গৌরনদী
গৌরনদীতে আংশিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কোটি টাকার বিল নিয়ে প্রকল্প অসমাপ্ত রেখে ৭ বছর লাপাত্তা ঠিকাদার
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ মাদারীপুর ও বরিশালের সীমান্তবর্তী বাকাই গ্রামের একটি খালের মধ্যে জলকপাট কাজ অসাপ্ত রেখেই এক কোটি দশ লক্ষ টাকার বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন এ্যান্ড কোম্পানী লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রায় ৭ বছর আগে শুরু হওয়া প্রকল্পের সামান্য কাজ করে ওই বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। কাজ ফেলে রাখায় গৌরনদী ও কালকিনি উপজেলার লক্ষাধিক কৃষককে বোরো চাষে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কোটি টাকার বেশী বিল তুলে নেওয়ার পরে সাত বছর অতিবিাহিত হলেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই, ইছাগুড়ি বাকাই, পূর্ব বাকাই, দোনারকান্দি, উত্তর মাগুরা ও মাগুরা-মাদারিপুর ও মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার ডাসার, নবগ্রাম, শশিকর ও পূর্ব শশিকরসহ ১০টি গ্রামের লক্ষাধিক কৃষককে বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে খাঞ্জাপুর Ñ দক্ষিন মাগুরা চতলা খালে (বেবাইজ্জার খাল) বরিশাল জেলার গৌরনদী ও মাদারীপুর জেলার কালকিনির সীমান্তবর্তি বাকাই গ্রামে জলকপাট নির্মানের জন্য বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে একটি প্রকল্প গ্রহন করেন। প্রকল্পটির ব্যায় ধরা হয় ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০১১ সালের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে দরপত্র আহব্বান করা হয়। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)র একাধিক কর্মকর্তা জানান, অফিসিয়াল নানান ত্রটি ও জটিলতার কারনে প্রথমবার আহবান করা দরপত্র বাতিল করে ওই বছর দ্বিতীয়বার পুনরায় দরপত্র আহব্বান করেন। পরবর্তিতে খুলনার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন এ্যান্ড কোম্পানী লিমিটেডেটকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন এ্যান্ড কোম্পানী লিমিটেডের পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বভার গ্রহন করে বরিশালের ঠিকাদার আব্দুস সালাম, জামাল হোসেন ও বদরুল আলম কাজ শুরু করে এক কোটি দশ লক্ষ টাকা বিল নিয়ে গত সাত বছর ধরে লাপাত্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শতকরা ৩০/৩৫ ভাগ কাজ শেষ করে ২০১৩ সালে প্রথম চলতি বিল হিসেবে এক কোটি ১০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেন। পরবর্তিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় চলতি বিল হিসেবে ২৬ লক্ষ টাকার বিল পাওয়ার আবেদন করেন। বিগত ৭ বছর কাজ না করে অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখেন। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এখনো প্রকল্পটির বøক বসানো, মাটির কাজ, চ্যানেল কর্তন, এপ্রোজ সড়ক, ও রডের কিছু কাজসহ ৭০/৮০ লক্ষ টাকার কাজ বাকি রয়েছে। অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক কোটি দশ লাখ টাকা বিল তুলে নিয়েছেন এবং ২৬ লাখ টাকার বিল পরিশোধের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রভাবশালীদের দিয়ে কর্মকর্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় চলতি বিলের ২৬ লক্ষ টাকা নেওয়ার পায়তারা করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জলকপাট ষ্টাকচার করে জলকপাট বসানো হয়েছে। আয়রন জলকপাট বসানোর পরে দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যাক্ত পরে থাকায় মরিজা ধরে বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জলকপাটের দুই দিকের চারিপাশে বøক বসানো কাজের কিছুই করা হয়নি। শুধুমাত্র উইং ওয়াল নির্মান করে ফেলে রাখা হয়েছে। এসময় এলাকাবাসী জানান, ঠিকাদার ৩০/৩৫ ভাগ কাজ করে কোটি টাকারও বেশী বিল নিয়ে ৭/৮ বছর ধরে লাপাত্তা। এ কাজ সম্পন্ন না হওয়ার সম্ভবনাই বেশী। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কৃষকদের দূর্ভোগের কথা জানিয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে আবেদন করার পরেও তারা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন নাই। গৌরনদী উপজেলার ইছাগুড়ি বাকাই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস(৪২), দোনারকান্দি গ্রামের মিজানুর রহমান(৩৮), মাগুরা মাদারীপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার(৫৫), কালকিনি উপজেলার ডাসার গ্রামের জাকির হোসেন(৫৩) ও নবগ্রাম গ্রামের রনজিৎ মÐল(৪৯)অভিযোগ করে বলেন, গৌরনদী ও কালকিনির সীমান্তবর্তি বাকাই ¯øইসগেট নির্মানাধীন প্রকল্পটি এখন কৃষকের মরনফাঁদ। নির্মান করে কাজ শেষ না করায় গত ৭/৮ বছর ধরে সাধারন কৃষকদের গলার কাটায় পরিনত হয়েছে। খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে ¯øুইস নির্মান কাজ করায় পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। যে কারনে বোরো মৌসুমে সেচ সংকটের কারনে বোরো আবাদি জমিতে পানি সরবারহে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ ছাড়া সাধারন পথচারীসহ ১০ গ্রামের মানুষকে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী নেতা বলেন, গত ৭ বছরে অসংখ্যবার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের কাছে ধরনা দিয়েও কাজটির সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব হয়নি। শুকনো মৌসুমী কোনমতে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষার দিনে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর আলম সেরনিয়াবাদ অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর কাজটি ফেলে রাখার পরেও কি কারনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তা আমার বোধগম্য নয়। সরকারের কোটি টাকার বেশী টাকা অপচয় হল অথচ জনসাধারনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাধারন কৃষকের স্বার্থে অতি দ্রæত এ সমস্যার সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন উর্ধতন কতৃপক্ষের সহায়তার দাবি জানান।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বদরুল আলম মুঠোফোনে বলেন, এলাকাবাসীর অসহযোগীতার কারনে সঠিকভাবে কাজটি শেষ করা সম্ভব হয়নি। সামান্যতম কাজ করে এক কোটি দশ লাখ টাকার বিল নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যতটুকু কাজ করেছি ততটুকু বিল নিয়েছি।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম সাধারন কৃষকদের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ¯øুইস গেটটির নির্মান কাজ বন্ধ থাকায় কৃষকদের অপুরনীয় ক্ষতি হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে কাজ শেষ করা উচিত। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বিল প্রদানের কথা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারকে বার বার তাগিদ দেয়া সত্বেও কাজটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। কৃষকদের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, অতি দ্রæততম সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন ৫০ ভাগ কাজ শেষ করা হয়েছে। গৌরনদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খালেদা নাসরিন এ প্রসঙ্গে বলেন, সদ্য যোগদান করায় বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত নই, খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাজ না করে যদি ঠিকাদার বিল উত্তোলন করে নেয়, তাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।