গৌরনদী
উজিরপুরে ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫জনের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের অতিদরিদ্র, দুঃস্তদের বিতরনের জন্য বরাদ্ধকৃত ভিজিএফের চাল অত্মসাতের অভিযোগে গত সোমবার বরিশাল স্পেশাল সিনিয়র জজ আদালতে জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জল্লা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ হালদারসহ ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাহেরঘাট গ্রামের মো. এরশাদ হাওলাদার বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দেন। এদিকে হতদরিদ্র দুঃস্তদের চাল আত্মসাতে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে মানববন্ধ করেছে ইউনিয়নবাসি।
উপজেলা প্রকল্প দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অতিদরিদ,্র দুঃস্তদের ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে বিতরনের জন্য উজিরপুর উপজেলায় ১১হাজার ৬শত ৮০ জন সুবিধাভোগীর জন্য ২৩৩.৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেন। ওই বরাদ্ধ থেকে জল্লা ইউনিয়নে ১৩০৪ জন সুবিধাভোগীর জন্য ২০ কেজি করে ২টন ৬শত ৪০ কেজি চাল বরাদ্ধ করা হয়। বরাদ্দকৃত চাল গত ১২ আগষ্টের মধ্যে বিতরন করার কথা ছিল।
বাদি এরশাদ হাওলাদার মামলায় উল্লেখ করেন, আসামিরা পরস্পর যোগ সাজসে ভিজিএফের চাল কথিত মাষ্টার রোলের সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরন না করে আত্মসাতের জন্য কালো বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে জল্লা ইউনিয়নের কারফা বাজারে নেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার কারফা বাজারের মুদি দোকানদার রমেশ বিশ্বাসের দোকানের সামনে একটি ব্যাটারি চালিত ভ্যান থেকে অতিদরিদ্র দুঃস্তদের মধ্যে বিতরনের ২২৫০ কেজি চালসহ অটো ভ্যান চালক সুশান্ত হালদারকে আটক করেন স্থানীয়রা। এ সময় এলাকাবাসি উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ ও উজিরপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো.মফিজুর রহমানকে অবহিত করেন। তারা ঘটনাস্থলে পৌছে চাল জব্দ করে ও ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম সিলগালা করেন। কারফা বাজারে জব্দকৃত চালের মূল্য ৯০ হাজার টাকা। অজ্ঞাত কারনে উজিরপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো.মফিজুর রহমান ও পুলিশ চাল জব্দ করলেও আসামিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ মামলা দায়ের করা হয় বলে মামলায় বাদি এজাহারে দাবি করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ভিজিএফের চাল অত্মসাতের অভিযোগে গত সোমবার বরিশাল স্পেশাল সিনিয়র জজ আদালতে উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়ননের বাহেরঘাট গ্রামের মৃত আমীর হোসেন হাওলাদারের পুত্র মো. এরশাদ হালাদার বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অসামিরা হলেন জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জল্লা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ হালদার(৩৮), জল্লা ইউনিয়নের ওএমএস ডিলার পৃতম হালদার(৪০), কারফা চাল ব্যবসায়ী রমেশ বিশ্বাস(৩২), অটো ভ্যান চালক সুশান্ত হালদার (৩৫) ও সহযোগী দুলাল বিশ্বাস(৪৮)। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দেন।
উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান চাল জব্দ করার ঘটনায় জড়িতদের ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয়রা চালসহ অটো ভ্যান চালককে আটক করেছিল । কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে পৌছে চাল জব্দ করে হতদরিদ্র নিরহ ভ্যানচালক ছেড়ে দেয়। জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার কালোবাজারে চাল বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আত্মসাতের জন্য নয়, ভিজিএফ এর কার্ডধারীদেরমধ্যে বিতরনের জন্য চাল নেওয়া হয়। গত ১২ আগষ্ট চাল বিতরনের সর্বশেষ তারিখ ছিল তাছাড়া গুদাম থেকে চাল বিতরন না করে বাজারে কেন এ প্রশ্নের কোন সউত্তর তিনি দিতে পারেননি। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান বলেন, ১২ আগষ্টের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরনের সময়সীমা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল বিতরন না করা এবং কারফা বাজারে জনতার হাতে চাল আটকের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওই চাল জব্দ করার পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম সিলগালা করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত জল্লা ইউনিয়নবাসির ব্যানারে ধামুরা- কারফা সড়কের কারফা বটতলা এলাকায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচীতে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য তাজুল ইসলাম, জল্লা ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মো. নান্নু সিকদার, আ.লীগ সদস্য লুৎফর রহমান, সমরেশ বাড়ৈ, জল্লা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মো. মামুন শাহ, সদস্য মো. রাব্বি। বক্তরা বলেন, খয়রাতি ও হতদরিদ্র গরীবের চাল যারা খায় তারা মানুষ নয় পশু, আমরা তাদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।