গৌরনদী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বরিশাল-১ \ আবুল হাসনাত আবদুল্লার সাথে প্রতিদ্বন্ধীতায় স্বপন না সোবাহান?
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া-১২১) আসনটি দক্ষিনাঞ্চলের গরুত্বপূর্ন একটি আসন। এ আসনটিকে দক্ষিনাঞ্চলের রাজনৈতিক মেরুকরনের আসন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল জেলা আ.লীগের সভাপতি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বিএনপি থেকে ধানের শীষের টিকিট পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও ২০০৮ সালের দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন। দুইজনে দলের টিকিট পাওয়ার তাদের সমর্থকরা উল্লাসিত হয়ে ঢাকায় বসে মিিিষ্ট বিতরন ও ফুল দিয়ে প্রার্থী বরন করলে তৃনমূল নেতাকর্মিরা হতাশ ও ভিভ্রান্তিতে পড়েছেন ।
বরিশাল- ১ আসনে স্বাধীনতাত্তর সময়ে ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ ৫ বার, জাতীয় পার্টি দুইবার এবং বিএনপি তিনবার জয়লাভ করেছে। ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এর নির্বাচনে এই আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামীলীগ। ১৯৭৯, ২০০১ ও ১২ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেছে বিএনপি। সর্বশেষ মেয়াদে এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুর ভাগনে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি সাবেক মন্ত্রী আব্দু রব সেরনিয়াবাদের পুত্র ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ অঅসনটি থেকে গুরুত্বপূর্ন চারজন কেন্দ্রীয় নেতা দলীয় মনোয়ন ফরন ক্রয় করে জমা দেন। তারা হলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, গাজী কামরুল ইসলাম ও সাবেক তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক এম, জহির উদ্দিন স্বপন। সোমবার সকালে প্রথম দলীয় কার্যালয় থেকে দলীয় টিকিট সংগ্রহ করেন জহির উদ্দিন স্বপন। তিনি টিকিট পাওয়ার পরে এলাকায় না আসলেও ঢাকায় নিজ সমর্থকরা স্বপনের বাসভবনে গিয়ে তাকে নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে ফুল দিয়ে বরন করে তাকে মিষ্টি মুখ করান। পাশাপাশি সোমবার সন্ধ্যার পরে দলীয় কার্যালয় থেকে টিকিট সংগ্রহন করেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। তাকে নিয়ে তার সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করে ফুল দিয়ে বরন করে মিষ্টি বিতরন করেন। জহির উদ্দিন স্বপন ও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান দুজনেই নিজেকে ১নম্বর প্রার্থী ও অপরকে ২নম্বর প্রার্থী (ডামি) হিসেবে দাবি করেন। এদিকে মনোয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় সদস্য আইনজীবি গাজী কামুরল ইসলাম সোমবার তার ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে জহির উদ্দিন স্বপনকে অভিনন্দন জানিয়ে ব্যক্তি নয়, ধানের শীষের প্রতীকে সকল নেতাকর্মিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে ষ্টাটাস দিয়েছেন। পাশাপাশি আকন কুদ্দুসুর রহমান এখনো সরাসরি কাউকে সমর্থন না করলে তিনি বলেছেন যারা দূর্দীনে মাঠে থেকে নির্যাতন সহ্য করে অন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদের টিকিটই তৃনমূল নেতাকর্মিরা সমর্থন করে।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে গত ১০ বছর মার খেয়েছি, মামলা খেয়েছি, অর্থ ব্যায় করেছি। নির্যাতিতা নেতাকর্মিদের সাথে নিয়ে প্রতিকূল অবস্থায় দলকে টিকিয়ে রেখেছি। দল সেই মূল্যায়ন করে অমাকে মনোয়ন দিয়েছে। জহির ইদ্দন স্বপনের টিকিট পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাছাই ঝুকি এড়াতে তাকে ডামি প্রার্থী হিসেবে মনোয়ন দিয়েছে। দলের মূল প্রার্থী আমিই।
এ প্রসঙ্গে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, সারা দেশে সরকারের কৌশল সম্পর্কে দলের নীতি নির্ধারক সতর্ক থেকে প্রায় আসনেই দুইজন করে প্রার্থী ঘোষনা করেছে। ১নং প্রার্থী মূল প্রার্থী ও ২নং প্রার্থী ঝুকি মোকাবেলার জন্য প্রার্থী করা হয়েছে। নির্বাচনে মাঠে টিকে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সিদ্বান্তে আমাকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সোবাহান সাহেব প্রার্থী ছিলেন সংগত কারনেই ২নং প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনীত করা হয়েছে। কে কি বলল তা আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। দল আমাকে ১নং প্রার্থী ঘোষনা করে টিকেট দিয়েছে। নেতাকর্মি নিয়ে গত ১০ বছর ধরে এলাকাছাড়া বিএনপির দুই প্রার্থীর কাছে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা জানান, কোথায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হবে এখনো সেই সিদ্বান্ত গ্রহন করা হয়নি। তবে পরিবেশ পারিবার্শ্বিকতা বিবেচনা করে বরিশাল না গৌরনদী এ সিদ্বান্ত গ্রহন করা হবে।
এদিকে দুইজনকে দলীয় টিকিট দেয়া বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তৃনমূল নেতাকর্মিদের প্রতিক্রীয়া জানতে গতকাল বিভিন্ন্ এলাকায় গিয়ে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় এ ধরনের সিদ্বান্তে তৃনমূল কর্মিরা হতাশ ও বিভ্রান্ত হয়েছেন। দল যদি বাছাই ঝুকি বিবেচনা করে দুই জনকে টিকেট দিয়ে থাকেন সেখানে কে দলীয় প্রার্থী আর কে বাছাই ঝুকির প্রার্থী তা চিহ্নিত করে ঘোষনা করা উচিত ছিল। এমনি দলের মধ্যে বিভাজন রয়েছে এই সিদ্বান্তে বিরোধ আরও বাড়তে পাড়ে। বার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের চারজন নেতা বলেন, দলের এ ধরনের সিদ্বান্তে তৃনমূলে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিভ্রান্ত হয়েছি। বিগত ১০ বছরের মাঠের রাজনীতির মূল্যায়ন করলে আকন কুদ্দুসুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহনই দলীয় টিকিট পাওয়ার যোগ্য। ইঞ্জিনিয়ার সোবাহানই আমাদের প্রার্থী। অপরদিকে সরিকল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা বলেন, মাঠে টিকে থেকে নির্বাচন করতে হলে স্বপনই যোগ্য প্রার্থী। দুজনকে টিকিট দিলেও দলীয় প্রার্থী কে বিষয়টি পরিস্কার করা উচিত ছিল।
অপরদিকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত ঘোষনা পেয়ে আ.লীগ খোসমেজাজে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত সভা সমাবেশ, গনসংযোগ ও সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারনা অব্যহত রেখেছে। দলটি গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার ১১৫টি ভোট কেন্দ্রের জন্য সেন্টার কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছে। এ আসনটিতে নেীকার প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছে বিধায় নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে সাধারন মানুষ ও ভোটারররা জোট বেধেছে বলে নেতাকর্মিরা দাবি করেন। তারা বলেন, আমরা দলকে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত করেছি। সুষ্ঠ -অবাধ ও শান্তিপূর্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত।