বরিশাল
হত্যার রহস্য উদঘাটন \ উজিরপুরে মাদককের প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্কুল ছাত্র খুন হন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র নয়ন হাওলাদারকে (১৫) গত ২৭ এপ্রিল ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে কতিপয় স্থানীয় কিশোর। হত্যার ৫ মাস পর স্কুল ছাত্র নয়ন হত্যার রহস্য উদঘাটন করে বরিশাল পুলিশ ইনভেস্টিকেশন ব্যাুরো (পিবিআই) তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক মোঃ মাহফুজুর রহমান। মাদকের প্রতিবাদ করায় স্কুল ছাত্রকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে বস্তা লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
এজাহার, পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা নদীর উজিরপুর বাবুগঞ্জ উপজেলার সিমান্তবর্তি রমজানকাঠী এলাকা থেকে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় উজিরপুর উপজেলার বামরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র নয়ন হাওলাদারের ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুস সোবাহান হাওলাদার বাদি হয়ে ২৭ এপ্রিল আশিক হাওলাদারের (১৬) নাম উল্লেকসহ অজ্ঞানামা ৪/৫ জনকে আসামি করে বাবুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। হত্যার সাড়ে ৪ মাস অতিবাহিত হলেও বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যার কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এ নিয়ে স্কুল ছাত্র নয়নের সহকর্মী, এলাকাবাসি গত ৫ মাস যাবত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, মহাসড়ক অবরোধসহ আন্দোলন করে অসছিল। অবশেষে বাদির আবেদনের পেক্ষিতে আদালত গত ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্তের জন্য বরিশাল পুলিশ ইনভেস্টিকেশন ব্যাুরোকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল পুলিশ ইনভেস্টিকেশন ব্যাুরোর (পিবিআই) পরিদর্শক মোঃ মাহফুজুর রহমান জানান, গত সেপেটম্বর মাসের মামলাটি তদন্তের জন্য তাকে দায়িত্ব প্রদান করে আদালত। দায়িত্ব পাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় গত শুক্রবার রাতে উজিরপুরের ভরসাকাঠী গ্রামের আমিনুল ইসলাকে (১৬) গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্কুল ছাত্র নয়ন হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়। হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত আমিনুল ইসলাম হত্যাকান্ডের বর্ননা দেন। আমিন পিবিআই জানান, সে ও উজিরপুরের ভরসাকাঠী গ্রামের ওসমান হাওলাদারের পুত্র আশিক হাওলাদার (১৬) ও আতিক হাওলাদারসহ (১৪) কয়েকজন নিয়মিত মাদক সেবন করত। তারা নয়নকে মাদক সেবনে আহবান জানান কিন্ত নয়ন মাদক সেবন না করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে (কিশোরদের) অভিভাবকদের কাছে বিচার দেন। এতে মাদকাসক্ত কিশোররা ক্ষিপ্ত হয়ে ২৭ এপ্রিল ভরসাকাঠী সেতুর উপর বসে নয়নকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ওই দিন সন্ধ্যায় বখাটে আশিক হাওলাদার নিজ বাড়ী থেকে নয়নকে ডেকে ভরসাকাঠী গীর্জা ঘর নামক স্থানে নিয়ে যায় । সেখানে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নয়নের হাত পা বেধে আটকে রেখে মারধর করার পর নয়নের মোবাইল ফোন দিয়ে চট্রগামে অবস্থানরত নয়নের বাবা আব্দুস সোবাহানের ২০লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। টাকা না দিলে নয়নকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। ওই দিন রাত ৯ টার দিকে গীর্জাঘরের পাশে নদী পার নিয়ে আমিনুল ইসলাম ও মমিনুল ইসলাম নয়নের পা চেপে ধরলে আশিক হাওলাদার একটি ধারালো ছুরি দিয়ে নয়নকে এলোপাথারি কুপিয়ে পরবর্তিতে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। পরে বস্তায় ভরে ইট বেধে নদীতে নিক্ষেপ করে করে। গত রোববার আমিনুল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। হত্যা মামলার বাদি নিহতের বাবা উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের ভরসাকাঠী গ্রামের আব্দুস সোবাহান হাওলাদার পিবিআইর তদন্তে সন্তোস প্রকার করে বলেন, বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ সাড়ে ৪ মাসেও হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারিনি সেখানে পিবিআই ১৫ দিনের মধ্যে মূল হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার ও হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি চাই।
পিবিআই পুলিশ বরিশালের সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, তদন্তভার গ্রহনের পরে আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের করে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের নাম পাওয়া গেছে। হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দসহ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।