গৌরনদী
সামাজিক বনায়নের কোটি টাকার গাছ ১০ লাখ টাকায় বিক্রি
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রল্পের আওতায় গৌরনদী উপজেলার চালতা বাড়িয়া ব্রিজ হইতে বেবাজ্জাইর খাল পর্যন্ত ১২ কিলোমিটর বাঁধের দুই পাশে “বাঁধ বাগান” নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করে বনায়ন করেন গৌরনদী বন বিভাগ। বরিশাল বন বিভাগের কর্মকর্তারা অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে বাঁধের কোটি টাকার গাছ নামেমাত্র মূল্যে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে বলে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীরা অভিযোগ করেন।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)র কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯-২০০০ইং অর্থ বছরে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রল্পের আওতায় গৌরনদী উপজেলার চালতা বাড়িয়া ব্রিজ হইতে বেবাজ্জাইর খাল পর্যন্ত ১২ কিলোমিটর বাঁধের দুই পাশে “বাঁধ বাগান” করার জন্য বরিশাল বন বিভাগ বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করে রেন্ট্রি, মেহগনি, কড়াই, শিশু, রাজ কড়াই, ফলজ, বনজসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৪ হাজার বৃক্ষ রোপন করেন। গাছ পরিচর্চা ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ইউনিয়ন আ.লীগের সহ-সভাপতি সঞ্জীব হালদার ওরফে সুধীরকে সভাপতি করে ১৩০ সদস্য নিয়ে বাকাই বনায়ন সমিতি গঠন করেন। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী সামাজিক বনায়নের গাছের শতকরা ৫ ভাগ ইউনিয়ন পরিষদ, শতকরা ১০ বন বিভাগ, শতকরা ২০ ভাগ পানি উন্নয়ন বোর্ড, শতকরা ১০ টিএফএফ(পুনঃ বনায়ন) ও শতকরা ৫৫ ভাগ সুবিধাভোগী সমিতির সদস্যরা ভোগ করবেন।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের ১২ কিলোমিটর বাঁধের গাছগুলো গত ১৯ বছরে কোটি টাকার সম্পদে পরিনত হয়েছে। সুবিধাভোগী সমিতির সভাপতি সঞ্জীব হালদারের যোগ সাজসে গৌরনদী ও বরিশাল বন-বিভাগ অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারি সিদ্বান্তে গাছগুলো পানির পানি বিক্রি করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গাছ বিক্রি করতে হলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করে এনওসি চাইতে হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় গাছ বিক্রি হবে তা যৌথ পরামর্শে সিদ্বান্ত গ্রহন করতে হবে। কিন্তু বনবিভাগ পাউবিকে কিছু না জানিয়ে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে দরপত্র আহবান করে সিÐিকেটের কাছে পানির দামে গাছ বিক্রি করেছে। এমন কি বিক্রিত গাছের আমাদের অংশের টাকাও দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, একইভাবে এর আগেও বনবিভাগের কর্মকর্তারা উজিরপুরের ধামুরা হইতে চেরাগালি বাজার পর্যন্ত ৭ কিলোমিটর বাঁধের গাছ বিক্রি করে নিজেরাই আত্মসাত করেছেন। এ বিষয়ে লিখিত চিঠি দেয়া হলেও বনকর্মকর্তারা কোন জবাব দেননি।
গৌরনদী ও বরিশাল বন-বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গাছ বিক্রির জন্য বরিশাল বন বিভাগ গত ৮ আগষ্ট দরপত্র আহাবান করেন এবং গত ১৫ নভেম্বর মেসার্স সফিকুল ইসলামকে ১৪টি লট ৫ লাখ ৭১ হাজার ৯শত টাকা, মেসার্স মিলন এন্টাপ্রাইজকে ৬টি লট ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭২ টাকা ও মো. হান্নান ফকিরকে ১টি লট ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রির কার্যাদেশ দেয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১২ কিলোমিটর বাঁধের বিভিন্ন স্পটে গাছ অপসারন করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। কুনিয়ার কান্দি এলাকায় গাছ কাটছিল ঠিকাদার মিলনের লোকজন। এ সময় লেবার সর্দার সফিকুর রহমান(৪০) বলেন, আমরা গত ১৫দিন ধরে গাছ অপসারনে কাজ করছি। একই কথা জানালেন বিভিন্ন স্পটে গাছ অপসারন কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা। মাগুরা এলাকায় দেখা গেছে কাটা গাছ ট্রাকে তুলছেন ঠিকাদারের লেবার আব্দুল জলিল(৩২)সহ কয়েকজন। এ সময় তারা জানান, একদিকে গাছ কাটা হচ্ছে অন্যদিকে সঙ্গে সঙ্গে একাধিক ট্রাকযোগে গাছ নিয়ে যাচ্ছি।
সুবিধাভোগী সমিতির সহ-সম্পাদক মফিজুল হক(৫৫) অভিযোগ করেন, সমিতির সভাপতি সঞ্জীব হালদার সুধীরের যোগসাজসে বনবিভাগের কর্মকর্তারা অনিয়ম করে আমাদেরকে কিছু না জানিয়ে কোটি টাকার গাছ পানির দরে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। গাছ বিক্রির বিষয়ে কোন সভা পরামর্শ করা হয়নি এবং আমাদের কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের কিছুই জানানো হয়নি। সমিতর সদস্য ভ্যান চালক ওয়াজেদ হাওলাদার(৬০) বলেন, এই রাস্তায় ভ্যান চালাইছি আর ১৯ বছর গাছ পাহারা দিছি, সব সময় গাছ দেখাশুনা করছি। আজ গাছ বিক্রি অইল মোরা কিছুই জানিনা। কোন স্বার্থ পাইলাম না। সব ক্ষমতাওয়ালারা জানল আর লাভ হেরাই খাইল। স্থানীয় কুনিয়াকান্দি গ্রামের লালন খান(৪৮) আরমান হোসেন(২৮)সহ অনেকেই অভিযোগ করেন, বন বিভাগের কর্মকর্তা ও সমিতির সভাপতি একক সিদ্বান্ত নিয়ে গাছ বিক্রি করেছে। বিক্রিত গাছের বাজারমূল্য কয়েকশগুন বেশী ছিল। কিন্তু পানির দরে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। ঠিকাদার সফিকুল ইসলাম ও মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজের গাছ অপসারন তদারককারী জিয়ারত শেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, গাছের মূল কি আছে না আছে সেটা বিবেচ্য নয়। আমরা সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পেয়েছি।
সবিধাভোগী সমিতির সভাপতি সঞ্জীব হালদার সুধীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পানির দরে নয়, গাছের যে বাজারমূল্য রয়েছে তার চাইতে অনেক বেশী দামে বিক্রি করা হয়েছে। আমি এলাকায় মেম্বরী নির্বাচন করি তাই শত্রæমিত্র আছে। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তাছাড়া গাছ বিক্রির আমি কিছুই জানিনা এটা বন কর্মকর্তাদের কাজ। গৌরনদী সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি ও প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম আহম্মেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পানির দামে গাছ বিক্রির অভিযোগ সঠিক নহে, সর্বোচ্চ দরে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। তাছাড়া এর দরপত্র আহবান ও কার্যাদেশ দেয়া দায়দায়িত্ব বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার। সামাজিক বন বিভাগ বরিশালের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম এ প্রসঙ্গে বলেন, অভিযোগের সত্যতা নেই। টেÐার কমিটি যথাযথ নীতিমালা অনুসরন করে দরপত্র আহবান করে সর্বোচ্চ দরে গাছ বিক্রি করেছে। এনওসি নেওয়ার বিধান নেই।