গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় আ.লীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতির তিন মামাতো ভাই আ.লীগ সমর্থকের বিরুদ্ধে রাজিহার ইউনিয়নের ছোট ডুমুরিয়া বাজারে আ.লীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে আদালত ও পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মুক্তিযোদ্ধার চার শতাংশ জমি দখল করে দোকানঘর নির্মানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখলকৃত জমির আনুমানিক মূল্য ২০ লাখ টাকা। এঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা
স্থানীয় লোকজন, বাজারের ব্যবসায়ী ও ভূক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জেল নং ১৪, এস,এ ৮৫নং খতিয়ানের ৬৮নং দাগের ৫৪ শতাংশ জমির পৈত্রিক সূত্রে মালিক আগৈলঝাড়া উপজেলার ছোট ডুমুরিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত মো. মোজাম্মেল হক খান ও সহদর মো. সিরাজুল হক খান। মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হক খানের বড় ভাই মো. সিরাজুল হক খান জানান, তার বাবা মো. গোলাপ খান ১৯৪৯ সালে ছোট ডুমুরিয়া গ্রামের বিপিন বিহারীরর পুত্র হরলাল দে ও অন্য দা চারন দে তার কাছে ৫৪ শতাংশ জমি সাবকবলা দলিলমূলে ক্রয় করেন। পরবর্তিততে তারা উত্তরাধিকার সূত্রে ওই জমির মালিক হিসেবে গত ৬৯ বছর ধরে জমি ভোগ দখল করে আসছেন। হাল জরিপে জমি তাদের নামে রেকর্ডভূক্ত হয়।
মৃত মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক খানের পুত্র মো. মেজবাউল হক খান (৪৫) অভিযোগ করে বলেন, গত ৪ আগষ্ট আগৈলঝাড়া উপজেলা শ্রমিকলীগের নেতা শাহাদাত কাজী ও রাজিহার ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস তালুকদারের তিন মামাতো ভাই আ.লীগ কর্মি মো. রিন্টু (৪৭), মো. টিটিু (৪২) ও মো. রিটু (৩৭) আমার ভোগ দখলীয় সম্পত্তিতে আ.লীগের কার্যালয়ের একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। পরের দিন ওই জমিতে দোকানঘর উত্তোলনের কাজ শুরু করেন। আমি ও আমার ছোট ভাই তোজাম্মেল হক খান কাজে বাধা দিলে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। নিরুপায় হয়ে গত ৫ আগষ্ট বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেড আদালতে মামলা দায়ের করে জমিতে অবৈধ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করি। আদালতে জমিতে অবৈধ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ শান্তি শৃংখলা বজায় রেখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগৈলঝাড়া থানাকে নির্দেশ দেন। পুলিশ ও আদালতের নিষধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মান চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিক লীগ নেতা ও আ.লীগ কর্মিরা। জবরদখল করে নেওয়া জমির মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা।
আগৈলঝাড়া থানা উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মো. সরোয়ার বশির জানান, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরে গত ৮ আগষ্ট জমিতে অবৈধ নির্মানসহ কাজ বন্ধ করে শান্তি শংখলা নিশ্চিত করতে অভিযুক্তদের নোটিশ প্রদান করে ১২ আগষ্ট্রের মধ্যে জমির মালিকানা কাগজপত্র নিয়ে থানায় হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়। শাহাদাত কাজীসহ দখলদাররা নোটিশ পাওয়ার পরেও থানায় হাজির হননি
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ডুমুরিয়া (ভাল্লুকসি) বাজারের পশ্চিমপ্রান্তে ব্রিজ সংলগ্ন প্রায় এক শতাংশ জমিতে একটি নুতন ঘর উত্তেলন করা হচ্ছে। ঘরটির ষ্ট্রাকচারের কাজ প্রায় শেষ এবং চালে টিনি লাগানো বাকি। নির্মানাধীন ঘরের সংগে দুই পাশে দুটি সাইনবোর্ড ঝুলছে। তাতে লেখা আছে, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাজিহার ইউনিয়ন ও ৫নং ওয়ার্ড ও অঙ্গ সংগঠনের কার্যালয়। স্থানীয় মেহেদী হাসান খান, জাকারিয়া কিবরিয়া, মো. মাইনুল খান জানান, জমির বৈধ মালিক মৃত মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক খানের পুত্র মো. মেজবাউল হক খান ও তার ভাই। সম্পূর্ন অবৈধভাবে ক্ষমতার জোরে দখল করা হয়েছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধ মো. মোস্তফা হাওঠাদার (৭৭) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অধিকার আদায়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। সত্য প্রকাশ করতে ভয় করি না। গত ৬০/৭০ বছর ধরে ওই জমি মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক খান ও তার পুত্ররা ভোগ দখল করে আসছে এবং তারাই বৈধ মালিক । জমি দখলমুক্ত করতে তিনি প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. শাহাদাত কাজী বলেন, জমি এক সময় তাদের ছিল বর্তমানে কাগজপত্রে সরকারের নামে রেকর্ড হয়েছে। তাই সরকারি জমিতে দলের কার্যালয় নির্মান করছি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে নয়। মো. রিন্টু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ও আমার ভাইয়েরা কারো জমি দখল করিনি। আমাদের বৈধ সম্পত্তিতে দোকান ঘর নির্মান করেছি। অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। এ প্রসঙ্গে রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আগৈলঝাড়া উপজেলা সেম্বচ্ছসেবকলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস তালুকদার বলেন, আমার মামাতো ভাইয়েরা কোন দখলে জড়িত নাই। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আ.লীগ কার্যালয় নির্মান প্রসঙ্গে বলেন, ওই জমি সরকারি, আর সরকারি জমিতে যে কেউ দখল করে ভোগ করতে পারে।