গৌরনদী
সংস্কার নেই আগৈলঝাড়ার চার সেতু ॥ মানুষের দূর্ভোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশাল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র অধিনে নির্মিত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ও রাজিহার ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় চারটি সেতু বিশ বছরেও সংস্কারের পদক্ষে গ্রহন করেননি কর্তৃপক্ষ। সংস্কারের অভাবে সেতু চারটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হয়েছে। দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষকে। জরুরী ভিত্তিতে সেতুটি সংস্কারের জন্য আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী ও এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থ বছরে স্বল্প ব্যায় প্রকল্পের অধিনে আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের রথখোলা-ভদ্রপাড়া সড়কের বড়ইতলা নামক স্থানে সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৬০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু নির্মান করা হয়। স্থানীয়রা জানান, গত ২০ বছরে কর্তৃপক্ষ সেতুটি সংস্কারের কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। এলাকাবাসী ও ভ’ক্তভোগীরা জানান, জনগুরুত্বপূর্ন সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন ছোট ও মাঝারি যানবাহনযোগে গৈলা, নাঘার, মোল্লাপাড়া, ভদ্রপাড়া গ্রামের ২০ হাজার মানুষ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে থাকে। গত তিন বছর যাবত এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দূর্ভোগ পোহাকে হচ্ছে সাধারন মানুষকে। স্থানীয় করম সরদার(৩৫), রাবেয়া (বেগম) ও কলেজ ছাত্র আরিফ হোসেন(২২) জানান, সেতুটি দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়ে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ার পরে পায়ে হেটে যাতায়াত করতে হয়। সেতুটির অবস্থা এতই খারাপ যে পায়ে চলাচল করতে গিয়ে শিশু ও বৃদ্ধসহ অনেকেই ভাঙ্গায় পড়ে পা ভেঙ্গে আহত হয়েছে।
বরিশাল এল,জি,ইডির স্বল্প ব্যায় প্রকল্পের অধীনে ১৯৯৮-১৯৯৯ ইং অর্থ বছরে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ব্যায়ে গৈলা ইউনিয়নে তালতার মাঠ এলাকায় একটি সেতু নির্মান করা হয়। গত ২০ বছরে সেতুটি সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গৈলা ইউনিয়নরে ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য শোভা রানী সরকার জানান, সেতুটি সংস্কার করার জন্য বার বার উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো সত্বেও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না ।
স্থানীয়রা জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের তালতারমাঠ, ঐচারমাঠ ও দীঘিবাড়ি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ সেতুটি দিয়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন সড়কে যাতায়াত করে থাকেন। এ ছাড়া এসড়কটি দিয়ে তালতারমাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঐচারমাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঐচারমাঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অশোক সেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আগৈলঝাড়া এস, এম বালিকা বিদ্যালয় ও ভেগাই হালদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। গত প্রায় ৫/৬ বছর ধরে তালতারমাঠ এলাকায় সেতুটি ভেঙ্গে গেছে। সেতুটি সংস্কার না হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীসহ সাধারন মানুষ যাতায়াত করে থাকে।
তালতার মাঠ গ্রামের অতুল চন্দ্র সমাদ্দার (৬০), কৃঞ্চ কান্ত হালদার (৫০) ডা. শান্তি রঞ্জন হালদার (৬৫) জানান, সেতুটি চালু থাকলে এলাকার লোকজন রিকসা ভ্যান ও ইজিবাইকে যাতায়াত করত। বর্তমানে সেতুটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যাতায়াতকারী ছোট ছোট শিশুদের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হতে হয় এবং যে কোন সময় বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঐচারমাঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিখা রানী হালদার জানান, সেতুটি দিয়ে শিশুদের পার হতে খুবই দূর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক সময় পা ফসকে শিশুরা দূর্ঘটনা কবলিত হয়। এ সেতু পার হতে গিয়ে বিভিন্ন সময় প্রায় ১২/১৪ জন শিশু আহত হয়েছে । জররী ভিত্তিতে সেতুটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বরিশাল এলজিইডি একই অর্থ বছরে একই প্রকল্পের অধীনে আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের দাসেরহাট-মাহিলাড়া সড়কের দাসপ্িট্ট নতুন হাট এলাকায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৫০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু নির্মান করেন। স্থানীয়রা জানান, গত ২০ বছরে সেতুটি সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব ইমতিয়াজ জনান, তার ইউনিয়নে তিনটি সেতু সংস্কারের অভাবে চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। জীবনের ঝুকি নিয়ে মানুষ যাতায়াত করে থাকে। মানুষের দূর্ভোগের কথা উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। জরুরীভিত্তিতে সেতুটি সংস্কারের তিনি আবেদন জানান।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বাহাদুরপুর গ্রামের উত্তর বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন যাতায়াতের একমাত্র সেতুটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় শত শত স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ ওই সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। ভুক্তভোগী দ্বিজেনদ্র নাথ, অরুন ম-ল, সেফালী রানীসহ অনেকেই বলেন, আমাদের এই সেতুটি ১৯৯৭ সালে নির্মাণ করা হয়। পরবর্তিতে আর কখনো সেতুটি সংস্কার করা হয়নি। বাহাদুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, সেতু দিয়ে বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উঃ বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাহাদুরপুর নিশিকান্ত গাইন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজারো মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। ৫/৬ বছর ধরে সেতুটি দুরাবস্থা। জীবনের ঝুকি নিয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল কলেজে যাতায়াত করে। অসংখ্য মানুষ সেতু থেকে পড়ে আহত হয়েছে। সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকৌশলী রাজ কুমার গাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি মানুষের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রকল্পটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে সেতুপুলো সংস্কার ও পুনঃনির্মান করা হবে।