গৌরনদী
অপহরন করে নিয়ে এক তরুনের সঙ্গে কিশোরীকে বিয়ে দেয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম / সমাজে অহরহ কিশোরী, যুবতী ও ছাত্রী অপহরননের ঘটনা ঘটলে এই প্রথম কিশোরকে অপহরন করে জোর পূর্বক বিয়ের দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিন বিজয়পুর গ্রামের রবিউল সরদার নামে এক তরুনকে (১৮) অপহরন করে নিয়ে যান কনের অভিভাবক ও তাদের ভাড়াটে লোকজন। পরবর্তিতে রবিউলকে মারধর করে উজিরপুর উপজেলার শিকার ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্টার কাজী আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে চার লাখ টাকা কাবিনে বিবাহ সম্পন্ন করে কিশোরকে আটকে রাখেন। এ ঘটনায় অপহৃত তরুনের পিতা মোঃ আব্দুস সালাম সরদার গত সোমবার উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উজিরপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
গৌরনদী উপজেলার দক্ষিন বিজয়পুর গ্রামের মোঃ আব্দুস সালাম সরদারের পুত্র অপহৃত তরুন রবিউল সরদার জানান, গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের বিল্লগ্রাম গ্রামের কিশোরী কন্যা (১৭) স্কুলে আসা যাওয়ার পথে ৬ মাস পূর্বে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ে পর তারা উভয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক বন্ধু হয়ে উভয়ে ম্যাসেঞ্জজারে কথাবার্তা বলেন। রবিউল অভিযোগ করে বলেন, গত ৪ জুন সকালে কিশোরীর দুলাভাই উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মুন্ডপাশা গ্রামের মৃত মোনাসেফ হাওলাদারের পুত্র মো. রনি হাওলাদারের (৩৫) আমাকে ফোন দিয়ে আশোকাঠী নামক স্থানে আসতে বলেন। আমি সেখানে পৌছলে রনি হাওলাদারের নেতৃত্বে রাজীব ফকির (৩০), স¤্রাট ফকির (২৩)সহ ৫/৭ জন সন্ত্রাসী আমাকে অপহরন করে মটরসাইকেলযোগে তার বাড়ি উজিরপুরের মুন্ডপাশা নিয়ে আটকে রাখেন। ৬জুন রাতে শিকারপুর ইউনিয়ন নিকাহ রেজিষ্টার মুন্ডপাশা গ্রামের আলাউদ্দিন মিয়ার পুত্র মোঃ আমিরুল ইসলাম মিয়াকে (৩৫) দিয়ে আমার সঙ্গে রনি হাওলাদারের শালিকার বিয়ে রেজিষ্টারী করতে উদ্যোগ নেন। আমি বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় আমাকে বেদম মারধর করে সাদা ষ্টাম্পে স্বাক্ষর নেন এবং এক পর্যায়ে চার লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করতে বাধ্য করেন।
রবিউল সরদারের বাবা আব্দুস সালাম সরদার উজিরপুর ইউএনও ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে বলেন, জন্ম সনদ অনুযায়ী ওই কিশোরীর বয়স ১৭ বছর। (জন্ম তারিখ ৬/৫/২০০২ইং) উজিরপুরের প্রভাবশালী রনি হাওলাদার আমার ছেলে রবিউলকে আটকে নির্যাতন করে ওই এলাকার নিকাহ রেজিষ্টার আমিরুল ইসলামকে দিয়ে ৪ লাখ টাকার কাবিনে বিবাহ নিবন্ধন করেন । জোরপূর্বক ছেলে সঙ্গে কিশোরীর বাল্য বিয়ে পড়ানোর বিষয়ে কাজী আমিরুলের কাছে জানতে চাইলে সে মেয়ে পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি মিমাংসার প্রস্তাব দেন। সে আমাকে বলে ৩ লাখ টাকা দিলে ডিফোর্স দিয়ে আলাদা করে দিবো। এতে রাজি না হলে মেয়ের পূর্ন বয়স হলে পুরো কাবিনের চার লাখ টাকা দিয়ে মেয়েকে ডিফোর্স দিতে হবে নতুবা মামলায় জেল খাটতে হবে বলে হুমকি দেন। জোরপূর্বক কিশোরীর সঙ্গে বাল্য বিয়ে দেওয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে গত সোমবার রবিউলের বাবা আব্দুস সালাম ইউএনও ও ওসি বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। স্থানীয়রা জানান, লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর থেকে বাল্য বিবাহ পড়ানো কাজী আমিরুল ইসলাম গাঁ ঢাকা দিয়েছে।
কনের দুলাভাই মো. রনি হাওলাদারের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অপহরনের কথা অস্বীকার করে বলেন, রবিউল স্বেচ্ছায় আমার শালিকাকে নিয়ে আমার বাড়িতে বিয়ে করতে আসলে তাদের বিয়ে দেয়া হয়। অপহরন ও বিয়েতে বাধ্য করার কথা সঠিক নয়। আমাকে হয়রানী করতে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। নিকাহ রেজিষ্টার মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি শরীয়া মোতাবেক সরা দিয়ে বিয়ে পড়িয়েছে। কাবিন করি নাই। মিমাংসার নামে ৩ লাখ টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন। উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, বিষয় সম্পর্কে অবহিত নই এবং কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে থানার এক কর্মকর্তা জানান, সালাম সরদার বাদি হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ করে সোমবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাছুমা আক্তার লিখিত পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বাল্য বিয়ে পড়ানোর জন্য নিকাহ রেজিষ্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর জোর পূর্বক বিয়ে পড়ানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উজিরপুর থানার ওসিকে লিখিতভাবে বলা দেয়া হয়েছে।