গৌরনদী
গৌরনদীর সন্ত্রাসী নান্নু মৃধার মৃত্যুদন্ড \ সহযোগী দুই জনের যাবজ্জীবন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ মাদক মামলায় সন্ত্রী ও মাদক ব্যবসায়ী নান্নু মৃধার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেওয়ায় গৌরনদীর আলোচিত খাদেম সরদার হত্যা মামলায় গতকাল বুধবার রায় ঘোষনা করেন বিচারক। রায়ে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী নান্নু মৃধার মৃত্যুদন্ড এবং দুই সহযোগীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালত। বুধবার বরিশালের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন দুই আসামির উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন বলে জানিয়েছেন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডঃ গিয়াস উদ্দিন কাবুল। একই সাথে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় মামলার বাকি ৯ আসামিকে বে-কসুর খালাশ প্রদান করা হয়েছে। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি হল, উপজেলার নন্দনপট্টি এলাকার মৃত সফিজউদ্দিন মৃধার ছেলে নান্নাু বাহিনীর প্রধঅন নান্নু মৃধা (৪০)। এছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হল, মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি নান্নু মৃধার ভাই সেন্টু মৃধা (৩৫) ও উত্তর বাটাজোর এলাকার ফানুজ মৃধার ছেলে আলাম মৃধা (৩৭)। রায় ঘোষনার সময় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সেন্টু মৃধা আদালতে অনুপস্থিত ছিলো।
স্থানীয় ও মামলা সুত্রে জানা গেছে, আসামি নান্নু মৃধা একজন মাদ ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর বাহিনীর প্রধান। অন্যান্য আসামিরা তার সহযোগী হিসেবে মাদক ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাÐে লিপ্ত ছিল। নান্নু মৃধার বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলায় স্বাক্ষী দেয় নন্দননপট্টি গ্রামের খাদেম সরদার। এ নিয়ে আসামিরা বিভিন্ন সময় খাদেম সরদার ও তার ছেলেদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো। ১৩ অক্টোবর রাতে খাদেম সরদার তার দুই ছেলে শাহ আলম সরদার ও আসলাম সরদারকে নিয়ে বাড়ি পার্শবর্তি মসজিদের এশার নামাজ পরে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় আসামিরা তাদের দলবল নিয়ে হামলা চালায় খাদেম সরদার ও তার ছেলেদের উপর। এতে পার্শবর্তি খালে ঝাপ দিয়ে ছেলে শাহ আলম সরদার প্রানে রক্ষা পেলেও আসামিরা উপর্যপুরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে খাদেম সরদার ও তার ছেলে আসলাম সরদারকে। এক পর্যায় শাহ আলমের ডাক চিৎকারে গ্রামের লোকজন ছুটে আসলে আসামিরা চলে যায়। এরপর স্থানীয়রা খাদেম সরদার ও আসলাম সরদারকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসক খাদেম সরদারকে মৃত ঘোষনা করে। একই সাথে আসলাম সরদারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শেরেই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করে। বর্তমানে আসলাম সরদার পঙ্গু জীবন যাপন করছে বলে জানা গেছে।
খাদেম সরদারকে হত্যাকান্ডের পুর্বে আসামি নান্নু মৃধাকে ৯০০ বোতল ফেন্ডিলসহ আটক করে পুলিশ। ওই মাদক মামলায় খাদেম সরদারও ছেলে শাহ আলম সরদার স্বাক্ষী দেয়। খাদেম হত্যার পরে ওই রাতেই গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ছেলে শাহ আলম সরদার। মামলায় মুল ঘাতক নান্নু মৃধা সহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। এরপর গৌরনদী থানা পুলিশ আদালতে একটি অভিযোগপত্র জমা দেয়। কিন্তু ওই চার্জশিটের উপর বাদি না রাজির দিলে পুনরায় তদন্তের ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর মামলাটি পুনরায় তদন্তের সিআইডিতে প্রেরন করা হয়। এতে মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে এজাহার নামীয় ১০ জনের সাথে আরো দুই জনের নাম যুক্ত করে মোট ১২ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৫ সালের ১৬ জুন আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক সেলিম শাহ নেওয়াজ। আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্র পক্ষে ১১ জন ও আসামি পক্ষে ২ জন সাফাই সাক্ষির সাক্ষ্যে গ্রহন শেষে অভিযোগ প্রমানিত হলে গতকাল আসামি নান্নু মৃধার উপস্থিতিতে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। একই সাথে তার ভাই পলাতক আসামি সেন্টু মৃধা ও উপস্থিত অপর আসামি আলাম মৃধাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এদিকে আদালতে রায় ঘোষনার পর বাবা হারানো মামলার বাদি শাহ আলম সরদার আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আদালতের উপর আমরা ভরসা রেখেছিলাম। এ হত্যাকান্ডের ন্যায্য বিচারক একদিন আমরা পাবো। আজকে তাই পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, আসামির দ্রæত মৃত্যুদÐ কার্যকর করতে তার জন্য আবেদন জানান।