গৌরনদী
উজিরপুরে সাড়ে চার মাস পর কবর থেকে গৃহবধূর লাশ উত্তোলন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের খোলনা গ্রামে নিহত হওয়ার প্রায় সাড়ে চার মাস পর কবর থেকে বন্যা আক্তার(২৬) নামের এক গৃহবধূর লাশ উঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে বিকেলে দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড ও উজিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) রুম্পা সিকদার উপস্থিতে লাশ উঠনো হয়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ গৃহবধূকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্বামী শ্বশুর বাড়ির লোকজন তরিঘড়ি করে দাফন করে । গতকাল সোমবার ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে নিহতের বাবার বাড়ি আগৈলঝাড়ায় দাফন করা হয়।
উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাফর ইকবাল জানান, হত্যা মামলার বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক অনুতোষ চন্দ্র বালা গত ২৫ মে নিহত গৃহবধূর লাশের ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গতকাল রোববার বিকেলে গৃহবধূ বন্যা আক্তারের লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) রুম্পা সিকদার উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুর প্রায় চার মাস ১৮ দিন পরে নিহত গৃহবধূর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হল।
মামলার বিবরন, স্থানীয় লোকজন ও নিহতের স্বজনরা জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের ফুলশ্রী গ্রামের মৃত আজগর আলী মৃধার কন্যা বন্যা অক্তার(২৬)র সামাজিক মতে ২০০৭ সালে উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের খোলনা গ্রামের মোশারফ হোসেনের পুত্র মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে স্বামী নজরুল ইসলাম ব্যবসা করতে স্ত্রী বন্যার বাবার বাড়ি থেকে ধার বাবত পাঁচ লক্ষ টাকা আনার জন্য চাপ দেন।
নিহতের মা মুকুল বেগম(৩৫) জানান, জামাতা নজরুল ইসলামের টাকা দাবিকে কেন্দ্র করে মেয়ে বন্যার সংসারে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। পরবর্তিতে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে দুই বছরে ফেরত দেয়ার শর্তে ধার বাবত জামাতা নজরুলকে তিন লক্ষ টাকা দেয়া হয়। টাকা নেয়ার পরে দুই বছর পার হয়ে গেলে নজরুল টাকা ফেরত না দেয়ায় বন্যা (নিহত) স্বামী নজরুল ইসলাম ও শ্বশুর মোশারফ হোসেনকে টাকার জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে বন্যার সঙ্গে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে চরম বিরোধ তৈরী হয়। গত অক্টোবর (২০১৭) মাসে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে দেবর রফিক হাওলাদার(২৮) বন্যাকে মারধর করলে উজিরপুর থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। এসময় পুলিশ দেবর রফিক হাওলাদারকে আটক থানায় নিয়ে আসলে আর নির্যাতন করবে না মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। গত জানুয়ারি মাসে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্বামী নজরুল ইসলাম বন্যাকে বেদমভাবে নির্যাতন করে। এসময় বন্যা থানায় অভিযোগ দিলে স্বামী নজরুলকে পুলিশ আটক করে। তখন স্বামী নজরুলও মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়া পান। এতে স্বামী, শ্বশুর ও দেবর ক্ষিপ্ত হয়ে লিপিকে পুড়িয়ে হত্যা হুমিক দেন। হুমকির ঘটনায় থানায় একটি সাধারন ডায়রী করা হয়।
বাদি লিপি আক্তার মামলায় উল্লেখ্য করেন, গত ২১ মার্চ ঝগড়া ঝাটির এক পর্যায়ে বন্যার দেবর রফিক হাওলাদার(২৮), রবিউল হাওলাদার(২৫) স্বামী নজলুল ইসলাম(৩২) শ্বশুর মোশারফ হোসেন(৫০) বন্যা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন করে । নির্যাতনে এক পর্যায়ে বন্যা অজ্ঞান হয়ে পড়লে মারা গেছে ভেবে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন ঘটনা ধামাচাপা দিতে বন্যার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। বন্যার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে ২২ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে পাঠান। ২৫ মার্চ বন্যা মারা যান। ২৬ মার্চ উজিরপুর থানায় হত্যা মামলা দিতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। উজিরপুর থানা মামলা না নেওয়ায় গত ১৮ এপ্রিল নিহতের বোন লিপি আক্তার বাদি হয়ে বন্যার স্বামী, শ্বশুর ও দেবরসহ ৬ জনকে আসামি করে বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন।