গৌরনদী
গৌরনদীতে উপবৃত্তির তালিকা থেকে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের নাম বাদ দেয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে সেকে-ারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেষ্টমেণ্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) প্রকল্পের উপবৃত্তি তালিকাভুক্ত করনে গৌরনদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু বিদ্বেষী মনোভাবের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া তালিকা থেকে বিধি বর্হিভূতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের নাম কর্তন করেছেন। এ ব্যাপারে ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকল্প পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি মাদ্রাসাসহ ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৭ সনে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে ৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালযের অফিস সহকারী মো. মজিবুর রহমান জানান, প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী উপ-বৃত্তির তালিকায় ষষ্ঠ শ্রেনির ছাত্রী শতকরা ৩০ভাগ ও ছাত্র শতকরা ২০ ভাগ এই সুবিধা ভোগ করবে। উপজেলার ৪২াট মাদ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রসার প্রধান শিক্ষকগন দাবি করেন চলতি বছর ৫ হাজার শিক্ষার্থী সমাপনী পাশ করে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসেব মতে চলতি বছর সমাপনী পরীক্ষায় পাস করেছে ৪ হাজার ৫শত শিক্ষার্থী। সেকে-ারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেষ্টমেণ্ট প্রোগ্রাম(সেসিপ) প্রকল্পের আওতায় গৌরনদী উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব অনুযায়ী রেসিও অনুসারে উপবৃত্তির বরাদ্দ করা হয়। সে অনুযায়ী ২০১৬-২০১৭ইং অর্থ বছরে ৪৪১ জন ছাত্র ও ৭৭৩ জন ছাত্রীকে উপ-বৃত্তি প্রদানের জন্য তালিকাভূক্ত করা হয়। বৃত্তির জন্য তালিকাভূক্ত শিক্ষার্থীরা বছরে দুইবার জনপ্রতি ছয়শত টাকা করে পাবেন।
উপজেলার ১১ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের অভিযোগ, চলতি বছর বিধি বর্হিভূতভাবে উপ-বৃত্তির তালিকা তৈরী করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সেলিম মিয়া। তালিকা থেকে হিন্দু ছাত্র ছাত্রীদের নাম কর্তন করে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। তালিকায় সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তালিকা সংশোধনের জন্য তারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার সেকে-ারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেষ্টমেণ্ট প্রোগ্রাম(সেসিপ) প্রোগ্রাম পরিচালক ও মহাপরিচালক মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রফেসর ড. এস,এম, ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
উপজেলার টরকী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রজেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, নাঠৈ রিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার ম-ল, পালরদী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার রায় অভিযোগ করেন, তারা উপ-বৃত্তি বাছাই কমিটির সিদ্বাস্ত মোতাবেক মেধাবীদের প্রধান্য দিয়ে তালিকা জমা দেন কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা হিন্দু ছাত্র ছাত্রীদের অধিকাংশ নাম কর্তৃন করে তালিকা থেকে বাদ দেন। ফলে অভিভাবক ও বাছাই কমিটির কাছে প্রধান শিক্ষকদেরকে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়েছে। বেছে বেছে হিন্দু সংখ্যালঘু নাম কর্তন করা সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গৌরনদী গালর্স স্কুল এ্যা- কলেজের অধ্যক্ষ মীর আবদুল আহসান অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা একজন সাম্প্রদায়িক লোক। সে আমার বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি সুবিধা থেকে হিন্দু শিক্ষার্থীদের নাম কর্তন করেছে। ওই ছাত্রীরা মেধাবী হিসেবে বৃত্তির সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়া সত্বেও বাদ দেওয়া হয়েছে। বার বার অনুরোধ করার পরেও তাদের তালিকাভূক্ত করা হয়নি। একই অভিযোগ করেন পিংলাকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসহুরা বেগম, বাটাজোর অশ্বনী কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার ওঝাসহ আরো ৬ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক।
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সেলিম মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নাম কর্তনের সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। উর্ধতন কর্তপক্ষই প্রান্তিকে ৬ষ্ঠ শ্রেনির উপবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর নাম কর্তন করেছে। শিক্ষা কর্মকর্তার ওই দাবি প্রত্যখান করে প্রধান শিক্ষকরা বলেন, প্রাপ্যতার ভিত্তিতে নাম কর্তন করা হলে নিচ থেকে অতিরিক্ত নাম কর্তন করা হত। তা না হয়ে তালিকার মধ্যে মধ্যে বাছাই করে হিন্দু নাম কর্তন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নাঠি রিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১নংবিথীকা ম-ল, ২নং সুমী ম-ল ও ১১নং অপূর্ব করের নাম কর্তন করা হয়েছে। টরকী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩নং রিংকু ঢাকী, ৩৬নং জুই শীল, ৪৬নং দীপা ম-লের নাম কর্তন করা হয়েছে। বাকাই নিরাঞ্জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৬নং ইতি বাড়ৈ, ১৭নং মনিকা তালুকদার, পূর্ব হোসনাবাদ এস,কে,এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৩নং সুবর্না রানীর নাম কর্তন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আব্দুল ইউনুস বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তালিকা চূড়ান্ত করেনি। স্থানীয় ভাবে তালিকা প্রনয়ন করা হয়। অভিযোগ সম্পর্কে আমিঅবহিত নই। সেসিপ প্রকল্পের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক(দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. আবু ছাইদ শেখ (অরিরিক্ত সচিব) বলেন, আমি এখনো অভিযোগপত্র হাতে পাইনি, পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হব।