গৌরনদী
মেশানোর সময় হাতে নাতে ধরা ॥ গৌরনদী খাদ্য গুদামে পচা চাল, ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরকারী খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মিনার বৈদ্যের বিরুদ্ধে দফায় দফায় ভাল চালের সঙ্গে খাবার অনুপোযোগী পচা চাল মেশানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ পচা চাল মেশানোর সময় হাতে নাতে ধরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও স্থানীয় গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিকদের মোবাইল ক্রামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।
খাদ্য গুদামের কর্মচারী, স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টরা জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গৌরনদী উপজেলার গৌরনদী বন্দরস্থ সরকারি খাদ্য গুদামের সামনে দুটি ট্রাকে ২০০ বস্তা চাল আসে। ওই দিন রাতে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মিনার বৈদ্য তার নিজস্ব লেবার দিয়ে চাল খালাস করে গুদামজাত করেন এবং গোপনে বন্ধেরে মধ্যে ভাল চালের সঙ্গে মিশানো শুরু করেন।
খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী মীর আব্দুল হক বলেন, শুক্রবার আমি ছুটিতে ছিলাম শনিবার কাজে যোগদান করে দেখি গুদামের মধ্যে কয়েকজন লেবার পচা চাল মেশানোর কাজ করছেন। এ সময় আমি বাধা দিলে তারা আমার বাধা উপেক্ষা করে চাল মেশানোর কাজ চালিয়ে যান। পরবর্তিতে আমি গোপনে বিষয়টি মুঠোফোনে বরিশাল বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা (আরসি ফুড) রেজা মোহাম্মদ মহসিন ও বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (ডিসি ফুড) মো. মশিউর রহমান স্যারকে জানাই। স্যারেরা ওই দিন তাৎক্ষনিকভাবে খাদ্য গুদামে চলে আসেন এবং হাতে নাতে পচা চাল মেশানো ধরে ফেলেন।
গুদামের আশপাশের লোকজন জানান, মঙ্গলবার বিকেলে গৌরনদী সরকারি খাদ্য গুদামের ২নং গুদামে পচা চাল মেশাতে দেখতে পেয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) আশ্রাফ আহম্মেদ রাসেলকে বিষয়টি জানান। তারা অভিযোগ করেন, নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহম্মেদ রাসেল কোন ব্যবস্থা নেননি। সংবাদ কর্মিদের বিষয়টি জানানো হলে ঘটনাস্থলে আসেন দৈনিক প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম জহির ও দৈনিক প্রতিদিন নিউজের গৌরনদী প্রতিনিধি পপলু খান। তারা ২নং খাদ্য গুদামে পৌছে লেবার মো. সেলিম (৩৫) ও আব্দুল জলিল (৪৫)কে পচা চাল মেশাতে দেখতে পান এবং ছবি তোলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মিনার বৈদ্য। মিনার বৈদ্য সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান কার অনুমতিতে গুদামে প্রবেশ করেছেন। এক পর্যায়ে দৈনিক প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম জহিরের মোবাইল ও ক্যামেরা জোর করে ছিনিয়ে নেন। বিষয়টি গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলামকে অবহিত করা হলে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মো. সগির হোসেনসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠান। পুলিশ গুদামে পৌছলে মিনার বৈদ্য সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহিরের মোবাইল ও ক্যামের ফেরত দিয়ে ঘটনার জন্য তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।
অভিযোগ সম্পর্কে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মিনার বৈদ্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পচা চাল মেশানোর অভিযোগ সত্য নয়। শনিবার রাতে গৌরনদী বন্দরের চাল ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনের ১৮০ বস্তা চাল গুদাম এলাকায় খালাস করা হয় ওই চাল আমাদের ছিল না । গুদামে পচা চাল কোথা থেকে আসলো এ প্রসঙ্গে বলেন, চাল সংগ্রহের সময় ক্ষমতাসীনদলের প্রভাবশালী এক নেতা চাল সরবারহ করেছিলেন। পচা চাল কেন গ্রহন করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গ্রহন করেছিলাম। উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর আলম সেরনিয়াবাত, নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধাসহ ইউপি চেয়ারম্যানরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন সময় টিআর, কাবিখা, ঈদে খয়রাতি চাল ও ভিজিডি কার্ডের জন্য গুদাম থেকে খাবার অনুপোযোগী পচা চাল সরবারহ করা হয় কিন্তু অভিযোগ করলেও কখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আয়শা খাতুন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উর্ধতন কর্মকর্তাদ্বয় গৌরনদীতে এসে গুদামের প্লটফর্মে পচা চাল পান। পরবর্তিতে কি হয়েছে তা আমি জানি না। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) আশ্রাফ আহম্মেদ রাসেল বলেন, আমি খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে গুদামে গেলে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মিনার বৈদ্য আমাকে জানান ঠিদারদার কর্তৃক সরবারহকৃত চাল, নতুন করে কোন পচা চাল মেশানো হয়নি । বরিশালে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়ে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রন কার্যালয়ের সহকারী রসায়নবিদ মো. বোরহান উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিস্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (আরসি ফুড) রেজা মোহাম্মদ মহসিন এ প্রসেঙ্গ বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমি ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পাওয়ার তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।