বরিশাল
উজিরপুরে গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের পটিবাড়ি গ্রামে রোববার সকালে গৃহবধূর (২৪) লাশ উদ্ধার করেছে উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ গৃহবধূ রিমা আক্তারকে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আত্মহত্যার প্রচারনা চালায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মেজ ভাই মোঃ মাইনুল ইসলাম মিয়া (২৮) বাদি হয়ে নিহতের স্বামী, শ্বশুর ও দেবরের নামাল্লেখসহ অজ্ঞানামা আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলার অভিযোগ দায়ের করেছে।
স্থানীয় লোকজন, নিহতের স্বজন ও পুলিশ জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের জয়রামপট্রি গ্রামের মোঃ বাবুল মিয়ার কন্যা রিমা আক্তারের (২৪) পাশ্ববর্তি উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান বেপারীর ছেলে মোঃ মিজান বেপারীর (৩০) সঙ্গে ৪/৫ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় রিমার বাবা স্বামী মিজানকে আসবাবপত্র, স্বর্নালংকার ও বিভিন্ন মালামালসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকার যৌতুক দেন। বিয়ের ২ বছর না যেতেই স্বামী মিজান রিমাকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে নগত টাকা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এ নিয়ে গত ২/৩ বছর যাবত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াবিবাদ চলে আসছিল। গত জুন মাসে রিমাকে বাবার বাড়ি থেকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক আনতে বলে স্বামী মিজান। এতে রিমা অপরাগতা প্রকাশ করলে স্বামী মিজান বেপারী তাকে মারধর শুরু করে।
দাবিকৃত যৌতুক না দেয়ায় ম্বামী মিজান গত ৩ মাসে অনেকবার রিমাকে মারধর করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। পরে স্বজনরা একাধিকবার বিষয়টি মিমাংসা করে রিমাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠান। রিমার বড় ভাই মোঃ বুলবুল মিয়া (৩১) জানান, গত বৃহস্পতিবার ছোট বোন রিমা তাকে ফোন দিয়ে বেদম নির্যাতনের কথা জানিয়েছিল এবং ৩ দিনের মধ্যে ৩ লাখ টাকা যৌতুক না দিলে তাকে মেরে ফেলবে স্বামী মিজানের হুমকির বিষয়টিও অবহিত করেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে ভগ্নিপতি মিজান ফোন দিয়ে বোন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দেন। রিমা আত্মহত্যা করেনি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার প্রচারনা চালানো হয়। ছোট ভাই নাজমুল ইসলাম (২০) অভিযোগ করে বলেন, দাবিকৃত যৌতুক না দেয়ায় আমার বোনকে স্বামী মিজান তার বাবা মান্নান বেপারী ও ছোট ভাই মোসাদ্দেক বেপারী নির্মম নির্যাতন করার পরে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আম গাছে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দেন। নিহতের মেজ ভাই মাইনুল ইসলাম বলেন, আমার বোন রিমাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমি রিমার স্বামী মিজান বেপারী শ্বশুর মান্নান বেপারী, দেবর মোসাদ্দেক বেপারীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় হত্যার অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে স্বামী মিজান বেপারী যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, পারিবাররিক কলহের কারনে স্ত্রী রিমা অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ রুহুল আমিন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরাতহাল রিপোর্ট তৈরী করেছি। লাশের গলাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উজিরপুর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্বজনরা যেভাবে অভিযোগ দিয়েছে সেভাবেই মামলা রুজু করার প্রস্তুতি চলছে।