গৌরনদী
গৌরনদীতে প্রবাসীর কিশোরী কন্যার অভিসার দেখে ফেলায় কিশোর হত্যা \ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার-৪
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামে মালেশিয়া প্রবাসীর কিশোরী কন্যার অভিসার দেখে ফেলায় আকাশ (১৬) নামে এক কিশোরকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আকাশ হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা মানিক সরদার বাদি হয়ে গত শুক্রবার গভীর রাতে গোবর্দ্ধন গ্রামের শামছুল হক খানের বাড়ির ভাড়াটে মালেশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী, কন্যা, কন্যার প্রেমিক ও বড় জামাতাসহ ৬ জনের নামোল্লেখ করে ১১ জনকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। শনিবার পুলিশ মামলার এজাহারভূক্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে মা ও মেয়েকে আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুজ্জামান জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শামছুল হক খানের বাড়ির ভাড়াটিয়া নিহত কিশোর আকাশের (১৬) হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। বাড়ির অপর ভাড়াটে মালেশিয়া প্রবাসীর কন্যা সীমার প্রেমিকের সঙ্গে অভিসার দেখে ফেলার ঘটনার বিরোধের জের ধরে প্রবাসীর স্ত্রী তাসলিমা বেগমের (৩৫) ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আকাশকে হত্যা করেছে। কিশোর আকাশ হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা মানিক সরদার (৩৫) বাদি হয়ে গত শুক্রবার গভীর রাতে শামছুল হকের ভাড়াটে মালেশিয়া প্রবাসী আব্দুর রহিম হাওলাদারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৩৫), ছোট কন্যা গৌরনদীর ধানডোবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী সীমা (১৪), তার প্রেমিক গৌরনদী উপজেলার নন্দনপট্রি গ্রামের মোহাম্মদ রাব্বি (২২), প্রবাসীর বড় জামাতা উপজেলার বানিয়াশুরী গ্রামের শাওন (২৮) তার সহযোগী স্থানীয় ইমরান (২৪) ও ইব্রাহিমের (২৫) নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৬ জনসহ ১১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, মামলার প্রধান আসামি মালেশিয়া প্রবাসী আব্দুর রহিম হাওলাদারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম কন্যা সীমাকে নিয়ে গোবর্দ্ধন গ্রামের শামছুল হকের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। মা মেয়ের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় কিছুদিন যাবত ওই পরিবারের সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি প্রবাসী আব্দুর রহিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৩৫) বাসায় কন্য সীমাকে রেখে বাহিরে গেলে সীমার প্রেমিক গৌরনদী উপজেলার নন্দনপট্রি গ্রামের মোহাম্মদ রাব্বি বাড়িতে ঢুকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হন। বিষয়টি কিশোর আকাশ দেখে ফেললে পরবর্তিতে বিষয়টি নিয়ে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে আকাশকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ছেলে আকাশ মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে অজ্ঞান হয়ে পড়লে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত ৪টায় বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। প্রবাসীর স্ত্রী তাসলিমার স্বজন ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আকাশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার বলেন, মডেল থানা পুলিশ আকাশ হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামি তাসলিমা বেগম, কন্যা সীমা আক্তার, কন্যার প্রেমিক মোহাম্মদ রাব্বি ও তার সহযোগী ইব্রাহিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। রাব্বি ও ইব্রাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং গ্রেপ্তারকৃত মা-মেয়েকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছে।
উল্লেখ্য গৌরনদী উপজেলার গোবর্ন্ধন গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শামছুল হক খানের বাড়িতে একটি পাকা ভবনে যশোর সদর উপজেলার মালেশিয়া প্রবাসী আব্দুর রহিম হাওলাদারের স্ত্রী একমাত্র কন্যা, গৌরনদীর ধানডোবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী সীমাকে (১৪) নিয়ে ভাড়া থাকতেন। একই বাড়িতে পাশের ঘরে স্ত্রী নাসিমা আক্তার (৩১) ও পুত্র আকাশকে (১৬) নিয়ে ভাড়া থাকতেন গৌরনদীর বানিয়াশুরী গ্রামের মানিক সরদার (৩৫)।