গৌরনদী
উজিরপুরে যৌতুকের দাবিতে শ্বাসরোধ করে স্ত্রীকে হত্যা, মামলা দায়ের গ্রেপ্তার-৩
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম, দাবিকৃত যৌতুক না দেওয়ায় নির্যাতন করে বরিশালের উজিরপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের দক্ষিন মাদার্শী মহল্লায় রোববার রাতে গৃহবধূ রিমা আক্তার(২৪)কে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার উজিরপুর মডেল থানায় নিহতের বাবা মো. আক্কেল আলী সরদার বাদি হয়ে নিহতের স্বামী, দেবর, শ্বশুর ও শ্বশুড়িকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলা দায়েরের পর পুলিশ স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্থানীয় লোকজন, নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানান, গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়ননের বাসুদেবপাড়া গ্রামের মো. আক্কেল আলী সরদারের কন্যা রিমা আক্তার(২০)র দেড় বছর আগে পাশ্ববর্তি উজিরপুর পৌর সভার ১নং ওয়ার্ডের দক্ষিন মাদার্শী মহল্লার মো. ইসমাইল হাওলাদারের পুত্র মো. শিপন হাওলাদার(৩৫)র সঙ্গে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে স্বামী শিপন হাওলাদারকে স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য মালামাল প্রায় দুই লক্ষ টাকার যৌতুক দেয়া হয়।
নিহতের বাবা আক্কেল আলী সরদার জানান, বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতেই জামাতা শিপন ব্যবসা করার জন্য বাবা বাড়ি থেকে এক লক্ষ টাকা আনার জন্য রিমাকে চাপ দেয়। রিমা স্বামীর শিপনের কথায় রাজি না হলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ শুরু হয়। পরে মেয়ে রিমা বিষয়টি তাকে জানালে মেয়ের সুখের কথা ভেবে ৫০ হাজার টাকা শিপনকে দেয়া হয়। পরবর্তি গত ডিসেম্বর মাসে শিপন পুনরায় তিন লক্ষ টাকা দাবি করে টাকা আনার জন্য রিমাকে বলে। এতে মেয়ে রিমা রাজি না হলে তাকে মারধর করে শিপন। এ নিয়ে মেয়ে জামাইর মধ্যে চরম দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। কলহের জের ধরে কন্যা রিমাকে প্রায়ই শারীরিকভাবে নির্যাতন করে শিপন। মারধরের ঘটনায় একাধিকবার স্থানীয়ভাবে দুই পরিবারের মধ্যে মিমাংসা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু শিপন মিমাংসা বৈঠকের সিদ্বান্ত তোয়াক্কা না করে দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে থাকেন এবং মেয়ের উপর নির্যতনের মাত্রা দিন দিন বাড়িয়ে দেন।
নিহত রিমার ভাই আরিফ হোসেন বলেন, রবিবার রাত আনুমানিক দুইটার দিকে ভগ্নপতি শিপন হাওলাদার আমাকে মুঠোফোনে জানান আমার বোন রিমা আক্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এবং উদ্ধার করে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। খবর পেয়ে আমি বাবা ও মাকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসি এ সময় চিকিৎসক জানান রোগী রিমা আক্তারকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে এবং অনেক আগেই মারা গেছে। তখন ডাক্তার ও আমরা উজিরপুর থানা পুলিশকে খবর দেই। আরিফ হোসেন আরো বলেন, ওরা আমার বোনকে নির্যাতনের পর শ্বসরোধ করে হত্যা করে পরবর্তিতে গলায় ফাঁস দেওয়ার প্রচারনা চালিয়ে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিহত রিমার একাধিক প্রতিবেশীরা জানান, শিপন হাওলাদার যৌতুকের জন্য প্রায়ই প্রায়ই তার স্ত্রীকে নির্যাতন করত। রবিবার রাত ১১টার দিকে কান্নাকাটির শব্দ শুনেছি। পরে শুনতে পাই রিমা গলায় ফাঁস দিয়েছে। যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে থানা হাজতে স্বামী শিপন হাওলাদার বলেন, সংসারের ঝামেলা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার মাঝে মধ্যে ঝগড়াবিবাদ হত। রবিবার রাতে সামান্য ঝগরা হওয়ার পরে সে ঘরে আড়ার সঙ্গে গলায় দড়ি দেয়। যৌতুক দাবি ও হত্যার অভিযোগ সত্য নয়।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. তানভীর আহম্মেদ বলেন, রোগী গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে বিষয়টিতে সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে রিমাকে শ্বসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। উজিরপুর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, চিকিৎসকের কাছ থেকে খবর পেয়ে গতকাল সকালে হাসপাতাল থেকে স্বামী শিপন হাওলাদার, শ্বশুর মো. ইসমাইল হাওলাদার (৫২) ও দক্ষিন মাদার্শ গ্রাম থেকে শ্বশুড়ি সুফিয়া বেগম(৪৩)কে আটক করা হয়। পরবর্তিততে নিহত রিমার বাবা মো. আক্কেল আলী সরদার বাদি হয়ে জামাতা শিপন হাওলাদার(৩৫), ছোট ভাই ইউনুস হাওলঅদার(৩০) শ্বশুর ইসমাইল হোসেন(৫৫) ও শ্বাশুড়ি সুফিয়া বেগম(৪৫)কে আসামি করে হত্যা মামলাা দায়ের করলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।