গৌরনদী
গৌরনদীতে দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও আল-মদিনা ইসলামী কো-অপারেটিভ লিমিটেড
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ২০/২৫টি গ্রামের কয়েক হাজার গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে আল-মদিনা ইসলামী সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ লিমিটেড নামের একটি ভূয়া সংগঠন।
অভিযোগে জানাগেছে,ওই সংস্থার প্রতারনার ফাঁদে পরে অত্র এলাকার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ আজ নিঃস্ব। তারা টাকা ফেরত পেতে প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানাগেছে, ২০০৯ সালে গৌরনদীতে আল-মদিনা ইসলামী সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ লিমিটেড নামের একটি সংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটে। উপজেলার পিঙ্গলাকাঠি বন্দরে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে কলাবাড়ীয়া,পিঙ্গলাকাঠি,শংকরপাশা ,বাহাদুরপুর ,দক্ষিণ-বাহাদুরপুর,কালনা,দিয়াসুর,লেবুতলী,হোসনাবাদ,সরিকল,কান্ডপাশা,নলচিড়া-খানাবাড়,কুতুবপুর,মিয়ারচর,চর-শরিকল, সাকোকাঠি,শাহজিরাসহ ২০/২৫টি গ্রামের গরীব ও অসহয়ায় নারী পুরুষদের অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে ওই সংগঠনের লোকজন তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। ৩ মাস আগে তারা হঠাৎ করে পিংগলাকাঠির অফিস গুটিয়ে আতœগোপন করে। একারণে দিশেহারা হয়ে পরেছেন গ্রাহকরা।
খবর নিয়ে জানাগেছে,ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হচ্ছেন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া উপজেলার তাফাল বাড়ীয়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিম মুন্সির পুত্র চৌধুরী মুহাঃ শহিদুল ইসলাম আজাদী। তার ১ম স্ত্রী বেগম খাদিজা আজাদী হচ্ছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক,২য় স্ত্রী সৈয়দা ইসরাত জাহান সহ-ব্যবস্থাপান পরিচালক ও তার পুত্র এসএম হামিদুল ইসলাম আজাদী সহকারী পরিচালক, এসএম সহিদুল ইসলাম সংস্থার দাপ্তরিক কর্মকর্তা । এছাড়া অন্যান্যরা হলেন তার আত্মীয় স্বজন। তাদের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন বরিশালের রুপাতলীর হাইস্কুল সড়কে। অফিসের নাম দেয়া হয় মদিনা ভবন। বর্তমানে অফিসটি বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে গৌরনদীর নলচিড়া এলাকায় সরে-জমিন ঘুরে জানাগেছে, প্রতারকচক্র অধিক মূনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার প্রবাসী ও সহজ সরল কয়েক হাজার নারী-পুরুষের কাছ থেকে আল-মদিনা ইসলামী সঞ্চয়ী আমানত প্রকল্পের নামে গত ৮/৯ বছরে বিভিন্ন মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও মাসিক সঞ্চয় জমা রাখার নাম করে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া কোম্পানীর মালিকানা শেয়ার বিক্রির নামেও কয়েক ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে চৌধুরী মুহাঃ শহিদুল ইসলাম আজাদী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
নলচিড়া খানাবাড়ী গ্রামের ছরোয়ার গাজীর স্ত্রী হাসিনা বেগম জানান, ৬ বছরে দ্বিগুন মূনাফার লোভ দেখিয়ে তার পরিবারের ৫ জন সদস্যদের কাছ থেকে ওই চক্রের সদস্যরা ৬৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। একই গ্রামের সুরাত বেপারীর স্ত্রী রাহিমার কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকা, ছানু বেপারীর স্ত্রী আলোর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা, জয়নাল গাজীর কন্যা তমা ও আসমার কাছ থেকে ২৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ অসংখ্য নারী-পুরুষের। প্রতারনার মাধ্যমে আল-মদিনা ইসলামী ডেভেলপমেন্ট কোম্পানীর মালিকানার শেয়ার বিক্রির নাম করে গৌরনদীর পার্শ্ববর্তি কালকিনি উপজেলার ক্রকিরচর এলাকার মুহাঃ আবুল খাইর সিদ্দিকের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চৌধুরী মুহাঃ শহিদুল ইসলাম আজাদী ও তার সহযোগীদের কারণে আজ স্বামীর সাথে এই এলাকার বহু নারীর সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মূনাফা পাওয়াতো দুরের কথা, এখন আসল হারিয়ে দিশেহারা সবাই।
নিরুপায় হয়ে আল-মদিনা ইসলামী সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ লিমিটেড এর গৌরনদীর পিংগলাকাঠি অফিসের ম্যানেজার মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন গ্রাহকদের পক্ষ হয়ে গত ২২ জুন বরিশাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চৌধুরী মুহাঃ শহিদুল ইসলাম আজাদী, ১ম স্ত্রী বেগম খাদিজা আজাদী,২য় স্ত্রী সৈয়দা ইসরাত জাহান, পুত্র এসএম হামিদুল ইসলাম আজাদী ও এসএম সহিদুল ইসলামকে আসামী করে প্রতারনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারী করেন ।
অভিযোগের ব্যাপারে আল-মদিনা ইসলামী সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চৌধুরী মুহাঃ শহিদুল ইসলাম আজাদীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তার সবকটি নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।