গৌরনদী
উজিরপুর সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন, ঝুকিতে সাইক্লোন সেন্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের দাসেরহাট, কমলাপুর, আশোয়ার, চথলবাড়ি, নারকেলী, চৌধুরীর হাট, কালিরবাজার গ্রামে গত এক মাসে অব্যহত ভাঙ্গনের প্রায় শতাধিক বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে বরিশাল এলজিইডি কর্তৃক তিন কোটি ব্যায়ে নির্মিত আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি (সাইক্লোন সেন্টার) যে কোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় লোকজন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও সংশ্লিষ্টরা জানান, উজিরপুর উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত বরিশালের ঐতিহ্যবাহি সন্ধ্যা নদী। দীর্ঘ দিন যাবত সন্ধ্যা নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের দাসেরহাট, কমলাপুর, আশোয়ার, চথলবাড়ি, নারকেলী, চৌধুরীর হাট, কালিরবাজার ভেড়ীবাঁধ ও শিকারপুরসহ এ উপজেলার প্রায় ১০ কিলোমিটর এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি সময়ে নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে গুঠিয়া ইউনিয়নের রৈভদ্রাদী, দাসেরহাট, হানুয়া, আশোয়ার গ্রাম। গত এক মাসে নদীর তীব্র ¯্রােতে গুঠিয়া ইউনিয়নের চরমলঙ্গা থেকে আশোয়ার পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় অব্যাহত ভাঙ্গনে উজিরপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে রৈভদ্রাদী, দাসেরহাট, হানুয়া, আশোয়ার গ্রামের বিশাল অংশ। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে শত বছরের পুরানো রাস্তাঘাট, স্কুল-মসজিদ, বাড়ি, ভেরীবাঁধ ও ফসলী জমি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যা নদীতে জোয়ারের পানির চাপ ও তীব্র ¯্রােত থাকায় নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে গুঠিয়া ইউনিয়নের দাসেরহাট খেয়াঘাট সংলগ্ন বাজারের ৫/৭টি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে হয়ে গেছে এবং ভাঙ্গনে আওতায় নদীর বুকে ঢলে পরে আছে আরো বেশ কয়টি দোকান ঘর। এছাড়া চৌধুরীর হাট বাজারটিও ভাঙ্গন কবলিত। অপরদিকে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে গুঠিয়া ইউনিয়নের হানুয়া, কমলাপুর, দাসেরহাট, বান্না ও আশোয়ার গ্রামের বিস্তীর্ন এলাকার ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন কবলিত নদীর গ্রাসের অপেক্ষায় রয়েছে বরিশাল এলজিইডি কর্তৃক তিন কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত আশোয়ার গ্রামের সাইক্লোন শেল্টার (আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।
উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত আশোয়ার গ্রামের (৪০), মো. কাওসার (২২) ও নাঈম সিকদার(৩৫)সহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এ এলাকা ভাঙ্গন কবলিত হলেও ভাঙ্গনরোধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা। আমাদের অনেকেরই পাকা বাড়ি ঘর সহায় সম্পদ ছিল কিন্তু আজকে আমরা নিঃস্ব। কেউ কেউ ভিটেমাটি হারিয়ে এলাকা ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ভাঙ্গনরোধে পদক্ষেপ নেয়াতো দূরের কথা আমাদের খবর নেননি কেউ। সরকারি অর্থে নির্মিত লঞ্চঘাটের ছাত্রী ছাউনীটি নদীতে বিলীন হয়ে গছে। এতে চরম দূর্ভোগে পরেছে যাত্রীরা। বাড়ি ঘর, বাজার ঘাট, দোকানপাট ফসলীসহ বিস্তীর্ন এলাকার ভাঙ্গনে প্রায় দুই সহ¯্রাধিক মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে। আশোয়ার গ্রামের তালেব হোসেন জানান, জমাজমি বাড়িঘরসহ তার সব কিছুই ছিল । সন্ধ্যা নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে বর্তমানে তাকে উপজেলা সদরে ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। গত এক মাসে আশোয়ার গ্রামের এসাহাক হাওলাদার, মো. সেলিম হাওলাদার, কালাম হাওলাদার, নুরুল হক রাঢ়ী, সুলতান খান, মানিক বালীসহ প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ জাহাঙ্গীর হোসেন, সাফিয়া বেগম বলেন, ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে মোরা এ্যাহন ঠিকানাছাড়া সাওরে ভাসতেছি। পোলাপান লইয়া দুরাবস্থায় আছি। আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা নদী ভাঙ্গনের কবলে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন অবস্থানে রয়েছি। ভাঙ্গন ভবনের একদম কাছাকাছি যে কোন সময় বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গুঠিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গনেগুঠিয়া ইউনিয়নের বড় একটি অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে দাসেরহাট, বান্না, কমলাপুর ও আশোয়ার ভাঙ্গন চলছে। এ বিষয়টি লিখিতভাবে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে কিন্তু ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। ভাঙ্গন রোধে দ্রæত পদেক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বলেন, আমার কাছে কেউ লিখিতভাবে জানায়নি তারপরেও খোজ নিয়ে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হেব। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু সাঈদ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রকল্প গ্রহন করে ভাঙ্গন রোধ করতে হলে অর্থের প্রয়োজন । বাজেট পাঠানো হয়েছে অর্থ বরাদ্ধ হলে সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী দিয়ে প্রকল্প তৈরী করে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। এলজিইডি কর্তৃক তিন কোটি ব্যায়ে নির্মিত আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি (সাইক্লোন সেন্টার)ভাঙ্গন কবলিত যে কোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।