গৌরনদী
গৌরনদীতে গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম /বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইল্লা গ্রামের গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবির এক নব-দম্পত্তির কাছে চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় নব-দম্পত্তি ও তার বন্ধুকে আটকে অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১২ হাজার টাকা পরিশোধ করা সত্বেও বাকি টাকা না দেয়ায় মিথ্যা অপহরন মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী ও পুলিশ জানান, কালকিনি উপজেলার খাসেরহাট গ্রামের মো. হেলাল বেপারীর পুত্র মানিক হোসেন বেপারী(২০) তিন মাস আগে উজিরপুর পৌরসভা সদরের মাদারসি মহল্লার নও-মুসলিম মুক্তা বেগম(১৮)কে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে স্বামীর বাড়িতেই উভয়ে বসবাস করেন। গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে মানিক হোসেন বেপারী তার স্ত্রী মুক্তা বেগমকে নিয়ে বন্ধু গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা গ্রামের মো. মজিবুর রহমানের বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
মো. মজিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোগে গ্রামের গ্রাম পুলিশ মো. হুমায়ুন কবির(৩৮) মোড় বাড়িতে আইয়া পুলিশ পরিচয় দিয়া দরজা খোলতে কন। দরজা খোলার সাথে সাথে হুমায়ুন কবির ভিতরে ঢুকে সন্ত্রাসী ষ্টাইলে ঘরের থাকা লোকজনকে মারধর ও ঘরের মালামাল তছনছ করেন। মুই বাধা দিলে মোরেও মারধর করে। এক পর্যায়ে ঘরের মধ্যে অবৈধ কাজ অইছে কইয়া মোর বন্ধু মানিক ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগমকে বেদমভাবে মারতে থাকে। পরবর্তিতে গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবির ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। না দিলে ঘরের সকলকে বেধে থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। পরে মোর মা ১২ হাজার টাকা নগত দিয়া বাকি টাকা পরে দিবে কইয়া মোরো ছাড়াইয়া রাহেন। মোর বন্ধু ও হের স্ত্রীরে থানায় নিয়ে যান। তিনি আরও বলেন, চকিদার গতকাল মঙ্গলবার মোর বাড়িতে আইয়া বাকি টাহা চায় তিন দিনের মধ্যে না দিলে মোরো জেলে ঢোকানের ভয় দেখায়।
মজিবুর রহমানের মা মরিয়ম বেগম(৫০) বলেন, চহিদার হুমায়ুন মোগো ঘরে আইয়া হগোলডিরে মারধর ও সন্ত্রাসী কাম করে। হ্যাশে (শেষে) টাহা চায়, না দিলে মোর পোলাসহ হগোলরো থানায় নেওয়ার ভয় দেহায়। মুই চহিদাররে ১২ হাজার টাহা দিয়া মোর পোলারে ছাড়াইয়া রাহি। পোলার বন্দু ও হের বউরে থানায় নিয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ইল্লা গ্রামের গফুর শরীফ(৪০) হালিম ঘরামী (৩৮) জানান, ডাক চিৎকার শুনে আমরা এসে বিষয়টি শুনি। নব-দম্পত্তিকে মারধর করতে চকিদার হুমায়ুনকে নিষেধ করি কিন্তু সে নিষেধ শোনেনি। এ সময় নব-দম্পত্তি গ্রাম পুলিশ হুমায়ুনের হাত পা ধরে কান্নাকাটি করলেও তাদের মারধর করতে দেখেছি।
অপহরন মামলার বাদি গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবির মামলায় উল্লেখ করেন, গ্রামবাসি এক ছেলে এক মেয়েকে আটক করে তাকে খবর দিলে তিনি এসে জানতে পারেন মেয়েকে অপহরন করে এখানে আটকে রেখেছে জনৈক মানিক ও তার বন্ধু মজিবুর। তাদের উদ্ধার করে থানায় সোপর্দ এবং এজাহার করি। পুলিশ জানায়, বর্তমানে আসামি মুক্তা বেগমের স্বামী মানিক হোসেন বেপারী জেল হাজতে রয়েছে এবং স্ত্রী মুক্তাকে সেইভ হোমে রাখা হয়েছে। মুক্তার বাবা অমূল্য চন্দ্র ঘোস মেয়েকে অস্বীকার করে বলেন, সে এখন আমার মেয়ে না, চার মাস আগেই তার সঙ্গে সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। এই নামে আমি কাউকে চিনি না। মানিক হোসেন বেপারীর বাবা মো. হেলাল বেপারী অভিযোগ করেন, গ্রাম পুলিশ মজিবরকে দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় আমার ছেলে ও ছেলের বউকে মারধর করা হয়ছে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ৫০ হাজার টাকা দাবি ও ১২ হাজার নেয়ার কথা অস্বীকার করে গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবির বলেন, কোন মেয়েকে আটকে রাখার খবর পাইয়া আমি উদ্ধার করে থানায় দিয়েছি কিন্তু আমি কোন অপহরন মামলা করি নাই। মামলার দন্তকারী কর্মকর্তা গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. মেহেদী হাসান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে গ্রেপ্তারকৃত মানিক ও মুক্তা স্বামী স্ত্রী এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর আলম সেরনিয়াবাত বলেন, চকিদারের চাঁদাবাজি হয়রানীর বিষয়টি জানার পরে গতকাল মঙ্গলবার তাকে লিখিতভাবে শোকজ করা হয়েছে।