প্রধান সংবাদ
বরিশাল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা \ গৌরনদীতে আওয়ামীলীগ বিএনপি সংঘর্ষ, আহত ৩০
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নে সোমবার সন্ধ্যায় বরিশাল-১ আসনের মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন ও আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামীলীগের একটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এতে উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। এ ছাড়া বরিশালের উজিরপুর উপজেলা গুঠিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের একটি নির্বাচনী ভাঙচুর ও উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুবৃত্তরা।
আপর দিকে সোমবার বিকেলে বানরীপাড়ায় বিএনপি প্রার্থীর গাড়িতে গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় বিএনপির প্রার্থী সরদার সরফ উদ্দিন আহম্মেদ স্টাুকে প্রধান আসামি করে ১০৩ জন বিএনপি নেতাকর্মির বিরুদ্ধে সোমবার রাতে আওয়ামলীগ প্রার্থী মো. শাহ আলম তালুকদারের ভাই মো. নুরুল হুদা বাদি হয়ে বানরীপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রাজু খান অভিযোগ করে বলেন, সোমবার সন্ধ্যার দিকে বিএনপি প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন একটি মিছিল নিয়ে আমাদের নির্বাচনী কার্যালয় অতিক্রম করার সময় মিছিরে থাকা সরিকল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধার নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মি দেশীয় ধারাল অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নৌকার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চেয়ার, টেবিল ও আসবাবপত্র ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় রামদা দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আওয়ামলীগ কর্মি মো. হারুন হাওলাদার(৭০), মো. ফরিদ হোসেন সন্যামাত (৬৫), ছাত্রলীগ কর্মি পলাশ (২২), কামাল শেখ (৩৫), কালাম হাওলাদার(৩৫), কালাম খান(৫০), ইউপি সদস্য মিলন হোসেনসহ ১৫ কর্মিকে জখম করেছে। আহতদের সরিকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
সরিকল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে সোমবার বিকেলে ধানের শীষের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনকে সঙ্গে নিয়ে প্রার্থীর বাড়ি থেকে মিছিল বের করে সন্ধ্যার দিকে কাÐপাশা ব্রিজের কাছে পৌছলে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সরিকল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক রাজু খান, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আঃ সাত্তার মল্লিকের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসাটা নিয়ে ধানের শীষের মিছিলে হামলা চালায়। হামলায় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. ইব্রাহিম মুছা(৩৫), ছাত্রদল কর্মি লিমন (২৫), যুবদল কর্মি মোয়াজ্জেম হোসেন(৩৪), ইমরান হোসেন(২৭), বিপ্লব হোসেন (২৬) ও সুজন মুন্সী, দেলোয়ার হোসেন(৩২) বেলাল সরদার (৪২)সহ ১৫জন নেতাকর্মি জখম হন। পুলিশি ভয়ে আহতদের গোপনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মিদের নামে মামলা রুজু করতে আওয়ামীলীগ নিজেরাই অফিস ভেঙ্গে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির মিছিল থেকে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরসহ অফিসে থাকা নেতাকর্মিদের মারধর করা হয়। তবে এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয়নি।
সোমবার সন্ধ্যায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির ৪ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। পৃথক ২টি বিস্ফোরক মামলার সন্দীগ্ধ আসামি হিসেবে বিএনপির কর্মী ভূরঘাটা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, কটকস্থল গ্রামের জিয়াউল সরদার, টুলু সরদার, আলামিন মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত বিএনপির ওই ৪ কর্মীকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালতের বিচারক তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন। অবশ্য, উপজেলা বিএনপি দাবি করছেন, গায়েবি মামলার সন্দীগ্ধ আসামি হিসেবে বিএনপির ওই ৫ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার বিকেলে বানরীপাড়া বাজার সংলগ্ন পৌরসভা মোড়ে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানরীপাড়া) বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সরদার সরফউদ্দিন আহম্মেদ সান্টু গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী শাহ আলম তালুকদারের সমর্থকদের সঙ্গে সান্টুর সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় দলের ২০ জন আহত। বানরীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান জানান, সোমবারের ঘটনায় আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহে আলম তালুকদারের সহদর মো. নুরুল হুদা বাদি হয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরদার সরফউদ্দিন আহম্মেদ সান্টুকে প্রধান আসামি করে ৪৩ জন বিএনপির নেতাকর্মির নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৬০সহ ১০৩ জনকে আসামি করে সোমবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেছে। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সরদার সরফউদ্দিন আহম্মেদ সান্টু অভিযোগ করেন, আমার প্রচারনায় আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে আমার গাড়ি বহরে গুলি করে উল্টো আমার নামেই মামলা দায়ের করেছে। এই হল নির্বাচন কমিশনরে নির্বাচনী লেভেল প্লেইয়িং ফিল্ড। পুলিশ আওয়ামরীগের প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে এবং আমার বরিুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
বরিশাল-২ আসনের আওয়ামলীগের প্রার্থী শাহে আলম তালুকদারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও বানরীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বলেন, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সরদার সরফউদ্দিন আহম্মেদ সান্টুর সন্ত্রাসী বাহিনী একের পর এক আওয়ামীলীগের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দিচ্ছে। সোমবার ঘটনার জের ধরে ওই দিন রাতে গুঠিয়া আওয়ামীলীগের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করে।
উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া এলকার বাসিন্দরা জানান, সোমবার রাত আনুমানিক রাত ২টা দিকে আওয়ামলীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেয় কে বা কারা। আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে তারা ডাক চিৎকার দিয়ে লোকজন জড়ো করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন কিন্তু নেভানোর আগেই অফিসটি সম্পূর্ন ভস্মিভ’ত হয়। বামরাইল ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. শাওন বালী অভিযোগ করে বলেন, বামরাইল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের নির্বাচনে কার্যালয়ে বিএনপি জামাতের নেতাকর্মিরা সুপরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে এলাকায় আতংক ছড়াচ্ছে। বামরাইল ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি গৌড়াঙ্গ লাল কর্মকারের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। উজিরপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আইনজীবি মো. আসাদুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে, আটিপাড়া আমার নিজের বাড়ি ওই গ্রামে মাত্র ৪জন লোক আওয়ামীলীগ করে। তারা ইতিপূর্বে ৮৮ জন বিএনপি নেতাকির্মর বিরুদ্দে একটি মিথ্যা মামলা দেন। আসামিরা জামিনে আসায় নির্বাচনের পূর্বে নতুন করে হয়রানী করতে মিথ্যা মামলা দিতে আওয়ামীলীগ একটি নাটক সাজিয়েছে। উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, গুঠিয়া আওয়ামীলীগ কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর বামরাইল ইউনিয়ননের আটিপাড়া আওয়ামীলীগের নির্বাচনী কার্যালয়ের আগুন দেয়ার ঘটনায় এখনো কোন অভিযোগ পাইনি।