গৌরনদী
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ॥ ৩০ কিলোমিটার খানা খন্দ, ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ ঃ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড থেকে উজিরপুরের জয়শ্রী পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার মহাসড়ক খানাখন্দে ভরপুর । অজানা আতংকে পথ চলতে হয় প্রতিটি যাবাহন চালক ও যাত্রীদের। গত কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে সড়কের মধ্যে ছোট বড় গর্ত সুষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দশ মাসেও ৩০ কিলোমিটর সড়ক সংস্কার করতে না পারায় অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে । ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক যান চলাচল। সড়কের দুরাবস্থায় দূর্ঘটনায় লেগেই থাকছে।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকা -বরিশাল মহাসড়কের ভূরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড থেকে উজিরপুরের জয়শ্রী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটর দুই পাশে ৬ ফুট সম্প্রসারন ও সংস্কারের জন্য ২০১৬-২০১৭ই অর্থ বছরে ৩২ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প গ্রহন করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এম,এম বিল্ডার্স ও এম,এস,এ,এম,পিজে,ভি লিঃ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অক্টোবর (২০১৬) মাসে কার্যাদেশ দেয়া হয়। মার্চ মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারনে গত ১০ মাসেও কাজ শেষ হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে সড়কের বিভিন্ন অংশে দেখা গেছে, ঢাকা – বরিশাল মহাসড়কটির বেহাল দশা। দক্ষিনাঞ্চলের সঙ্গে বরিশাল-ঢাকা, বরিশাল পঞ্জগড়, বরিশাল-চট্রগগ্রাম, বরিশাল-রংপুর বরিশাল মেহেরপুর, বরিশাল-যশোর, বরিশাল বেনাপোল, বরিশাল সিলেট, বরিশাল-কুমিল্লা, বরিশাল-রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার একমাত্র ব্যস্ততম ঢাকা- বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার দুরপাল্লার বাস ও মালবাহী ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকে। সড়কটি খানাখন্দের কারনে দুরপাল্লার বাসের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানায়, এ মহাসড়কে শিকারপুর ও দোয়ারিকা নদীর ওপর সেতু নির্মান ও পায়রা বন্দরের কাজ শুরু হওয়ায় এ সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বহুগুনে বেড়েছে। দেশের প্রতিটি জেলার সাথে দুরপাল্লার বাস লাইন চালু হয়েছে। যাত্রী সাধারনের দূর্ভোগ লাগবে বরিশাল-ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মহাসড়কটি সম্প্রসারন ও সংস্কার প্রকল্প গ্রহন করা হলেও দূর্ভোগ লাগবের পরিবর্তে বহুগুনে বেড়েছে বলে ভ’ক্তভোগীরা জানান।
বরিশাল বাস মালিক সমিতির সদস্য কমল কুমার চাকলাদার, মোঃ নজরুল ইসলাম, আল আমিন জানান, দিন দিন সড়কটির দুরাবস্থা বেড়েই চলছে। অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে বাস চলাচল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে হয় । তারা আরো জানান, মহাসড়কে গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে উজিরপুরের জয়শ্রী পর্যন্ত সড়কের মধ্যে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যাতে যানবাহন চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। নিরুপায় হয়ে চলাচল অযোগ্য এ সড়কে যানবাহন চলাচল করেছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা আসছে এ সময়ে সড়কে গাড়ীর চাপ আরো বৃদ্ধি পাবে।
গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এইচ,এম, আব্দুর রউফ বলেন, গত কয়েক দিনে একটানা বৃষ্টির কারনে রাস্তার ওপর ঢালাই দেয়া পিচ উঠে বড় বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদার রাস্তার দুই পাশে মাটি কেটে ফেলে রাখায় সড়কটি ডোবায় পরিনত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকাগামী বাস দূর্ঘটনার শিকারসহ প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা বেড়েই চলছে। ৩০ কিলোমিটারের অংশ এখন মরনফাঁদে পরিনত হয়েছে। মহাসড়কের ভূরঘাটা, কটকস্থল, বার্থী, ইল¬া, সাউদেরখালপাড়, টরকী, কসবা, গৌরনদী, দক্ষিণ বিজয়পুর, আশোকাঠী, হ্যালিপ্যাড, কাসেমাবাদ, বেজহার, মাহিলাড়া, বাটাজোর, বামরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ রুটে চলাচলকারী বাসের চালক মোঃ আরিফ হোসেন (২৪) মোঃ হারুন হাওলাদার(৩২)সহ অনেকে চালকই অভিযোগ করেন , মহাসড়কের মধ্যকার ভাঙ্গা ও গর্তের মধ্য অংশে পানি জমে থাকায় যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে দূঘটনার শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া মহাসড়কের দুই পাশে ঠিকাদার মাটি কেটে ফেলে রাখায় দূর্ভোগ অনেক বাড়িয়েছে। সাইড দিতে গেলে ডেবে যায় কিংবা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ঠিকাদারের গাফলতির ব্যপারে সওজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও কোন উদ্যোগ নেননি।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে ঢাকা- বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে উজিরপুর জয়শ্রী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটর ঘুরে দেখা যায় মহাসড়কটির বেহাল চিত্র। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষনে সৃষ্টি হয়েছে হাজারও ছোট বড় গর্তের। যা এক মহা খানাখন্দ। সামান্য বৃষ্টিতে গর্তগুলো ডুবে যাওয়ায় দুরপাল্লার যানবাহন চালকসহ মিনিট্রাক, অটো টেম্পু, নসিমন, মটরসাইকেলসহ যানবাহন চালকরা গর্তগুলো দেখতে পান না ফলে তাদের অজান্তেই যানবাহন খাদে পরে বিকল হয়ে পরে। গৌরনদীর কটকস্থল, খাঞ্জাপুর, সুন্দরদী, ইল্লা, মাহিলাড়া, কসবা, টরকী,,পালরদী উজিরপুরের বামরাইল, সানুহার বামরাইল এলাকার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। এ সময় স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় বছর ধরে সড়কটিরি বেহাল দশা থাকলেও দেখার যেন কেউ নাই। ঠিকাদারের গাফলতির কারনে মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে। সকাল ১১টায় গৌরনদীর ইল্লা পেট্রোল পাম্পের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক খানাখন্দ ভরাটে ইট বালু ফেলে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলে চেষ্টা করছেন। সাড়ে ১১টায় মহাসড়কের খাঞ্জাপুর স্কুলের দক্ষিন পাশ এলাকায় দেখা যায়, অঝরো বৃষ্টি হচ্ছে মহাসড়কে শত শত গর্ত রয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মিরা ট্রাকযোগে মালামাল নিয়ে ইটের কুচা ও বালু ফেলে গর্তভরাট করছে। যা মুহুর্তেই উঠে যাচ্ছে। এ সময় লেবার সর্দার সুলতান ভূইয়া বলেন, জরুরী ভিত্তিতে সড়ক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে। এম,এস,এ,এম,পিজে,ভি লিঃ এর প্রকল্প তদারকি কাজে নিয়োজিত মো. আলম গাফলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অতি বৃষ্টির কারনে কাজ বন্ধ থাকায় এ দুরাবস্থার তৈরী হয়েছে। একই কথা বললেন এম,এম, বিল্ডার্সের ব্যবসায়িক অংশিদার মোঃ নাসির উদ্দিন আহম্মেদ।
ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু হানিফ বলেন, মহাসড়কে যানবাহন স্বাভাবিক রাখতে সওজ ও ঠিকাদারের লোকজন সার্বক্ষনিক কাজ করছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম মস্তফা বলেন, বৃষ্টির মধ্যে বিটুমিনের কাজ করা সমচিন নয়, প্রজ- বৃষ্টি হচ্ছে বৃষ্টি থামলে ঠিকাদার মাঠে নামবে, অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারনে ক্ষয়ক্ষতি বেশী হচ্ছে। ঈুদুল আজহার পূর্বে নির্বিগ্নে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।