গৌরনদী
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স \ দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, কর্মক্ষেত্রে অনুপুস্থিত ও সরকারি অফিস সময়ে প্রাইভেট প্রাকটিস করার অভিযোগে গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা ধর্মঘট পালন করেছে। একই অভিযোগে একই দিনে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিচারের আশ্বস দিলে কর্মসূচী স্থগিত করে বিক্ষুব্ধরা।
স্থানীয় লোকজন, চিকিৎসক, সেবা বঞ্চিত রোগীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তীব্র চিকিৎসক রয়েছে। বরিশাল-১ আসনের স্থানীয় সাংসদ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃক্ষকে অবহিত করে জরুরী ভিত্তিতে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক দেয়ার সুপারিশে করেন। সাংসদের সুপারিশের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ গত ফেব্রæয়ারি মাসে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার পদে যোগদানের নির্দেশ দেন। যোগদানের আদেশ পাওয়ার ১২ দিন পর গত ১২ মার্চ ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন মেডিকেল অফিসার হিসেব গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক মো. মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেন, চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন হাসপাতালে যোগদান করার পরদিন থেকে হাসপাতালে অনুপুস্থিত থেকে সরকারি অফিস সময়ে প্রাইভেট হাসপাতালে প্রাকটিস ও সার্জারি করে থাকেন। শুধু তাই নয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায়“ ট্রের্নিং অন অটিজম এ্যাÐ এনসিডিএস ফর জেলা ্/উপজেলা লেভেল ডক্টরর্স” প্রশিক্ষনে অংশ নেওয়ার কথা বলে গত ২৭ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. কবির হাসানের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রশিক্ষনে না গিয়ে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে সার্জারি করে বেড়ান। চিকিৎসক মো. মনিরুজ্জামানসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চিকিৎসক সংকটে সেবা বঞ্চিত মানুষের জন্য মাননীয় সাংসদের সুপারিশে তাকে (মামুনকে) গৌরনদী হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে নির্দেশ দেয়া হয় কিন্তু সে দায়িত্ব পালন না করে কর্মস্থলে অনুপুস্থিত থেকে বাড়তি অর্থের জন্য প্রাইভেট হাসপাতালে সার্জারির কাজ করেন। যার প্রতিবাদে আমরা এক ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করেছি। পরবর্তিতে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. কবির হাসান চিকিৎসক মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি সূত্র ও জানান, এ ঘটনায় গতকাল সকাল ১১টায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠি হয়। সভার সিদ্বান্তে চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনকে কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এইমর্মে লিখিতভাবে শোকজ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন স্থানীয় লোকজন ও সেবা বঞ্চিত রোগীরা। বিক্ষোভ শেষে হাসপাতালের সামনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মো. সোহেল সরদার, মো. দুলাল হোসেন ও মো. জিয়া হাওলাদার প্রমূখ। মো. সোহেল সরদার বলেন, আমরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কবির হাসান বলেন, চিকিৎসকদের ধর্মঘটের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত নই। তবে বিক্ষুব্ধ লোকজন এসে তাদের দাবির কথা আমাকে জানিয়েছে। চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, এ ব্যপারে তাকে লিখিতভাবে শোকজ করা হয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, অফিস সময়ে প্রাইভেট হাসপাতালে সার্জারি ও প্রাকটিস করার অভিযোগ সত্য নয়, আমি কিছুটা অসুস্থ্য তাই কর্মক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে অনুপুস্থিত থাকতে হয়। তিনি কোন শোকজ পাননি বলে জানান।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, ২৫০ শয্যার বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১টি চিকিৎসক পদ থাকলেও এখানে ৮জন চিকিৎসক রয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসক মো. মাহবুব আলম ও ইফফাত আরা বুনিয়াদি প্রশিক্ষনে রয়েছে। চিকিৎসক মো. খাদেমুল ইসলাম প্রেষনে বরিশালে দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. কবির হাসান প্রশাসনিক কাজে ব্যস্থ থাকতে হয়। ডা. অমূল্য রতন বাড়ৈ দন্ত চিকিৎসক, চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাস গাইনী ও আরএমও মো. জয়নাল আবেদীন অনেকটা অসুস্থ্য । এ অবস্থায় হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক মো. মনিরুজ্জামানকে দিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে আগত শত শত রোগীকে সামলানো কষ্টকর। এ এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন না করে কর্মক্ষেত্রে অনুপুস্থিত থাকায় সহকর্মি ও সেবাবঞ্চিত রোগীদের ক্ষুব্ধ হওয়াটাই স্বভাবিক। বরিশাল সিভিল সার্জন কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চিকিৎসক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ডাক্তার আবদুল্লাহ আল মামুনের দায়িত্ব পালন না করার বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমাকে অবহিত করেছে। আমরা তার বিরুদ্ধে বিধি-মোতাবেক ব্যবস্থা নিবো।