সেতুর দক্ষিন মাথার পূর্ব পাশে বসতসহ প্রকল্প কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহন করা হয়। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সর্বোচ্চ কম সময়ের মধ্যে বরিশাল জেলা প্রশাসকের এলএ শাখার মাধ্যমে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সেতুর গোড়া থেকে পূর্ব দিকে পুরাতন একটি সড়ক ছিল কিন্তু নতুন নির্মিত সেতুটি নির্মানের পরে সেতুর গোড়া উচু হওয়ায সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে ওই এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। সেতুর গোড়ায় অধিগ্রহন করা জমি দখলমুক্ত না হওয়ায় জায়গার অভাবে লিংক রোড স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ক্ষতিপুরন দিয়ে অধিগ্রহন করা সরকারি জমি কিছু কিছু অংশের দখল ছাড়লেও অধিকাংশ দখল ছাড়েনি জমির মালিকরা। বরিশাল জেলা প্রশাসক অধিগ্রহনকৃত জমি পিলার করে বুঝিয়ে দিলেও তাতে এখনো বাড়ি ঘর স্থাপনা রয়েছে। জমির মালিকরা স্থাপনা পুরোপুরি সরায়নি। এটি একটি জনকল্যানমূলক প্রকল্প লিংক রোড করতে আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু সেটি করতে স্থানীয়দের সহযোগীতা প্রয়োজন। স্থানীয়রা সহায়তা করলে এখনো লিংক রোড করা সম্ভব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়রে গৌরনদীর সাউদেরখাল এলাকায় সেতু নির্মান ও দুই পাশের সড়ক নির্মান কাজ শেষ করে চলাচলের জন্য মহাসড়ক খুলে দেয়া হয়েছে। ঠিকাদারের লোকজন শেষ মুহুর্তের ফিনিসিং এর কাজ করছে। লিংক রোড করার দাবিতে সেতুর গোড়ায় শত শত বিক্ষুব্ধ লোকজন জড়ো হয়েছে। সেতুর দক্ষিন মাথায় গিয়ে দেখা যায় নতুন সেতুটি নির্মান করায় সাউদেরখাল সেতুর গোড়া থেকে পূর্ব দিকের ফকির বাড়ি পর্যন্ত সড়কটি সেতু থেকে প্রায় ২৫ ফুট নিচে পরেছে। ফলে চিরদিনের জন্য স্থায়ীভাবে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঠিকাদার লিংক রোড করতে না পারায় সাধারন মানুষের পায়ে হেটে চলাচলের জন্য বøক বসিয়ে সিঁড়ি করে দিয়েছে। এ সময় স্থানীয় ইয়াসিন ফকির (৩৮), কামাল হোসেন (৪৭)সহ বিক্ষুব্ধরা জানান, ১৯৯১ সালে বার্থী ইউনিয়ন পরিষদ সাউদেরখাল সেতুর গোড়া থেকে ফকির বাড়ি পর্যন্ত সড়ক নির্মান করেন। গত অর্থ বছরে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান প্যাদা সড়কটিতে সংস্কার কাজ করেন। এ সড়ক দিয়ে কটকস্থল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বার্থী তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বার্থী করেঝ, গৌরনদী কলেজের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন মানুষ রিকসা, ভ্যান, অটো রিকসায় যাতায়াত করে। ৩/৪ জন লোকের খামখেয়ালীপনার কারনে লিংক নির্মান করতে পারছে না ঠিকাদার। ফলে কটকস্থ, সাউদেরখালসহ তিনটি গ্রামের হাজার মানুষের চলাচলের সড়কটি চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া গ্রামের কোন মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পরলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টুটুল মাঝি, আদু মাঝি ও হালিম মাঝি জমি অধিগ্রহন বাবত প্রতি জনে ১৫ থেকে লাখ টাকা করে ক্ষতিপুরন পান কিন্তু তার পরেও জমি জবরদখল করে বহাল তবিয়তে রয়েছে। ফলে ঠিকাদার লিংক রোড নির্মান করতে পারছে না। আনোয়ারা বেগম (৭০), রিনা বেগম (৪৫) মরিয়ম বেগম (৫৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২/৩ লোক কি সরকারে চেয়ে বেশী শক্তিশালি? যে ক্ষতিপুরন নিয়েও সরকারি জায়গা ছাড়ছে না। তারা অধিগ্রহনকৃত জমি দখলমুক্ত করে লিংক রোড নির্মানের জন্য জেলা প্রশানকসহ সড়ক যোগাযোগমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
অধিগ্রহন করা জমি জবরদখলের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আদু মাঝি ও তার ছেলে টুটুল মাঝি, ক্ষতিপুরন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সেতুর কাজে প্রয়োজনীয় জমি ছেড়ে দিয়েছি। অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। অভিযোগ সম্পর্কে হালিম মাঝির কাছে জানতে চাইলে তিনি একাধিকবার ব্যস্থ আছি বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডিয়েনকো লিমিটেডের প্রকল্প তদারকি কাজে নিয়োজিত প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, অধিগ্রহনকৃত জমি দখলমুক্ত হলে লিংক রোড নির্মান করে দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, এ রকম কোন বিষয়ে সমস্যা থাকলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক আমাকে জানাবে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।