গৌরনদী
বরিশালে তিন উপজেলায় ডেঙ্গু পরীক্ষার রিএজেন্ট সংকট, আতংকে জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের সরকারী বেসরকারী হাসপাতালসহ ক্লিনিকগুলোতে ডেঙ্গু রোগের রিএজেন্ট, ডিভাইস (এনএস-১) সংকঠ দেখা দিয়েছে। বরিশালের গৌরনদী, উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোন ডিভাইস নেই। এ ছাড়া চরম সংকট দেখা দিয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে না পেরে আতংকে রয়েছে জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা। বুধবার গৌরনদী, উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলার অসংখ্য রোগী পরীক্ষা করতে না ফিরে গেছে।
বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন দিনে বরিশালের গৌরনদীতে ৬জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে আলেয়া বেগম মঙ্গলবার রাতে মারা গেছে। ইমন নামে এক রোগীকে গতকাল বুধবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইজন চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং দুই জনকে বরিশাল পাঠানো হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ডাঃ মীর্জা মাহাবুব জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষার নিরীক্ষার রিএজেন্ট নেই। এখানে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যাচ্ছে না। গৌরনদীর বেসরকারি হাসপাতাল সিকদার ক্লিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব জানান, কিছুদিন যাবত ডেঙ্গু পরীক্ষার হিড়িক পড়ে যায়। এতে রিএজেন্ট শেষ হয়ে গেছে। গতকাল ৩টি ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষা করার পরে রিএজেন্ট শেষ হওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে আর কোন পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। ফলে রোগীগের মধ্যে এক ধরনের আতংক দেখা দিয়েছে। একই কথা জানালেন এবি সিদ্দিক ডায়গনিষ্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান। তিবি বলেন, আমাদের সংগ্রহে যেসব ডিভাইস ছিল । সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। গতকাল পর্যন্ত আমরা পরীক্ষা করতে পারছি। এক শ্রেনির অসাদু ব্যবসায়ীরা জাতীয়ভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরী করেছে। ঢাকায় গিয়ে কোন রিএজেন্ট সংগ্রহ করতে পারি নাই।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান জানান, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার রিএজেন্ট নেই। ফলে এখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ নেই। উজিরপুরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের মালিক জানান, রিএজেন্ট সংকটের কারনে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে পারছেন না। তারা ঢাকায় বিএম ভবনে রিএজেন্ট সংগ্রহের জন্য গিয়েও ডিভাইস বা রিএজেন্ট পাননি। আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, প্রতিদিন জ্বর নিয়ে আউটডোরে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। রিএজেন্টের অভাবে সরকারি হাসপাতালে তাদের পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। তাদেরকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হলে রিএজেন্ট সংকটের কারনে রোগীরা পরীক্ষা করাতে পারছেন না। আগৈলঝাড়া চার জন রোগীর ডেঙ্গু সনাক্ত করা হয়েছে। রোগীর স্বজন মিজানুর রহমান, মনোয়ার হোসেন, রাজীব হোসেনসহ অনেকেই জানান, তারা রোগী নিয়ে পরীক্ষঅর জন্য সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কিন্তু পরীক্ষা করতে পারছেন না। এ নিয়ে তারা হতাশা ও আতংকের মধ্যে রয়েছেন।
বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়ার স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ জলিল ডেঙ্গু পরীক্ষার রিএজেন্ট সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, হঠাৎ করে ডেঙ্গ ছড়িয়ে পরায় কোন সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার ডিভাইস নেই। ফলে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, সারা বছর ডেঙ্গ থাকে না, এ বছর হঠাৎ করে আক্রান্ত হওয়ায় আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। যে কারনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমাদেরকে কোন রিএজেন্ট দেওয়া হয়নি। তবে ডিজি অফিস থেকে আমাদেরকে ১২০টি ডিভাইস বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে যা এখনো হাতে পাইনি। কুরিয়ারে পাইপ লাইনে রয়েছে। তাছাড়া জরুরী ভিত্তিতে ডিভাইস সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালুর পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।