গৌরনদী
কারাগারে রাজকীয় জীবনযাপন আওয়ামী লীগ নেতার \ বিএনপি’র বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কারাগার সাধারণ বন্ধীদের জন্য কষ্টের জায়গা হলেও বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার এক আওয়ামী লীগ নেতার জন্য রাজকীয় জীবনের স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে। তিনি হলেন, গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পৌরসভার সাবেক মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ। গোটা জেলাজুড়ে দানব বলেখ্যাত হারিছুর রহমানের কারাগারে রাজকীয় জীবনযাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গৌরনদী উপজেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ মিছিলটি সরকারী গৌরনদী কলেজ গেট থেকে শুরু করে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড প্রদক্ষিণ করে।
মিছিল শেষে কলেজ সংলগ্ন শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লব, সদস্য সচিব জহির সাজ্জাদ হান্নান, জেলা সদস্য জহুরুল ইসলাম জহির, উপজেলা সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু, পৌর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক সফিকুর রহমান স্বপন, বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন ফকির, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আল আমিন মোল্লা, যুগ্ন আহবায়ক কামরুল ইসলাম জয়, হীরা রহমান সাদ্দাম সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। এসময় বক্তারা, হারিছুর রহমান মেয়রের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে লুটপাট-দুর্নীতির তদন্তে কমিটি গঠন, ২৪’র জুলাই ছাত্র-জনতার অভুত্থ্যানে হত্যাকান্ড ও গত ১৫ বছরে গৌরনদীতে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের গডফাদার ও খুনি দাবী করে হারিছুর রহমানের ফাঁসি দাবী জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গৌরনদী উপজেলা বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র সন্ত্রাসী হারিছুর রহমান। সেসময়ে হামলার শিকার অনেক নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে না পেরে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। যেকারনে তারা মামলা করতে পারেননি। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হামলার শিকার হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত অনেক নেতাকর্মীরা থানায় মামলা দায়ের করেন। বিএনপি নেতাদের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন হারিছ। সূত্রে আরও জানা গেছে, হারিছ শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে ক্ষ্যান্ত হননি। সে তার বাহিনী দিয়ে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ছিলো।
গৌরনদী উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু বলেন, অসংখ্য নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার নির্দেশদাতা হারিছুর রহমান। সে অত্র এলাকার সকলের মানুষের কাছে সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে পরিচিত। সেই গডফাদার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজকীয় ভাবে জীবনযাপন করতেছে। যা আমরা নির্যাতিত নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারিনা।
অপরদিকে কারাবন্ধী সাবেক মেয়র হারিছুর রহমানের বিলাসী জীবন নিয়ে গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা জাকির হোসেন সান্টু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে জাকির হোসেন সান্টু লিখেছেন- গৌরনদী উপজেলার সকল রাজনৈতিক সংগঠনের ঘৃণিত চামার হারিছকে কোর্টের গারদে বসার জন্য একটি হাতা ছাড়া চেয়ার দেওয়া হয়েছে। ফোনে দীর্ঘক্ষন কথা বলাসহ প্রতিদিন বাহিরের ভালো ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। আজকেও তাকে সকালের নাস্তা বাহির থেকে এনে গারতেই দেওয় হয়। মামলা তারিখে তাকে আদালতে সামনে হাজির করা না হলেও শুধু আরাম আয়েশের জন্য তাকে জেল থেকে কোর্টে আনা হয়। স্টাটাসে তিনি আরো লিখেন- জেলে তাকে (হারিছ) টাকার বিনিময়ে আলাদা ভাবে রাখা হয়। যেখানে অন্যান্য আসামীরা জেলে চরম কষ্টে থাকে, সেখানে তাকে (হারিছ) রাজকীয় অর্ভ্যথরা করার সাধারণ হাজতীরা মনে করে হারিছ এখনো অনেক ক্ষমতার মালিক। তার অনুসারী সকল লোকজন দলবেঁধে তার সাথে কোর্ট গারদে সাক্ষাতের সুযোগে অন্য হাজতীরা ক্ষুব্ধ। ছবিটি তুলতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের এমন স্ট্যাটাসের পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সান্টু জানান, কয়েকদিন আগে একটি মামলার হাজিরা দিতে কোর্টে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি কোর্ট হাজতে চেয়ারে বসে মোবাইলে কথপকথন করছে হারিছ। এছাড়াও জামিনে বের হওয়া ব্যক্তিরারও জানিয়েছেন, কারাগারে বেশ আরাম আয়েশে আছেন হারিছ। এনিয়ে মূলত ফেসবুক স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম। পরে আবার তা মুছে ফেলেছি। তবে যা লিখেছি তা মিথ্যে নয়।
গৌরনদী কোর্ট জিআরও বেলাল হোসেন জানান, আমার ডিউটিকালীন সময়ে হারিছুর রহমানকে তিনবার এজলাসে আনা হয়েছিলো। সরকারি নিয়মের বাইরে আমি তাকে কোন সুবিধা দেইনি। এরপর আর তাকে আমার এজলাসে আনা হয়নি। হাজতখানায় সে কি সুযোগ নেয় তা আমার জানা নেই।
এব্যাপারে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ভূঞার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বিষয়টি উদ্ভট কথাবার্তা বলে দাবী করেন এবং জেল সুপারের সঙ্ঘে কথা বলার জন্য বলেন। তবে এবিষয়ে জানতে সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের ০১৭৬৯৯৭০৮১০ নাম্বারে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।