গৌরনদী
গৌরনদীতে সরকারি খালে বহুতল ভবন নির্মানে ১২টি প্রকল্পে সেচ বন্ধ \ বোরো চাষ ব্যহত
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের মাহিলাড়া বাসষ্টাÐ সংলগ্ন সরকারি খালের মাঝখানে কৃষকলীগের স্থানীয় সভাপতি ও যুবলীগ নেতা বহুতল ভবন নির্মান কাজ শুরু করেন। ফলে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ও বাটাজোর ইউনিয়নের ১২টি সেকেÐারী সেচ প্রকল্পে পানি সরবারহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দুই হাজার একর জমির বোরো চাষ মারাত্মকভাবে ব্যবহত হয়ে প্রায় ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ ও প্রাইমারি সেচ প্রকল্প চালু করে বোরো চাষের পানি সরবারহ চালু রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার(ইউএনও)র কাছে আবেদন করেছেন ভূক্তভোগী চাষীরা।
স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের মাহিলাড়া বাসষ্টেÐের পশ্চিম পাশে ব্রিজের গোড়ায় বাঁধ দিয়ে প্রাইমারি সেচ প্রকল্প স্থাপন করে গত ১০/১২ বছর যাবত মাহিলাড়া ও বাটাজোর ইউনিয়নের ১২টি সেকেÐারী প্রকল্পে পানি সরবারহ করে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বোরোর আবাদ করে আসছেন কৃষকরা।
প্রাইমারি সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান জানান, চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতে গত জানুয়ারি মাসে তার প্রাইমারি প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবারহ শুরু করে মাহিলাড়া ও বাটাজোর ইউনিয়নের ১২টি সেকেÐারী প্রকল্পে পানি সরবারহ করেন। এতে দই্ ুহাজার একর জমিতে বোরো চাষের সুযোগ পান। গত ৮/১০ দিন আগে মাহিলাড়া ইউনিয়নের মাহিলাড়া বাসষ্টাÐ সংলগ্ন সরকারি খালের মাঝখানে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি ও মাহিলাড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ বয়াতি ও আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের যুবলীগের সদস্য ও সেরাল গ্রামের মো. জাকির হোসেন সেরনিয়াবাদ প্রাইমারি সেচ প্রকল্পের (মাহিলাড়া) বাঁধ কেটে দিয়ে সরকারি খালের মাঝখানে ৫তলা বহুতল ভবন নির্মান কাজ শুরু করেন। বাঁধ কেটে দিয়ে স্থপনা নির্মান করায় প্রাথমিক সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ১২টি সেকেÐারী সেচ প্রকল্পে সরবারহকৃত পানি খালে নেমে যায়। ফলে মাহিলাড়াÑঘেয়াঘাট খালের প্রায় ১০ কিলোমিটার খাল শুকিয়ে গিয়ে ১২টি প্রকল্পে পানি সরবারহ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি খালে পাকা বহুতল ভবন নির্মান ও বোরো চাষে পানি সরবারহ বন্ধ হওয়ার বিষয়টি গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়।
সেকেÐারী সেচ প্রকল্পের কয়েকজন ব্যবস্থাপক জানান, মাহিলাড়া বাসষ্টাÐ থেকে বাটাজোর ইউনিয়নের ঘেয়াঘাট পর্যন্ত খালে বোরো মৌসুমে পানি থাকে না। ফলে ওই খালের অধীনে থাকা দুই পাশের ২০ হাজার কৃষক বোরো চাষ করতে পারছিল না। গত ১০/১২ বছর ধরে মাহিলাড়া বাসষ্টাÐের বিজ্রের গোড়ায় ৮ ইঞ্চি পাইপের ডবল পাম্প বসিয়ে প্রাইমারি সেচ প্রকল্প চালু করলে ওই পানি নিয়ে তারা জয়সুর কাঠ, ঘেয়াঘাট, চÐী বাড়ি, ঘেয়াঘাট পশ্চিমসহ সেকেন্ডারী ১২টি সেচ প্রকল্পর অধীনে দুই হাজার একর জমিতে ২০ হাজার কৃষক বোরো চাষ করেন। ঘেয়াঘাট পশ্চিম সেকেন্ডারী সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. কামাল আকন (৫৮) অভিযোগ করেন, নেতারা খালের মধ্যে ভবন নির্মান করায় তিনি সেকেন্ডারী প্রকল্পের কৃষকদের পানি সরবারহ করতে পারছেন না । এতে জমি শুকিয়ে যাচ্ছে এবং ধান গাছের গোড়া পানিশুন্য রয়েছে। এভাবে পানি শুন্য থাকলে চলতি বছর বোরো ফসল হারাতে হবে। হাজার হাজার কৃষক ফসল থেকে বঞ্চিত হবে। একই কথা জানালেন, সেকেÐারী সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আয়নাল হোসেন, বাবুল খলিফা।