প্রধান সংবাদ
কার্পেটিং করার সঙ্গে সঙ্গে উঠে যাচ্ছে, শ্রমিকের ওপর হামলা, কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের আগেলঝাড়ার উপজেলা সদর থেকে বাশাইল হাট হয়ে গৌরনদীর ঘোষেরহাট পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের জন্য বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রায় ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করেন। সড়কটি কার্পেটিং করার সঙ্গে সঙ্গে তা উঠে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার অনিয়ন ও দূর্নীতির অভিযোগে গত শনিবার বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী নির্মান শ্রমিকের ওপর হামলা চালিয়ে দুই শ্রমিককে আহত ও ঠিকাদারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শারীরিক লাঞ্চিত করে নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় লোকজন, সুবিধাভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ জেলা সড়ক উন্নয়নের অধীনে ২০১৮-২০১৯ ইং অর্থ বছরে আগেলঝাড়ার উপজেলা সদর থেকে বাশাইল হাট হয়ে গৌরনদীর ঘোষেরহাট পর্যন্ত ১২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়কে দুটি কালভার্ট ও ১৮ফুট প্রশস্ত করনসহ পুনঃ নির্মানে প্রায় ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহন করে গত ফেব্রয়ারি মাসে দরপত্র আহবান করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গত মার্চ মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম খান গ্রæপকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। মে মাসের শেষের দিকে ঠিকাদার নির্মান কাজ শুরু করেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজ শুরুতেই নানান অনিয়ম, দূর্নীতি ও নির্মান কাজে নিন্মামানের সামগ্রী ব্যবহার করেন। তারা সড়কের ভীত নিয়ম অনুযায়ী না করে নিন্মমানের বালু ও পাথরের পরিবর্তে খোয়া দিয়ে তৈরী করেন। তাছাড়া কার্পেটিং ঠিকমত বিটুমিন ব্যবহার না করায় কাজ করতে না করতেই তা উঠে গেছে। স্থানীয় লোকজন এ সব অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তা উপেক্ষা করে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামত কাজ চালিয়ে যান। এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে গত ১৫ জুন বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেন। কর্তপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা গত শনিবার প্রকল্প স্থানে হামলা করে । এসময় দুই নির্মান শ্রমিক আহত হয় এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক বাবুল হোসেনকে শারীরিক লাঞ্চিত করে।
সরেজিমনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ১০ কিলোমিটর সড়ক কার্পেটিং করা হয়েছে। যা কাজ শেষ করার এক দিন পরেই উঠে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। রাজিহার, বাশাইল, মাগুরাসহ বিভিন্ন স্থানে পাথর ও পিচ আলাদা হয়ে গেছে। এ সময় গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সুধীর রঞ্জন ও ইউপি সদস্য কাওসার আহম্মেদসহ এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ঠিকাদার কাজ শুরুতেই নানান অনিয়ম ও দূর্নীতি শুরু করেন। প্রকল্প স্থানে নিন্মমানের সামগ্রী জড়ো করে কাজ শুরু করেন। এ সময় কাজে বাধা দিলে তা উপেক্ষা করে কাজ অব্যহত রাখেন। পরবর্তিতে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে তারাও কোন ব্যবস্থা নেননি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্য-সহকারী শামছুল হকের উপস্থিতিতে ঠিকাদার নিন্মমানের কাজ করেন। সড়কের ভীত নির্মান নিয়ম অনুযায়ী করা হয়নি এবং কার্পেটিং কাজ করনে ঠিকমত বিটুমিন ব্যবহার করা হয়নি। ফলে সড়ক থেকে কার্পেটিং উঠে আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক ঠিকাদাররা জানান, সিডিউল অনুযায়ী এলএ-৩৫ গ্রেডের পাথরের সাথে সম পরিমান সিলেট চান বালু মিশ্রন করে (বেইজ টাইপ ওয়ান ) করার কথা ছিল কিন্তু ঠিকাদার তাতে সিলেট চান বালুর পরিবর্তে ভিট বালু ও খোয়া ব্যবহার করেছে। নির্মানে ঠিকমত কমপ্যাকশন করা হয়নি। ৪০ মিলি মিটার কার্পেটিং এর পরিবর্তে নামেমাত্র কার্পেটিং কাজ করেছে। কাপেটিং এ আগে প্রাইম কোটে বিটুমিন না দিয়ে পোড়া মবিল ব্যবহার করেছে। ফলে কার্পেটিং আলাদা হয়ে গেছে। এছাড়া সড়কের বিভিন্নস্থানে গাইড ওয়াল দিয়ে পাইলিং করার কথা থাকলেও ঠিকাদার বাঁশ ও ড্রাম সীট দিয়ে পাইলিং করেছে। বিক্ষুব্ধ স্থানীয় বারেক হোসেন (৪৫), সুলতান মিয়া (৩২) ও রাজ্জাক সরদারসহ অনেকেই জানান, তাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল সড়কটি সংস্কার করা কিন্তু সড়কটিতে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্ধ করা হলেও তাতে দিয়ে সড়ক উন্নয়নের নামে ঠিকাদারের লুটপাটের প্রকল্পে পরিনত হয়েছে। এ জন্য তারা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে জানানো সত্বেও কোন পদক্ষেপ নেননি।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম খান গ্রæপের মালিক মো. মাহফুজ খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গোটা সড়কের ভালই কাজ হযেছে কিন্তু ৩শ ফুটে সমস্যা হয়েছে। ওই কাজ তুলে ফেলে নতুন করে নির্মানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প তদারকি কাজে নিয়োজিত বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রাইম কোট দেয়ার আগে সড়ক পরিস্কার না করায় সমস্যা হয়েছে। কাজের মান খারাপের জন্য সওজের কার্য-সহকারী ও ঠিকাদারের প্রকল্প ব্যবস্থাপককে সাশিয়ে দিয়ে সংশোধনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত । কাজের গুনগতমান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারকে দিয়ে নতুন করে কাজ করানো হবে।