গৌরনদী
প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধিকে তথ্য প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ দিয়ে হয়রানীর পায়তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ দৈনিক প্রথম আলোর গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহিরেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন ২০১৩ ৫৭(২) ধারায় অভিযোগ দিয়ে হয়রনীর পায়তারা করেছে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতা। গৌরনদী উপজেলার ওই প্রভাবশীলী আ.লীগ নেতা স্কুল ছাত্রীকে প্রভাবিত করে সাংবাদিক জহিরের বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করান। গত রোববার গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) বাদির অভিযোগপত্র সাধারন নথিভূক্ত করে নিয়মিত মামলাটি রুজু করতে পুলিশ হেড কোয়াটারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন।
স্থানীয় লোকজন, সাংবাদিক ও পুলিশ জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা কমিটির এক ছাত্রলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য কর্তৃক এক স্কুল ছাত্রী ধর্ষন ও ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি দিয়ে আটকে রাখার খবর এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বত্র আলোচিত হয়। বিষয়টি জানার পরে গৌরনদীতে কর্মরত স্থানীয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স, অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকার সাংবাদিকরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে ওই বাড়িতে যান।
প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম জহির জানান, বিষয়টি জানাতে পেয়ে গত ২৯ জুন সকালে তিনি ও গৌরনদী রিপোটার্স ইউনিটির সাধারন সম্পাদক বেলাল হোসেন ওই বাড়িতে যান। সেখানে স্কুল ছাত্রীর বাবা ও মায়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। স্কুল ছাত্রীর বাবা ও মা তাদেরকে জানান এ ধরনের ঘটনার কোন সত্যতা নেই। এ কথা শুনে তিনি ফিরে আসেন এবং তিনি কোন সংবাদ প্রকাশ করেননি। পরের দিন ধর্ষক ছাত্রলীগ নেতা ও ইউপি সদস্যের প্রতিপক্ষ লোকজন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপাক প্রচার করে এবং কিছু জাতীয় দৈনিক ও বরিশাল থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় এ নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক জানান, পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় পরে গত রোবাবার স্কুল ছাত্রী বাদি হয়ে গৌরনদী মডেল থানায় প্রথম আলোর সাংবাদিক জহিরের নাম উল্লেখ করে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। অথচ যে সকল পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বা যে সকল ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্কুল ছাত্রীর নাম পরিচয় উল্লেখ করে পোষ্ট দিয়েছে অভিযোগপত্রে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
বাদি মামলায় উল্লেখ্য করেন, গত ২৯ জুন প্রথম আলোর প্রতিনিধি জহির বাদিনির বাড়িতে গিয়ে তার(বাদির) অনুপুস্থিতিতে স্বাক্ষীদের (স্কুল ছাত্রীর বাবা মা) সঙ্গে কথা বলেন এবং কোন সত্যতা না পেয়ে ফিরে আসেন। তদুপরি বিশেষ মহলের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে নিজের হলুদ সাংবাদিকতার ধারা অক্ষুন্ন রেখে এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে মিথ্যা সংবাদ করে নিজের অনুগতদের দিয়ে ফেইসবুক ও পত্রিকায় প্রকাশ করিয়েছে।
প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহির অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাটির ভিকটিম ও তার পরিবার স্বীকার না করায় আমি কোন সংবাদ প্রকাশ করি নাই। যারা ফেইসবুক ও পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেছে বাদি মামলায় তাদের অভিযুক্ত করেনি। অথচ আমার নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। সাম্প্রতি সময়ে প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে আমাকে জব্দ ও হয়রানী করতে অবশেষে স্কুল ছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও প্রভাবিত করে তাকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করিয়েছে। সাংবাদিক জহিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার গৌরনদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য যুগান্তর প্রতিনিধি মো. আসাদুজ্জামান রিপন, ইত্তোফাক প্রতিনিধি ও এটিএন বাংলার গৌরনদী প্রতিনিধি মো. জামাল উদ্দিন, দৈনিক জনকণ্ঠের ষ্টাফ রিপোর্টার ও চ্যানেল এসএ প্রতিনিধি খোকন আহম্মেদ হীরা, ইনকিলাব প্রতিনিধি বদরুজ্জামান খান সবুজ, খবরপত্রে প্রতিনিধি মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী বাবু, দৈনিক ভোরের পাতার প্রতিনিধি জামিল মাহমুদ, আনন্দ টিভি’র গৌরনদী প্রতিনিধি মোল্লা ফারুক হাসান, দৈনিক ন্যায় অন্যায়ের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি হাসান মাহমুদ, স্বাধীন সংবাদের প্রতিনিধি পার্থ হালদার, দৈনিক বরিশালের কাগজের প্রতিনিধি ডাক্তার মনোতোষ সরকার, দৈনিক বরিশালের কন্ঠের প্রতিনিধি পরিমল বারিক, সাংবাদিক বিনয় কৃষ্ণ শিয়ালীসহ উপস্থিত সাংবাদিকরা। সাংবাদিক জহিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরে ক্ষোভ প্রকাশ ও তীব্র প্রতিবাদ জানান বক্তারা। এ ছাড়া প্রতিবাদ জানান গৌরনদী রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি মো. খায়রুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক বেলাল হোসেনসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানান।
অভিযোগের ব্যাপারে অভিযোগকারী বাদির কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পরবর্তিতে বাদির পিতার কাছে সাংবাদিক জহিরের বিরুদ্ধে মিথা অভিযোগ দায়ের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. আফজাল হোসেন বলেন, বাদির অভিযোগপত্র সাধারন ডায়রী হিসেবে নথিভূক্ত করে পুলিশ হেড-কোয়াটারের অনুমতি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে নিয়মিত মামলা রুজু করা হবে।