গৌরনদী
উজিরপুরে ১৭ বছর পর শিকারপুর ইউপি নির্বাচন ॥ ভোট দেয়া নিয়ে শঙ্কায় বিএনপির প্রার্থী-কর্মি ও ভোটাররা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ ১৭ বছর পর বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২৩ মে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর ভোটাদের মধ্যে সর্বত্র উৎসাহ ও আমেজ দেখা গেলেও নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বিএনপির প্রার্থী, কর্মি ও ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিএনপির প্রার্থী ও কর্মিদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী বহিরাগত সন্ত্রাসী ও সর্বহারা সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রচারনা চালানোর পাশাপাশি তাদেরকে প্রচারনায় বাধা প্রদান ও হামলাসহ নানান হুমকি দিচ্ছে। এতে বিএনপির প্রার্থী, কর্মি ও সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ভোটার, প্রার্থী বিএনপির কর্মিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় গত ১৭ বছর যাবত নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর সর্বত্র নির্বাচনী আমেজ দেখা যায়। উজিরপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. জসিম উদ্দিন জানান, আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন শিকারপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন ও বিএনপির দলীয় ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান। এ নির্বাচনে সাধারন সদস্য পদে ৩৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা হবে ধানের শীষ ও নৌকা মার্কা প্রার্থীর মধ্যে।
বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী, কর্মি সমর্থকরা অভিযোগ করেন, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী, কর্মি ও সমর্থকরা দলীয় ক্যাডারদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি করে চলছেন। সংগঠিত করেছেন গৌরনদী, আগৈলঝাড়া , বাবুগঞ্জ ও বানরীপাড়ার বহিরাগত সন্ত্রাসী ও সর্বহারা সন্ত্রাসীদের। এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা শতাধিক মটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়ে বিএনপির ভোটার ও কর্মিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থীর ভাড়াটে সন্ত্রাসী, আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ ক্যাডারা তাদের মাঠে নামতে দিচ্ছেন না, হুমকি ধামকি, হয়রানীসহ মাঠে নামলেই হামলার শিকার হতে হয়।
উজিরপুর উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল হাওলাদার(৪০) অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার রাত পোনে ১০টার দিকে তিনি ইচলাদী বাসষ্টান্ডে পৌছলে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সরোয়ার হোসেনের ভাড়াটে একদল সন্ত্রাসী তার উপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে আহত করে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নির্বাচনী মাঠ ছাড়তে বলে অন্যথায় জীবন নাশের হুমকি দেয়। শিকারপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আ. সাত্তার মল্লিক(৫৫)উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রব মিয়া (৫২), ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম সালেক(৫০) অভিযোগ করে বলেন, সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রর্থীরা ভাড়াটে শসস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাতে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞাতনামা একদল সন্ত্রাসী বাড়ি গিয়ে এলাকা ছাড়তে বলেন, অনথ্যায় হত্যা হুমকি দেন। ধানের শীষ প্রতীকের কর্মি ও যুবদল নেতা মো. মাইনুল ইসলাম (৩০), মেহেদী হাসান (২২) ও ইমরান হোসেন (২৩)অভিযোগ করেন, তারা উঠান বৈঠক শেসে বাড়ি ফেরার পথে নৌকা প্রতীকের একদল সন্ত্রাসী জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে তাদের উপর হামলা চালায় এবং পিটিয়ে কুপিয়ে ১০ জনকে আহত করেছে।
১৭ বছর পর নির্বাচন অনুষ্টিত হওয়ায় খুশি সাধারন ভোটাররা। কিন্তু ভোট দিতে পারা নিয়ে তাদের শংঙ্কা রয়েছে। তারাবাড়ি বাজারের চায়ের দোকানদার আব্দুল কাদের হাওলাদার(৫৫) বলেন, ১৭ বছর ভোট পাইয়া মোরা খুবই আনন্দিত তয় ভোট দিতে পারমু কিনা হেইয়া বুইঝঝাই ভোট কেন্দ্রে যামু। তার সুরে সুর মিলিয়ে ক্রেতা আলী আহম্মেদ, আবুল হোসেন(৪২)সহ কয়েকজন বলেন, ভোটের দিন যতই ঘনাইয়া আইছে ততই ভয়ভীতি বাড়ছে শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারমু কিনা জানিনা। মু-পাশা গ্রামের সাব্বির আলী(৪২), বরতা গ্রামের শিহাবউদ্দিন সরদার(৩৬), শিকারপুর গ্রামের জাকির হোসেন(৬০) জয়শ্রী গ্রামের সুলতান মিয়া(৫৮)সহ অনেকেই ভোট দিতে পারা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভোট দেওয়ার পরিবেশ থাকলে কেন্দ্রে যামু।
বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মীর কামরুজ্জামান অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী আচরন বিধি লংঘন করে শত শত মটরসাইকেল মহড়া দিয়ে বিএনপির নেতা কর্মি ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভিিত প্রদর্শন ও নানান হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের কোথাও উঠান বৈঠক করতে দিচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার সকালে ৫নং ওয়ার্ডের শামছুল হক হাওলাদারের বাড়িতে উঠান বৈঠক ছিল সেখানে হামলা করে তা প- করে দেয়। এ ছাড়া ৯নং ওয়ার্ডে আমার কর্মি সমর্থকদের প্রচারনায় বাধা দিয়ে তাদের মারধর করে বের করে দেয়। আচরন বিধি লংঘন ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. সরোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। সে ভরডুবি নিশ্চিত জেনে মিথ্যাচার চালাচ্ছে। আমার কোন সন্ত্রাসী দরকার হয়না এলাকার হাজার হাজার ভোটারই আমার শক্তি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আ. মজিদ সিকদার বলেণ, বিএনপির একটি সন্ত্রাসী দল তারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই আওয়ামীলীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উজিরপুর উপজেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং অফিসার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আচরন বিধি লংঘনের কোন অভিযোগ আমি পাইনি, অবাধ-সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। উজিরপুর মডেল থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বলেন, নির্বাচনী সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় আছে, কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির প্রার্থী কর্মি ও সমর্থকরা গদবাধা অভিযোগ করেছেন যার কোন ভিত্তি নেই।