গৌরনদী
উজিরপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধে তালিকাভুক্ত চার রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল আমলী আদালতে চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার উজিরপুর উপজেলার মুন্ডুপাশা গ্রামের মন্নান সিকদারের পূত্র ও উজিরপুর উপজেলা কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক মো. নান্নু সিকদার বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আসামিরা চার জনই উজিরপুর উপজেলা প্রশাসনের তালিকাভূক্ত রাজাকার।
মামলার আসামিরা হলেন, জয়শ্রী গ্রামের কলম খানের পূত্র এনায়েত হোসেন খান, দক্ষিন ধামুড়া গ্রামের মৃত মো. ওয়াহেদ আলীর পূত্র বেলায়েত বিশ্বাস, কচুয়া গ্রামের আঃ জব্বার খানের পূত্র আঃ জলিল খান ও মো. শাহ আলম খান। মামলায় ধর্ষনের শিকার ভূক্তভোগী ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে স্বাক্ষী করা হয়েছে। বাদী মো. নান্নু সিকদারের আইনজীবি এ্যাড. মো. সালাউদ্দিন শিপু জানান, বিচারক মোঃ গোলাম ফারুক মামলাটি আমলে নিয়ে ৭ অক্টোবর আদেশের দিন ধার্য্য করেছে।
মামলার বাদী উল্লেখ করেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জয়শ্রী গ্রামের কলম খানের পূত্র রাজাকার এনায়েত হোসেন খানের নেতৃত্বে বেলায়েত বিশ্বাস, জলিল খান ও শাহ আলম খানসহ কতিপয় রাজাকাররা পাক হানাদার বাহিনীর সক্রিয় সহযোগী হিসাবে উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজনদের বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারীদের ধর্ষনসহ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল।
আসামিরা ৭১ সালের ৮ মে পাক বাহিনীদের সদস্যদের নিয়ে শোলক ইউনিয়নের ধামুড়া বন্দরের কুন্ডু বাড়ির সামনে পৌছে মো. আবু জাফর হিরু মিয়া এবং ডাঃ হরেন চন্দ্রকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বারা গুলি করে হত্যা করেছে। এছাড়া ওই বছরের ১৭ অক্টোবর ৩০/৩২ জন পাক সেনা নিয়ে ধামুড়া বন্দরে হানা দিয়ে ৭০/৭২ জন নিরিহ মানুষকে হত্যা করার পর উজিরপুরের বৃহৎ ব্যবসায়ী বন্দর ধামুরা বন্দরে লুটপাট চালিয়ে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় আসামিরা ধামুরা বন্দরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। মামলায় আরো বলা হয়, ৫নং স্বাক্ষীসহ ৬/৭ জন মহিলাকে ধরে নিয়ে ৩/৪ দিন ক্যাম্পে আটকে রেখে জোরপূর্বক ধর্ষন করে ছেড়ে দেয়। মামলার বাদী মো. নান্নু সিকদার মামলা দায়ের প্রসঙ্গে বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের একজন মানুষ হিসেবে মামলাটি দায়ের করেছি। দেশের শত্রæ পাকহানাদারদের সহযোগী রাজাকারদের আদালত বিচার করলে জাতি কলঙ্ক মুক্ত হবে। সম্প্রতি এনায়েত হোসেন খান উজিরপুর আ.লীগে যোগদান করেন। মামলা সম্পর্কে জানতে মো. এনায়েত হোসেন খানের মুঠোফোনে কল করলে রং নম্বর বলে জানান। পরবর্তিতে কল করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বেলায়েত বিশ্বাস জানান, মামলা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। জলিল খান ও শাহ আলম খান ফোন রিসিপ করেননি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কার্যালয় উজিরপুরে রাজাকারদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। ওই বছর ফেব্রæয়ারি মাসে ০০১.১৬-৭৮ স্মারকের মাধ্যমে তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে পাঠান। ওই তালিকায় ৪ জনেরই নাম রয়েছে। তার মধ্যে ২২ নং রাজাকার এনায়েত হোসেন খান, ২৯ নং রাজাকার বেলায়েত বিশ্বাস, ৩০ নং রাজাকার আব্দুল জলিল খান ও ৩১ নং রাজাকার শাহ আলম খান।