গৌরনদী
উজিরপুরে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ধর্ষনের চেষ্টা মিথ্যা মামলা দিতে শারমিন নামে এক নারীকে বাধ্য করলেন ওসি
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার স্থানীয় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ধর্ষনের চেষ্টা মিথ্যা মামলা দিতে শারমিন নামে এক নারীকে বাধ্য করলেন উজিরপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওমি) শিশির কুমার পাল। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে মামলা না দিলে তাকেই পতিতা বৃত্তির অভিযোগের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ভয়ভীতি দেখানোর পরে বাধ্য হয়ে ওই নারী শুক্রবার উজিরপুর থানায় সাংবাদিকের বিরদ্ধে ধর্ষনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি হলেন জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্ত ও বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রথম সকালের উজিরপুর প্রতিনিধি মো. জহির খান(৩০)। সাংবাদিককে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদের জেরে ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিককে জব্দ করতে ওসি শিশির কুমার পাল এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্থানীয়রা সাংবাদিকরা জানান।
উজিরপুর উপজেলার উজিরপুর গ্রামের মো. বাবুল খানের পুত্র ও জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্ত ও বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রথম সকালের উজিরপুর প্রতিনিধি মো. জহির খান অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সময় উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পালের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্যের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ওসি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। সর্বশেষ গত ২৫ মে দৈনিক প্রথম সকালে “উজিরপুরে পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীর সখ্যতা” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে ওসি শিশির কুমার পাল আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার নিকটআত্মীয় উজিরপুর উপজেলার পূূর্ব ধামসার গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিব কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার হোসেন মোল্লার বাড়িতে বেড়াতে যাই। রাত ১টার দিকে ওসির ভাড়াটে এলাকার ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগ কর্মি রুমি শরীফ(২০), আমিনুল ইসলাম(২১), কাইয়ুম রারি(২২) ও তৌহিদ হাওলাদার(২২)সহ ১৫/২০ সন্ত্রাসী ওই বাড়িতে গিয়ে ডাক চিৎকার দিয়ে হামলা চালায়। এবং ঘরে অসামাজিক কাজ হচ্ছে বলে দরজা খুলতে বলেন। এ সময় দরজা না খুললে দরজা ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দিলে আমি নিজেই মুঠোফোন থেকে উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমীর হোসেনকে বিষয়টি জানান এবং এ পরিস্থিতিতে সাহায্য চান। খবর পেয়ে উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) আমীর হোসেন একদল পুলিশ নিয়ে রাত সোয়া ১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছে আমাকে এবং আমার আত্মীয় নাজমুন নাহার(৪৫) ও তার বিবাহিতা কন্যা দুই সন্তানের জননী শারমিন আক্তার(২৪)সহ ৫জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় নিয়ে আসার পরে আমার বিরুদ্ধে ধর্ষনের চেষ্টা মামলা দেওয়ার জন্য ওই পরিবারের সদস্য নাজমুন নাহার ও শারমিন আক্তারের উপর ওসি শিশির কুমার পাল চাপ সৃষ্টি করেন। মামলা দিতে পরিবারটি রাজি না হলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মা নাজমুন নাহার ও মেয়ে শারমিন আক্তারকে থানায় আটকে রাখেন। এতেও রাজি না হলে দুপুরে শারমিন আক্তারকে পতিতাবৃৃত্তির অভিযোগে মামলা দিয়ে হাজতে পাঠানোর হুমকি দিয়ে ভয়ে দেখান ওসি শিশির কুমার পাল। এক পর্যায়ে শারমিন আক্তারের কাছ থেকে এজাহারে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন।
মা নাজমুন নাহার অভিযোগ করে বলেন, সাংবাদিক জহির খান গত ৭/৮ বছর ধরে আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করেন এবং বিভিন্ন সময় বেড়াতে আসেন, সে আমার ছেলের মত । বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে এসে গাড়ি থেকে নেমে রাত ১টার দিকে আমার বাড়িতে আসে। বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার রুমি শরীফ(২০), আমিনুল ইসলাম(২১), কাইয়ুম রারি(২২) ও তৌহিদ হাওলাদার(২২)সহ ১৫/২০ সন্ত্রাসী বাড়িতে হামলা করে। এ সময় সাংবাদিক জহির খান পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাকেসহ আমাদের থানায় নিয়ে যায়। আমাদের ভয় ভীতি দেখিয়ে আমার মেয়েকে দিয়ে জহির খানের বিরুদ্ধে ধর্ষনের চেষ্টা মামলা দিতে বাধ্য করেছে। শারমিন আক্তার অভিযোগ করেন, পুলিশ সাংবাদিক জহির খানের বিরুদ্ধে মামলা করতে আমাকে চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে মামলা না দিলে আমাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে ধর্ষনের চেষ্টা এজাহারে আমার স্বাক্ষর নেন।
স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে বাঁচতে সাংবাদিক জহির পুলিশকে খবর দিল, আর পুলিশ সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে হুমকি দিয়ে শারমিন আক্তারকে বাধ্য করে মামলা রুজু করালেন। ওসি শিশির কুমার পাল প্রকাশিত সংবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে সাংবাদিক জহিরকে জব্দ করতে মিথা মামলা দিয়া জেল হাজতে পাঠাল। পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠ নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে উজিরপুর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, আমি মামলা দিতে কাউকে বাধ্য করি নাই, ভিকটিম নিজেই ধর্ষনের চেষ্টার মামলা দিয়েছে।