গৌরনদী
উজিরপুরে কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও পরিকল্পনার অভাবে ধস ॥ ট্রলার মালিক গ্রেপ্তার
খায়রুল ইসলাম, ধামুরা উজিরপুর থেকে ফিরে ঃ
এলজিইডি কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও অপরিকল্পিত সংস্কারের অভাবে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বৃহৎ ব্যবসায়ী বন্দর ধামুরা বন্দর সংলগ্ন সেতুটি মঙ্গলবার রাতে ধসে পড়েছে। এসময় ৭জন আহত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন, বন্দরের ব্যবসায়ী ও জন প্রতিনিধিদের অভিযোগ উজিরপুর এলজিইডি কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও অপরিকল্পিত সংস্কারের অভাবে কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সেতুটি ধসে পড়েছে। সেতুটি ধসে পড়ার পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষকে। জরুরী ভিত্তিতে সেতুটি নির্মানের আহবান জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পুলিশ ট্রলার মালিক রবিউলকে গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ী, সুবিধাভোগী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল এলজিইডির স্বল্প ব্যায় প্রকল্পের অধীনে ১৯৮৯-১৯৯০ অর্থ বছরে সানুহার-ধামরা সড়কের গৌরনদী ধামুরা খালের ধামুরা বন্দর সংলগ্ন স্থানে ১২০ ফুট দীর্ঘ লম্বা প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে একটি লোহার সেতু নির্মানের প্রকল্প গ্রহন করা হয়। ১৯৯২ সালে সেতুটি নির্মান কাজ সমাপ্ত হয়। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে সেতুটি সংস্কার জন্য ১০ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা ব্যায় করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি সংস্কারে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার অভাব ছিল। সেতুটি সংরক্ষনে ফাউ-েশন বা খুটির রক্ষনা বেক্ষন দরকার ছিল কিন্তু কর্তৃপক্ষ ফাউ-েশনে কাজ না করে সেতুর আরসিসি ঢালাই ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে আরসিসির শ্লাব ঢালাই করেছে। যাতে সেতুটি ধসে পড়ার কাজকে তরান্বিত করেছে। এ ছাড়া গত ৬মাস ধরে সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীকে বার বার অবহিত ও লিখিতভাবে জানানো হলেও তারা সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহন করে নাই। কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারনে কোটি টাকার সেতুটি ধসে পড়েছে।
সকাল ১১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ১২০ ফুট লম্বা সেতুটির মাঝ অংশে তিনটি স্পানের প্রায় ৬০ ফুট অংশ ধসে খালের মধ্যে বিলীয় হয়েছে। ধসে পড়া সেতুর কাছে শত শত উৎসুক মানুষকে ভীড় করছে। এসময় স্থানীয় মো. আনসিুর রহমান(৩৫),ফারুক সিকদার(৪০), রুবেল হোসেন(৩৬), মো. চান্দু খান(৫২)সহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলজিইডির কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও অবহেলার কারনে কোটি টাকার সেতুটি ধসে পড়েছে। আমরা বার বার সেতুটির বেহাল দশার কথা জানিয়েছি এমন কি লিখিতভাবে অবহিত করেছি। কর্তৃপক্ষ কোন প্রতিকার করেননি। ব্যবসায়ী (ঠিকাদার) নাসির উদ্দিন, মো. আলাউদ্দিন বলেন, কর্তৃপক্ষসেতুটির সংস্কারের নামে অপরিকল্পিত ব্যায় করেছে যাহা কোন কাজে লাগে নাই। বরং সেতুটি ধসে পড়তে সহায়তা করেছে। সেতুটির টানা, এ্যাংগেল, ক্লাম, ওয়াটারসহ নিচের অংশের সংস্কার করা প্রয়োজন ছিল কিন্তু তা না করে উপরের ভাল শ্লাব ভেঙ্গে নতুন করে ঢালাই করেছে। ফলে সেতুর নড়বরড় ভিত্তির উপর বেশী ওজন পড়ে সেতুটি অত্যাধিক ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়ে। এক সঙ্গে বেশী লোকজন ও ভারি যানবহন চলাচলের সময় সেতুটি কেঁপে উঠত। বিষয়টি অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করা হলেও তিনি ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
ধামুরা বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও শোলক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী হুমাউন কবির বলেন, ধামুরা বন্দরটি বরিশালের একটি বৃহৎ ব্যবসায়ী বন্দর। এখানে প্রায় তিন হাজার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ বন্দরে কেনাকাটার জন্য আসেন। এক সময় বন্দরের ব্যবসায়ীরা ১৫/২০ টন মালামাল নিয়ে সেতুর উপর দিয়ে ট্রাক চলাচল করত। দীর্ঘদিনে সেতুটির সংস্কার হয়নি। ২০১০ সালে যে সংস্কার হয়েছে তা ছিল অপরিকল্পিত। সেতুটি খুবই ভাল ছিল নিজের ষ্ট্রকচারের এ্যাংগেল, ফ্লাটবার, ওয়াটার বার, ক্লাম ও টানা অজ্ঞাতনামা চোরেরা খুলে নিয়ে গেলে সেতুটি ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষ তা সংস্কার না করে অপরিকল্পিতভাবে ভাল শ্লাব ভেঙ্গে পুনরায় শ্লাব ঢালাই করে যা ঠিক ছিল না।
বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অপরিকল্পিত সংস্কার কাজ করায় এবং লিখিত অবহিত করার পরেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউনুস আলী মঙ্গলবার রাতে দূর্ঘটনা স্থলে পৌছলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে লাঞ্চিত করেছে। এক পর্যায়ে তোপের মুখে প্রকৌশলী ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। ধামুরা কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম জানান, সেতুটি অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ন । এই সেতু দিয়ে গৌরনদী , আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জেলা ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করে থাকে। সেতুটি অতি দ্রুত নির্মান করা উচিত। ধামুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সেতুটি ধসে যোগাযোগ বিচ্ছন্ হয়ে যাওয়ায় সাধারন মানুষ চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এলাকাবাসী দাবি জরুরী ভিত্তিতে সেতুটি নির্মান করার দাবি জানান।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এলজিইডির উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউনুস আলী বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়, ওই খালটিতে অসংখ্য ছোট লঞ্চ ও মালবাহী ট্রলার চলাচল করে তাতে প্রায়ই সেতুটিকে ধাক্কা দেয় ফলে সেতুটি দূর্বল হয়ে সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে ট্রলারের ধাক্কায় ধসে পড়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী ইউনুস আলী বাদি হয়ে সরকারি সম্পদ বিনষ্টে অভিযোগ এনে ট্রলার মালিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে।