গৌরনদী
জমে উঠেছে দক্ষিনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ কসবা গো- হাট, দেশী গরুর আমদানি ও চাহিদা দুটোই বেশী
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ শত বছরের বেশী পুরানো ও দক্ষিনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গরুরহাট বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ঐতিহ্রবাহী কসবা গো-হাট জমে উঠেছে। এ বারে হাটে দেশী গরুর আমদানি ও চাহিদা দুটই বেশী। কয়েকদিনে বেচা বিক্রি করে ক্রেতা-বিক্রেতারা বেজায় খুশি। নিজেদের সামর্থে পছন্দের গরু কিনতে পারায় ক্রেতারাও খুশি। গতকাল বৃহস্পতিবার গো-হাটে ছিল উপচে পড়া ভীড়।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয় কেতাব আলী (৯২)সহ প্রবীন গরু ব্যবসায়ীরা জানান, গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের প্রায়াত জনৈক মোচন খান, পবন খান, গণি মুন্সী, জহুর আলী খান, কাসেম খানসহ স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ঢাকা- বরিশাল মহাসড়কের পাশে ও আড়িয়াল খাঁর শাখা পালরদী নদীর তীরবর্তি স্থানে গৌরনদীর কসবায় শাহ্ বংশের পরিত্যক্ত ভিটায় (বর্তমানে সরকারি সম্পত্তি) ১৯১২ সালে কসবা গো-হাট প্রতিষ্ঠিত করেন। সড়ক পথ ও নৌ-পথে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় এ গো-হাটটি দক্ষিনাঞ্চলের সর্ব বৃহৎ গো-হাটে পরিনত হয়।
দক্ষিনাঞ্চেলের ২২ জেলার মধ্যে শত বছরের পুরানো এতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ গরুরহাট হচ্ছে বরিশালের গৌরনদী পৌর সদরে কসবা গো-হাট। প্রায় সহ¯্রাধিক শতাংশ জায়গা নিয়ে কসবা গো-হাট। এই গো-হাটই হচ্ছে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের নির্ভরযোগ্য ও সর্ববৃহৎ গো-হাট। এ হাটে দক্ষিনাঞ্চলের বরিশাল, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালি, ঝালকাঠি, যশোর, চাঁদপুর, খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্ঠিয়া, নোয়াখালী, লহ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রামসহ ২২টি জেলার পাইকারী গরু ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসেন ব্যবসার জন্য। এসব জেলার ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীরাও এখান থেকে গরু নিয়ে নিয়ে নিজ নিজ জেলা উপজেলায় ব্যবসা করে আসছেন। গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাক ও ট্রলারে হাটে গরু আসতে থাকে। কসবা গো-হাটের ইজারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও ব্যবসায়ী, গরু পরিচর্চা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগ, খন্ড খালিন বিনিয়োগসহ গৌরনদী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার লোক তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন এ হাটের থেকে। এছাড়া অন্যান্য জেলার পাশাপাশি এ হাটে যশোর জেলার ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশী আসেন। যশোর নোয়াপাড়া এলাকা থেকে ৫/৭ হাজার ব্যবসায়ী এ হাটে ব্যবসা করতে আসেন। বিভিন্ন চড়াই উৎড়াই পার করে আজও নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়ে চালু রয়েছে অতি পুরানো এ গো-হাটটি।
স্থানীয়রা জানান, শত বছর ধরে এ গো-হাটটি প্রতি বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক হাট হিসেবে গরু বেচাকেনা করা হয়ে থাকে কিন্তু প্রতি বছর ঈদুল আযহা উপলক্ষে এক মাস আগ থেকে নিয়মিত বসে। ঈদের আগে আর মাত্র ৬দিন রয়েছে। হাটের ইজারার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন জানান, এ বছর হাটের শুরুতেই দেশী ও খামারী গরুর ব্যাপক আমদানী হয়। দেশী গরুর ক্রেতাও বেশী। গরু পছন্দ অনুযায়ী দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় ক্রেতারা খুবই খুশি। গতকাল বৃহস্পতিবার বাজারে খুচরা ও পাইকারী ও ঈদের ক্রেতা বিক্রেতাদের ব্যপক সমাগম ঘটে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কসবা গো-হাটে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গরুর হাটে তিল ধারনের ঠাই নাই। এবারে হাটে দেশী ও খামারী গরুর আমদানি প্রচুর। পাশাপাশি রয়েছে ভারতীয়, নেপালী গরু। তবে ক্রেতাদের কাছে দেশী গরুর চাহিদা বেশি। আমদানি বেশী হওয়ায় দাম স্বাভাবিক বলে ক্রেতারা জানান। এসময় গরু ব্যবসায়ী বাবুল খান(৬০), মোতালেব হোসেন(৫৫), জাকির সরদার(৫২)সহ কয়েকজন জানান, এবারে শুরু থেকেই বেচাকেনা খুবই ভাল। বেশী বেচাকেনায় ভাল মুনাফায় খুশি তারা। এবারে হাটের নিরাপত্তা নিয়েও তারা সন্তোস প্রকাশ করেছেন। নোয়াপাড়া থেকে এ হাটে আসা গরু ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন (৪৫) বলেন, আমি ২৫টি গরু নিয়ে এসেছি এবারে বেচাবিক্রি ভাল হওয়ায আশা করি বাকি ৫দিনে সব কটা বিক্রি হয়ে যাবে। ফেনীর গরু ব্যবসায়ী জব্বার সরদার (৪৩) জানান, তিনি গত ২০ বছর ধরে এ হাটে ব্যবসা করতে গরু নিয়ে আসেন। প্রতি বছর প্রথম দিকে বসে থাকতে হয় শেষ দিকে বেচাবিক্রি হয় কিন্তু এবারে প্রথম থেকেই বেচাবিক্রি ভাল।
হাটে আগত ক্রেতা আমিনুল ইসলাম (৩৫), কবির উদ্দিন(৩২), জামিলুর রহমান(৫০)সহ অনেকেই জানান, প্রতিবছর হাটে কয়েকদিন ঘোড়াঘুড়ি করে গুরু কিনতে হয়। এবারে হাটে এসে প্রথম দিনই গরু কিনেছি। তালেব সরদার জানান, গতকাল গরুর বাজার দেখতে এসেছিলাম কিন্তু দাম ভাল থাকার গরু কিনে নিলাম। একই কথা জানান, ক্রেতা আরিফুর রহমান, শওকত হোসেন, আব্দুস সালামসহ অনেকেই। জমে উঠেছে কসবা গরুর হাট। ব্যাবসায়ী আ. রফিক মোল্লা (৫৫) জানান, এবারে বাজারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার এবং এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার মাঝারি সাইজের গরু সবচেয়ে বেশী বিক্রি হচ্ছে। সাড়ে তিন ও চার লক্ষ টাকার গরু বাজারে থাকলে তা বিক্রি কম। গরু কিনে বাড়ি ফেরার পথে কথা হয় কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে তারা সকলেই বলেন, বর্তমানে বাজারের অবস্থা খুবই ভাল, পছন্দের গরু কিনতে কোন সমস্যা নেই।
ইজারাদার আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার (৬৮) জানান, বেচাকেনায় বেজায় খুশি ক্রেতা বিক্রেতারা। দাম অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সামর্থের মধ্যে কিনতে পারছেন আগত ক্রেতারা। প্রতিদিন ১০/১২টি বালামি নৌকা ও ২০/২৫াট ট্রাকে গরু আমদানি হচ্ছে এবং সহ¯্রাধিক গরু বিক্রি হচ্ছে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ,এন,ও) খোলেদা নাসরিন বলেন, দক্ষিনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গো-হাটে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও পশু পরীক্ষা নিরীক্ষারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।