প্রধান সংবাদ
নির্বাচনের জ্বরে কাঁপছে গোটা বরিশাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ ॥ প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, নির্বাচনী আচারন বিধি লঙ্ঘন, সমর্থকদের ওপর হামলা কিংবা হুমকির অভিযোগের মধ্যদিয়ে চলছে বরিশালের ১০ উপজেলার ৭৩ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের প্রচাপ্রচরনা ও গণসংযোগ। প্রথম দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নৌকা ও ধানের শীর্ষের হাওয়ায় এখন নির্বাচনী জ্বরে কাঁপছে ৭৩টি ইউনিয়ন।
সূত্রমতে, প্রার্থীরা দলীয় মনোয়ন পাওয়ার পর থেকে উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, দোয়া-মিলাদ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরে গিয়ে ভোটারদের দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে যারা নতুন মুখ হিসেবে মনোয়ন পেয়েছেন তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থণাসহ বর্তমান চেয়ারম্যানদের বিগত পাঁচবছরের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতীত চরিত্রের চিত্র তুলে ধরছেন। এছাড়া বর্তমান অধিকাংশ চেয়ারম্যান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। একই অবস্থা বিরাজ করছে সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদের প্রার্থীদের বেলায়। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যতিত অন্যসব দলের কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আগামী ২২মার্চের নির্বাচন সুষ্ঠ হওয়া নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অধিকাংশই আ’লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তারা যেকোনমূল্যে সুষ্ঠ ভোট গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন। বিএনপি কিংবা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রসাশনকে নিরপেক্ষ থেকে সাধারণ ভোটারদের ভোট প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়ার দাবি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০ উপজেলার ৭৪টি ইউনিয়নের মধ্যে একটিতে আ’লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ৭৩টি ইউনিয়নে ৩৩৭জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রার্থনায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত ইউপি সদস্য পদের প্রার্থীদের চলছে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারনা। প্রতিদিনই একাধিক উঠান বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন প্রার্থীরা। অভ্যন্তরীণ সকল বিভেদভুলে স্থানীয় এ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীককে আ’লীগ পেস্টিজ ইস্যু মনে করে এক কাঁতারে মিলিত হয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। সেক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা। প্রচার প্রচারনায় তারা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন। এখনও বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের কোন নেতৃবৃন্দকে দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারনায় মাঠে দেখা যায়নি। সূত্রমতে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ক্রমেই জেলার সর্বত্র নৌকার জোয়ার বইতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে গৌরনদীর মাহিলাড়া ইউনিয়নের বিল্বগ্রাম বাজারে নৌকা মার্কার সমর্থনে অনুষ্ঠিত উঠান বৈঠকে জেলার দু’বারের শ্রেষ্ঠ পদক প্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও নৌকা মার্কার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা বরিশাল সৈকত গুহ পিকলু তার সময়কার বিগত পাঁচ বছরের সফলতা ও ব্যর্থতার সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, পরবর্তীতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাকে পুনরায় নির্বাচিত করলে তিনি পুরো ইউনিয়নবাসীর আর্থ-সামাজিক ও ভৌতঅবকাঠামোর উন্নয়নসহ মাহিলাড়া ইউনিয়নকে পিংঙ্ক ভিলেজে রুপান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। বৈঠক শেষে কেন্দ্র পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। একইদিন ভোর থেকে গণসংযোগ করেন সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রবীণ আ’লীগ নেতা মোঃ ফারুক মোল্লা। ওইদিন বিকেলে তিনি হোসনাবাদ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণের অনুষ্ঠিত উঠান বৈঠকে বলেন, আগামী ২২ মার্চের নির্বাচনে আমি বিজয়ী হতে পারলে গোটা ইউনিয়নকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল ইউনিয়নে রূপান্তরিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, সর্বত্রই নৌকার গণজোয়ার দেখে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও তার সমর্থকদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫মার্চ সন্ধ্যায় প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর সমর্থক আজিজ মোল্লা ও রনো ঋষির নেতৃত্বে তাদের ১০/১৫জন সমর্থকেরা হামলা চালিয়ে আমার সমর্থক নাসির মোল্লা গংদের পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরবর্তীতে হামলার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য রনো ঋষিসহ ধানের শীর্ষ প্রার্থীর লোকজনে নাটকীয়ভাবে নিজেদের দুটি ঘরে নিজেরাই হামলা চালিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যে নাটক সাজিয়েছিলো। যা পরবর্তীতে পুলিশী তদন্তে নাটক ফাঁস হয়ে যায়। তিনি (ফারুক মোল্লা) এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আরও বলেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আবারো এসব নাটক হতে পারে। তাই তিনি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তার প্রতিটি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর সমর্থকেরা যেন মিথ্যে নাটক না সাজাতে পারে সেইদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আ’লীগের পরিক্ষিত নারী নেত্রী লাবন্য আক্তার তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, তার ঘোড়া মার্কার সমর্থকদের আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী বিপুল দাস ও তার সমর্থকেরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নির্বাচনের আগেই স্ব-পরিবারে দেশত্যাগের হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও আগামী ২২মার্চ কেন্দ্র দখল করে ভোট পিটিয়ে নেয়ারও হুমকি অব্যাহতত রেখেছেন প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও তার সমর্থকেরা। তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে তিনি শংকা প্রকাশ করে বুধবার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বরাবরে আবেদন করেছেন। বৃহস্পতিবার দিনভর বাকেরগঞ্জের ভরপাশা ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব হারুন-অর রশিদ সিকদারের ধানের শীর্ষ মার্কার সমর্থনে গণসংযোগ করেছেন সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন খান। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার দশটি, মেহেন্দিগঞ্জের আটটি, উজিরপুরের সাতটি, বাকেরগঞ্জের ১৩টি, মুলাদীর ছয়টি, হিজলার চারটি, আগৈলঝাড়ার পাঁচটি, বানারীপাড়ার সাতটি, বাবুগঞ্জের ছয়টি ও গৌরনদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে আগামি ২২ মার্চ প্রথম দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৭৩টি ইউনিয়ন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত ৩৩৭জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।