গৌরনদী
গৌরনদীতে ভÐ ফকিরের আস্তনায় হামলা ভাঙচুর, সহযোগীসহ বিড়ি ফকির আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামে চিকিৎসা সেবা প্রদানের নামে প্রতারনার মাধ্যমে নিরিহ সাধারন মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ শুক্রবার রাতে ভÐ ফকির হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকিরের অস্তনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও বিড়ি ফকিরকে পিটিয়ে আহত করে আস্তনা গুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা লোকজন। গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই দিন রাতে হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকির(৪৮) ও সহযোগী মো. মতিয়ার মতিকে (দালাল) আটক করেছে পুলিশ।
গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাজাহারুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার রাতে প্রতারনার শিকার স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন ভÐ ফকিরের আস্তনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে আস্তনা গুড়িয়ে দিয়ে ফকিরকে মারধর করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভÐ ফকির হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকির ও তার সহযোগী মতিয়ার মতি(৩৮) (দালাল)কে আটক করা হয়েছে। এবং আস্তনা থেকে তছবি, দুটি বাঘের মূর্তি, মরাগরুর হাড়গোড়সহ প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত উপকরন উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামের দিনমজুর জালাল মোল্লার স্ত্রী হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকির (৪৮) ২০০৭ সাল স্বপ্নে সৃষ্টিকর্তার অলৌকিক আর্শিবাদ পেয়েছে বলে তার কিছু দালালদের দিয়ে এলাকায় প্রচারনা চালান। স্থানীয় মো. জামাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুর রবসহ অনেকেই জানান, কথিত বিড়ি ফকিরের দালালরা এই বলে প্রচারনা চালান য়ে, সে (বিড়ি ফকির) স্বপ্নে আদৃষ্ঠ ও ঐশ্বরিক শক্তির বলিয়ান হয়েছে এবং যে কোন মানুষের অতিতি ও ভবিষ্যাত বলে দিতে পারে। এ ছাড়া মানুষের সব ধরনের রোগ মুক্তির জন্য হাসি বেগম চিকিৎসা দিয়ে থাকে। ভÐ ফকিরের নির্বাচিত কতিপয় দালালরা গৌরনদী উপজেলাসহ আশ পাশের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ প্রচারনা চালানোর পর তার কাছে রোগী আসা শুরু করে। এ সুবাদে উত্তর পালরদী গ্রামে (দাস বাড়ির ব্রিজের গোড়ায়) গড়ে তোলেন আস্তনা। সার্বক্ষনিক দিন রাত ওই আস্তনায় বসে হাসি বেগম একের পর এক বিড়ি ফুকতে থাকেন বিধায় তার নাম দেওয়া হয়েছে ফকির হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকির। প্রতিদিন তার ১০/১২ প্যাকেট বিড়ি লাগে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর বেশীর ভাগই নারী।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আস্তনা গড়ে তোলার পর সেখানে চিকিৎসার নামে প্রতারনার সঙ্গে ওই আস্তনায় গড়ে তোলানে নারীদের নিয়ে অসামাজিক কর্মকাÐ ও মাদকের আড্ডা। ভন্ড ফকিরের কর্মকাÐে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিবেশীরা জানান, ভÐ ফকির হাসি বেগম তার অবৈধ প্রতারনা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় উঠতি নেতাদের নিয়মিত মাসোহারা দেন। যে কারনে ওই সব নেতাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পেত না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর বিজয়পুর গ্রামের এক ব্যবসায়ী জানান, ওই ভÐ ফকির তার উঠতি বয়সী ভাতিজাকে নিয়ে অসামাজিক কাজে সুযোগ দিয়ে মাথা ণষ্ট করে দিয়েছে।
প্রতারনার শিকার ভূক্তভোগী উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের বামরাইল গ্রামের গৃহবধূ আলেয়া বেগম (৩২) অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েলি কিছু সমস্যাজনিত রোগের কারনে হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকিরের কাছে যাই প্রথমে একশত এক টাকা দর্শন ফি নেন। পরবর্তিতে তৈলপড়া, পানি পড়া দিয়ে এক হাজার এক শত টাকা হাতিয়ে নেন। এতে কোন সুফল না পাইয়ে পুনরায় তার কাছে গেলে গোসল দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে আট হাজার ছয়শত টাকা হাতিয়ে নেন। আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়ননের রাংতা গ্রামের মফসের আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার পেটে ব্যাথা হওয়ায় বিড়ি ফকিরের কাছে যাই। একশত এক টাকা দিয়ে নাম অর্ন্তভূক্ত করি। এসময় আমাকে দেখে বলে এখন কোন চিকিৎসা হবে না। আমার (ফকিরের) ধ্যানমুহুর্তে তোর আসতে হবে। তিন দিন পরে গেলে আমাকে বলে তোকে মানুষ কুফরি দিয়ে ক্ষতি করেছে এবং বান মেরেছে তুই বাঁচবি না। চিকিৎসা দেওয়ার নামে আমার কাছ থেকে ১২ হাজা টাকা হাতিয়ে নেন। একই অভিযোগ করেন গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর গ্রামের রাবেয়া বেগম, নলচিড়া গ্রামের মমতাজ বেগম, খাঞ্জাপুর গ্রামের সাফিযা বেগম।
গৌরনদী পৌর এলাকার মিজান সরদার, ফারুক হোসেন বলেন, আমরা গত শুক্রবার সকালে ভÐ ফকিরের আস্তনায় গিয়ে একশত এক টাকা দিয়ে নাম তালিকাভূক্ত করি। ফকির আমাদের অতীত সম্পর্কে যা বললেন তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও মনগড়া। একই দিনে গৌরনদী মডেল থানার পুলিশ কনষ্টবল মাইনুল ইসলাম ভÐ ফকিরে আস্তনায় চিকিৎসার জন্য যান এবং প্রতারনার ধরন সম্পর্কে নিশ্চিত হন। তিনি বলেন, ভÐ ফকির প্রতারনা করে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। গৌরনদী মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন প্রতারনার কথা স্বীকার করেন বলেন, প্রভাবশালী দুই নেতার সুপারিশে প্রতারনা থেকে বিরত থাকার মুচলেকা সাপেক্ষে আটকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দুই প্রতারককে ছেড়ে দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।