বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় ধর্ষন মামলার বাদিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহারের সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের কান্দিরপাড় গ্রামে শিশুকে গনধর্ষণের পর ডিডিও দেখিয়ে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করা মামলার এজাহারভূক্ত আসামি বরখাস্তকৃত ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে বাদিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহারের সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ একটি সন্ত্রাসী ও ছিনতাইর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ধর্ষিতা ও পরিবারের একাধিক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, ইউপি সদস্য শামীম তালুকদার গত ২/৩ মাস আগে ধর্ষন মামলায় জামিনে জেল থেকে বের হয়ে তাদের বিভিন্ন ভয়ভীতি ও প্রাননাশের হুমকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য শামীম তালুকদার আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা চালাবো না এই মর্মে লিখে ষ্টাম্পে স্বাক্ষর নেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহারের সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার কথা স্বীকার করে আগৈলঝাড়ার রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোঃ ইলিয়াস তালুকদার বলেন, সন্ত্রাসী শামীম তালুকদারে ভয়ে ধর্ষিতার পরিবার আতংকিত এবং ভয়ে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়েছে। আমি বিষয়টি থানাকে অবহিত করা করেছি। সাবেক ইউপি সদস্য শামীম তালুকদার বলেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা প্রত্যহারের সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ সঠিক নহে। বাদি ও তার পরিবার স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর দিয়ে মামলা প্রত্যহারে জন্য আবেদন করেছে। আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, গত শুক্রবার একটি সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িত থাকার মামলায় শামীম তালুকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধর্ষন মামলা প্রত্যাহারে সম্মতিপত্র লিখে নেওয়া সম্পর্কে বাদি লিখিতভাবে থানায় কোন অভিযোগ করেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
থানা সূত্রে জানা গেছে, শিশু ধর্ষনের ঘটনায় ধর্ষিতা বাদী হয়ে শামীম তালুকদার ও মুন্না তালুকদারনহ ৮জনকে আসামী করে (২৮সেপ্টেম্বর ২০১৭) আগৈলঝাড়া থানায় একটি ধর্ষন মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের দুই মাস পর পুলিশ প্রধান আসামি ইউপি সদস্য শামীম তালুকদারসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার। ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খোন্দকার আবুল খায়ের শামীমসহ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে আদালত তা গ্রহন করেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক আদেশে ২০১৮ সালের ১৮সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনে আগৈলঝাড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত) সহ পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(১)(২)৯৩) ধারার অভিযোগপত্র আদালত আমলে নেয়ায় ইউপি সদস্য শামীম তালুকদারকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বাদির এজাহারে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আগৈলঝাড়ার কান্দিরপাড় গ্রামের কুয়েত প্রবাসীর কন্যা ও কান্দিরপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী (১৪)কে নিয়ে চৌদ্দমেদা বিলে নৌকায় বেড়াতে যান প্রতিবেশী বন্ধ লিমন সরদার, নয়ন হাওলাদার ও ফেরদৌস হাওলাদার । বিলে ঘোরাঘুড়ির এক পর্যায়ে রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য শামীম তালুকদার, চেঙ্গুটিয়া গ্রামের বখাটে মুন্না তালুকদারের নেতৃত্বে ৭/৮ জন বখাটে তিন বন্ধুকে বেধে শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে বখাটরো তিন বন্ধুকে মারধর করে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে বিকৃত দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করে এবং পরবর্তিকে একজনকে দিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষন করাতে বাধ্য করে ওই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারন করে। ওই ভিডিও দেখিয়ে পরিবারকে জিম্মি করে পরিবারের কাছ ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন।