বরিশাল
হাইকোর্টের নির্দেশে আওয়ামীলীগ অফিসের সাইনবোর্ড অপসারনসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে জমি বুঝিয়ে দিলেন প্রশাসন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বরিশালের উজিরপুর উপজেলা শিকারপুর বন্দরে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দোকানঘর দখল করে আওয়ামীলীগের কার্যালয় নির্মান করেন স্থানীয় কতিপয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। হাইকোর্ট বরিশাল জেলা প্রশাসককে জমি দখলমুক্ত করে বৈধ মালিককে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেন, নয়তো জেলা প্রশাসককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ জাড়ি করেন। নির্দেশের প্রেক্ষিতে বরিশাল জেলা প্রশাসক উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাছুমা আক্তারকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। দখল নেওয়ার দুই মাস পর উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাছুমা আক্তার আওয়ামীলীগের কার্যালয় অপসারনসহ জমি দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বুঝিয়ে দেন। এ নিয়ে“মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করে নির্মান করা হচ্ছে দলীয় কার্যালয়” শিরোনামে গত ৬ ডিসেম্বর প্রথম অলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
আদালত, ভুমি কার্যালয় ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার জেএল ৮৩নং মৌজার, এসএ খতিয়ান নং -৩, ১৯৩৬ নং দাগের শিকারপুর বন্দরের ৪ শতাংশ জমিতে ১৯৫০ সাল থেকে দোকানঘর নির্মান করে ৬৫/৭০ বছর ধরে ভোগদখল করেন পূর্ব ধামসার গ্রামের ডাঃ আয়নাল হোসেন মৃধার পুত্র মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মো. মাহাবুবুর রহমান। ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুর রহমান মারা গেলে সন্তান মাহফুজুর রহমান ও ছোট ভাই মশিউর রহমান পৈত্রিক সুত্রে ভোগ দখল করেন । মাহফুজুর রহমান ১৫ জুন ঘরটির সংস্কার কাজ শুরু করলে শিকারপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য জয়শ্রী গ্রামের মৃত কলম খানের ছেলে মো. এনায়েত হোসেন খান(৬৫) ও তার সহযোগীরা এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক সহযোগী নেতাকর্মী হামলা চালিয়ে নির্মানাধীন দোকানঘর ভাঙচুর তাদের মারধর করে। এ ঘটনায় এনায়েত হোসেন খানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে দোকান দখলের পায়তারা করেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামীলীগ নেতা এনায়েত হোসেন খান তার দলবল নিয়ে নির্মানাধীন দোকান ঘরে আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয় ও মুক্তিযদ্ধের স্মৃতি সংসদ ও পাঠাগার নামে দুটি সংগঠনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দোকান দখল করে নেন। নিরুপায় হয়ে অবশেষে মাহফুজুর রহমান গত ৪ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের হাইকোট ডিভিশনে রিট পিটিশন দায়ের করেন। গত ১৫ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীর যৌথ বেঞ্চ এক আদেশে সম্পত্তির বৈধ দখলদার ও করদাতা হিসিবে হাট বাজারের সরকারি খাসজমি প্রদান নীতিমালা অনুযায়ী মাহফুজুর গংকে ভোগ দখলের নির্দেশ দেন এবং একই সঙ্গে জমিতে স্তিতিবাস্থা বজায় রাখতে আদেশ জারি করেন। গত ৩০ নভেম্বর জমিতে আদালতের আদেশ সংক্রান্ত সাইনবোর্ড স্থাপন করতে গেলে আওয়ামীলীগ নেতা এনায়েত খান দলবল নিয়ে সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলে দেন। ৫ ডিসেম্বর এনায়েত হোসেন আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মাহফুজুর রহমানের পুরাতন টিনের ঘরটি ভেঙ্গে লুট করে নিয়ে যান।
এ ঘটনার পরে বাদী পক্ষ পুনরায় হাইকোর্ট ডিভিশনে দ্বারস্থ হলে মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারী মাহফুজুর রহমানকে পুনরায় দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বরিশাল জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। অন্যথায় জেলা প্রশাসককে স্ব-শরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখা প্রদান করতে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে বরিশাল জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান গত বৃহস্পতিবার উজিরপুর নির্বাহী অফিসার মাসুমা আক্তারকে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে বাদীর দোকান ঘরের দখল বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ প্রদান করেন। উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আক্তার জানান, বরিশাল জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমানের নির্দেশে জমি পরিমাপ করে মাহফুজুর রহমানের জমি দখলমুক্ত করে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল, সার্ভেয়ার জাকির হোসেন, শিকারপুর বন্দর কমিটির সভাপতি হেমায়েত মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক আঃ করিম খান, বন্দরের ব্যবসায়ী ডাঃ গফুর উদ্দিন মঞ্জু, সেলিম সিকদার। জমি বুঝে পাওয়ার কথা স্বীকার করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মাহফুজুর রহমান বলেন, আদালত একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের প্রতি সু-বিচার করেছে এবং সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এ জন্য আমি জেলা প্রশানকসহ সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।