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাহিলাড়া বাসষ্টাÐ সংলগ্ন মাহিলাড়া খালের মুখের বাঁধটি কেটে পানি নামিয়ে দিয়ে সরকারি খালের মাঝখানে ৫তলা ভবন নির্মানের জন্য ফাউÐেশনের কাজ শেষ করে কলম নির্মান কাজ চলছে। এসময় নির্মাম শ্রমিকদের কাছে সরকারি খালে ভবন নির্মান সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, কৃষকলীগ নেতা হারুন বয়াতিও যুবলীগ নেতা জাকির সেরনিয়াবাতের নির্দেশে কাজ করছেন। এ সময় উপস্থিত অনেকেই জানান, খালের মধ্যে নেতারা বহুতল ভবন নির্মান করায় ১২টি বোরো প্রকল্পে সেচ সরবারহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বোরো ফসল উৎপাদন নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে প্রায় ২০ হাজার কৃষক। কারন বোরো চাষের জন্য বর্তমান সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ন । কোন কোন জমিতে ধান গাছে ফুল বের হচ্ছে আবার কোন কোন জমিতে ফুল বের হওয়া শেষ হয়েছে এই সময় জমিতে পানি না থাকলে ফসল হবে না। অথচ গত ৮/১০ দিন ধরে ১২টি প্রকল্পের সেচ বন্ধ থাকায় জমি শুকিয়ে ধান গাছের গোড়ায় পানিশুন্য রয়েছে। ঘেয়াঘাট গ্রামের আব্দুল জলিল (২৫), মো. তোরাব মোল্লা(৪০), রফিকুল ইসলাম(৩৬), লক্ষনকাঠী গ্রামের মনোয়ার হোসেন(৪৫)সহ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, দিন দিন তাদের বোরা ধানক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের পথে বসতে হবে। এমনকি বোরা ফসল ঘরে না তুলতে পারলে তাদেরকে অর্ধাহারে অনাহারে থাকতে হবে।
মাহিলাড়া ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি ও মাহিলাড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ বয়াতির কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি খাল দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, বৈধ রেকর্ডিয় সম্পত্তিতে ভবন নির্মান করছি। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালাচ্ছে। একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা মো. জাকির হোসেন সেরনিয়াবাত বলেন, সরকারি খাল দখল করে নয়, আমার শ্বশুড়ি সেলিনা বেগমের ক্রয়কৃত রেকর্ডিয় সম্পত্তিতে ভবন নির্মান করছি।
এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বোরো আবাদের জন্য বর্তমান সময়টা জমিতে সার্বক্ষনিক পানি রাখা খুবই জরুরী। এখন ধান গাছের গোড়ায় পানি শুন্য থাকলে ফুল বের হবে না, ফসল উৎপাদন ব্যহতসহ লক্ষমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্থ হবে। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খালেদা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। সম্পূর্ন সরকারি খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মান করা হচ্ছে। স্থপনা ভেঙ্গে বোরো চাষে সেচ সরবারহ স্বাভাবিক রাখতে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।