গৌরনদী
ছাত্রলীগকর্মী হত্যা ॥ উৎকোচ নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় গৌরনদী থানার ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদীর পালরদী মডেল স্কুল এ্যা- কলেজের একাদশ শ্রেনির ছাত্র ও পৌর ছাত্রলীগের কর্মি সাকির গোমস্তা(১৮)কে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ যুবলীগ ও বখাটেরা। এজাহারভূক্ত আসামি বখাটে ফাহিমকে গেপ্তার করে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম কর্তৃক ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় গতকাল রবিবার বরিশাল পুলিশ সুপার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৫দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সাকির হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ, সমাবেশে, ও মহাড়ক অবরোধ অব্যাহত রয়েছে।
নিহতের মা ও মামলার বাদি আলেয়া বেগম জানান, কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) তপন কুমার রায়কে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদ করে তার ছেলে সাকির। এর জের ধরে বখাটে সোহেল গোমস্তা(২৯), ইমরান মীর(২২), সুমন হাওলাদার(২৩), রিয়াজ খান(২২) ও ফাহিম(১৮)সহ ৫/৬ জন সন্ত্রাসী সাকিরকে পিটিয়ে জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে সাকির মারা যান। সাকিরের উপর হামলার ঘটনায় ওই দিন তিনি গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৌরনদী মডেল থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মামলা দায়েরের পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মামলার এজাহার ভূক্ত আসামি ফাহিমকে মারধর করে গৌরনদী থানার উপসহকারী পরিদর্শক(এসআই) মো. শামছুউদ্দিনের কাছে সোপর্দ করেন। ফাহিমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার জন্য এসআই শামছুউদ্দিনের উপর ওসি মনিরুল ক্ষিপ্ত হনএবং ফাহিমকে ছেড়ে দিতে বলেন। এসআই শামছুদ্দিন আসামিকে ছেড়ে না দিয়ে ডিউটি অফিসারকে বুঝিয়ে দেন। ডিউটি অফিসার ওসির নির্দেশে আসামি ছেড়ে দেন।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার নিহত ছাত্রলীগ কর্মির পরিবার ও স্বজনদের সমবেদনা ও শান্তনা জানাতে সাকিরের বাড়িতে আসেন বরিশাল -১ আসনের সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আ.লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এসময় নিহতের মা আলেয়া বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংসদের কাছে গৌরনদী মডেল থানার ওসির বিরুদ্ধে উৎকোচ নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত ফাহিমকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলেই সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সাকির হত্যার সকল অসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহতের মা আলেয়া বেগম বলেন, ঘটনার পর ৬দিন পার হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি এবং স্থানীয় লোকজন আসামি ফাহিমকে ধরে দিলে পুলিশ আসামি ছেড়ে দিয়েছে। এর আগে ২২ নভেম্বর হত্যার ঘটনা তদন্তে পালরদী স্কুল এ্যা- কলেজে আসেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মফিজুল ইসলাম। এ ্সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারে কাছে গ্রেপ্তারকৃত আসামি ছেড়ে দেয়ায় ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার সামনেই সাংসদ স্যারের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। ফাহিমকে ছেড়ে দেয়া হয়নি, সে থানা থেকে পালিয়ে গেছে। আসামি পালানোর পরে কেউ লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেননি। তাছাড়া ফাহিম ওই বিদ্যালয়ের নবম ছাত্র তার পড়নে স্কুলের ইউনিফরম থাকায় তাকে হাজতে রাখা হয়নি। যে কারণে সে পালানোর সুযোগ পেয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে ।
এদিকে গতকাল রবিবার কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মনির হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া বিচারের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও স্বজনরা। এ প্রসঙ্গে বরিশাল পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম (পিপিএম) প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরে বাকেরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মফিজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামি পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।