গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় ছাত্রী ধর্ষনের চেষ্টায় দায়ের করা মামলায় শিক্ষক কারাগারে, তদন্ত কমিটি গঠন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের অগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়ননের নগরবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনির ছাত্রীকে ধর্ষনের চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ঢালীকে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে গত শনিবার বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় আগৈলঝাড়া উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তর দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামি ২৭ মার্চের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ধর্ষিতার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের নগরবাড়ি গ্রামের এক দিন মজুরের কন্যা ও নগরবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী (১২) ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ঢালীর বাড়িতে গিয়ে সকালে স্কুল শুরুর আগে তার কাছে প্রাইভেট পরতেন। বেশ কিছুদিন যাবত প্রাইভেট পড়ানোর সময় শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ছাত্রীকে শাসনের নামে তার শরীরে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে আসছিল।
ছাত্রীর মা জানান, সম্প্রতি সময়ে শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ঢালী তার মেয়েকে সকালে পড়ানোর পরিবর্তে স্কুল ছুটির পরে বিকেলে বাড়িতে পড়ানোর সময় নির্ধারন করে দেন। গত ৮ মার্চ তার কন্যা শিক্ষকের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যান। ওই দিন শিক্ষকের বাসায় শিক্ষক ছাড়া কেউই ছিল না। এ সুযোগে শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ঢালী তার মেয়ের শরীরে হাত দিয়ে যৌন হয়রানী করার এক পর্যায়ে ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। মেয়ে শিক্ষকের হাত পা ধরে অনুনয় বিনয় করে ক্ষমা চান। তাতেও মেয়েকে শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ঢালী না ছাড়লে এক পর্যায়ে ডাক চিৎকার দিয়ে লোক ডাকার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে বাড়িতে আসেন। বিষয়টি তার কন্যা গোপন রেখে প্রাইভেট ও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। ঘটনার পরে ১৫ দিন যাবত তার কন্যা স্কুলে না যাওয়ায় তাদের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলে সে চুপ থাকলে সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে মেয়েকে মারধর করে প্রাইভেট ও স্কুলে না যাওয়ার কারন জানতে চাইলে মেয়ে সব ঘটনা তাকে (মাকে) খুলে বলেন।
স্কুল ছাত্রীর মা অভিযোগ করে বলেন, বিষয়টি তিনি জানার পরে ওই দিন (২৩ মার্চ) তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য রশিদ খান, কালাম সরদার, স্থানীয় ইউপি সদস্য মশিউর হাওলাদারকে জানিয়ে বিচার দাবি করেন। তারা বিষয়টি নিয়ে কোন বিচার না করায় পরবর্তিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মূর্তজা খানকে অবহিত করেন। কমিটির সভাপতি বিচার না করে উল্টো ঘটনা ধামা দেওয়ার চেষ্টা করলে স্কুল ছাত্রীর মা বিষয়টি পুলিশ জানান।
আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা জানান, ছাত্রীকে ধর্ষনের চেষ্টার ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর মা বাদি হয়ে গত শুক্রবার সকালে প্রধান শিক্ষককে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে প্রধান শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ঢালীকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার আসামি প্রধঅন শিক্ষককে আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরন করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ঢালী বলেন, আমি নির্দোস আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করেছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সিরাজুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পৃতিশ বিশ্বাসকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামি ২৭ মার্চের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে সত্যতা পাওয়া গেলে প্রধান শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ঢালীর বিরুদ্ধে বিভাগাীয় মামলা দায়ের করা হবে। এ প্রসঙ্গে আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিসদের চেয়ারম্যান গোলাম মূর্তজা খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে খুবই ব্যস্থ এখন কথা বলা যাবে না।