গৌরনদী
পুলিশের বিরুদ্ধে উজিরপুরে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম /বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের খোলনা গ্রামে গৃহবধূ বন্যা আক্তার(২৬)কে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় উজিরপুর থানায় মামলা দিতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরবর্তিতে আদালতে মামলা করলে দুই লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার পায়তারা করেছে পুলিশ । এ ঘটনায় গত রোববার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দেন বাদি লিপি আক্তার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদিকে মিথ্যা মামলায় হয়রানীসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছে।
জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের ফুলশ্রী গ্রামের মৃত আজগর আলী মৃধার কন্যা বন্যা অক্তার(২৬)র সামাজিক মতে ২০০৭ সালে উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের খোলনা গ্রামের মোশারফ হোসেনের পুত্র মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে স্বামী নজরুল ইসলাম ব্যবসা করতে বাবার বাড়ি থেকে ধার বাবত পাঁচ লক্ষ টাকা আনার জন্য স্ত্রী বন্যাকে চাপ দেন।
নিহত বন্যার ছোট বোন সৌদি প্রবাসী লিপি আক্তার(২২) জানান, দুলাভাই নজরুল ইসলামের টাকা দাবিকে কেন্দ্র করে বোনের দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। পরবর্তিতে বোনের সুখের কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে দুই বছরে ফেরত দেয়ার শর্তে ধার বাবত দুলা ভাই নজরুলকে তিন লক্ষ টাকা দেন। লিপি অভিযোগ করে বলেন, তখও বুঝি নাই এই ধার দেয়া টাকাই আমার বোনের কাল হবে। এই টাকা আদায়ের জন্য আমার বোনকে জীবন দিতে হবে।
নিহতের মা মুকুল বেগম(৩৫) জানান, টাকা ফেরত দেয়ার দুই বছর পার হয়ে গেলে নজরুল টাকা ফেরত দেন নাই। আমার ছোট মেয়ে বন্যা টাকা ফেরত পেতে বোন বন্যাকে বললে বন্যা স্বামী নজরুল ইসলাম ও শ্বশুর মোশারফ হোসেনকে টাকার জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে বন্যার সঙ্গে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে চরম বিরোধ তৈরী হয় এবং বন্যাকে মাঝে মধ্যে মারধর করেন। গত অক্টোবর (২০১৭) মাসে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে দেবর রফিক হাওলাদার(২৮) বন্যাকে মারধর করলে উজিরপুর থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। এসময় পুলিশ দেবর রফিক হাওলঅদারকে আটক থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তিতে আর নির্যাতন করবে না মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। এর পর গত জানুয়ারি মাসে ঢাকায় থাকালীন সময়ে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্বামী নজরুল ইসলাম বন্যাকে বেদমভাবে নির্যাতন করে। এসময় বন্যা ঢাকার বাড্ডা থানায় অভিযোগ দিলে স্বামী নজরুলকে পুলিশ আটক করে। তখনও স্বামী নজরুল মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়া পান। এতে স্বামী, শ্বশুর ও দেবর ক্ষিপ্ত হন। লিপিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, তোকে এমন হাল করবো যে তোকে কেউ চিনতে পারবে না। রিপি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এ কথা বলার পরও বুঝিনি ওরা আমার মেয়েকে এভাবে পুড়িয়ে হত্রা করবে।
মামলায় বাদি লিপি আক্তার উল্লেখ করেন, গত ২১ মার্চ ঝগড়া ঝাটির এক পর্যায়ে বোনের দেবর রফিক হাওলাদার(২৮), রবিউল হাওলাদার(২৫) স্বামী নজলুল ইসলাম(৩২) শ্বশুর মোশারফ হোসেন(৫০) বন্যা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন করে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা গেছে ভেবে ঘটনা ধামাচাপা দিতে বন্যার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। বন্যার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে ২২ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে পাঠান। ২৫ মার্চ ঢাকা মেডিকেল থেকে রোগী রিলিজ করে দিলে বাড়ি ফেরার পথে বন্যা মারা যান। অভিযোগ সম্পর্কে স্বামী নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা হত্যা করিনি বন্যা নিজেই নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শ্বশুর মোশারফ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, কুপি থেকে আগুন লেগে বন্যা মারা গেছে।
বাদি লিপি অভিযোগ করেন, পরের দিন ২৬ মার্চ উজিরপুর থানায় মামলা দিতে গেলে মামলা নিতে তালবাহানা শুরু করে পুলিশ। উজিরপুর থানা মামলা না নিলে গত ১৮ এপ্রিল স্বামী, শ্বশুর ও দেবরসহ ৬ জনকে আসামি করে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে মামলা করেন। আদালতের বিচারক আসছে ১৬ মের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। বাদি আরো বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. জাফর ইকবাল প্রভাবশালী আসামিদের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। হত্যার ব্যাপারে তার সংগে কথা বলতে গেলে খারাপ আচরন করেন। এমন কি বাদি স্বাক্ষিদের জবানবন্দি গ্রহন না করে সঠিক তদন্ত ছাড়াই মনগড়া ও কাল্পনিক প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের পায়তারা করেছে। আমি বিষয়টি টের পেয়ে রিখিতভাবে আদালতে আবেদন করলে এসআই জাফর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মিথ্যা মামলায় হয়রনীসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছে। অভিযোগ সম্পর্কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. জাফর ইকবালের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাদি মামলার কোন স্বাক্ষী হাজির করতে পারে নাই। দূর্ব্যবহার ও হুমকির অভিযোগ সত্য নয়। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, থানায় কেউ মামলা করতে আসে নাই। আদালতে মামলা করেছে তদন্ত চলছে যথা সময়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে ।