গৌরনদী
গৌরনদীতে পুলিশের দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় আসামিকে অমানবিক নির্যাতন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) মো. মহিউদ্দিনের দাবিকৃত তিন লক্ষ টাকা না দেওয়ায় উপজেলার খাঞ্জাপুর গ্রামের কাতার প্রবাসী এক যুবকে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করে সমগ্র শরীর রক্তাক্ত জখম করেছে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ডান হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। মনির সরদারকে মূমূর্ষ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় বুধবার রাত পোনে ১টায় বরিশাল পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন, মামলার বিবরন, নির্যাতিত পরিবারের সদস্য ও পুলিশ জানান, গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মো. মোসলেম সরদারের পুত্র মনির সরদার(৩২) ২০১৪ সালের মে মাসে জীবিকার তাগিতে কাতার যান। ১৫/২০দিন আগে ছুটিতে বাড়িতে আসেন। মনিরের বাবা মোসলেম সরদার (৬৮) জানান, মনির বাড়িতে আসার কয়েক দিন পরে পুলিশ বাড়িতে এসে তার নামে গৌরনদী থানায় ওয়ারেণ্ট আছে বলে তাকে খুঁজতে থাকে। পুলিশের ভয়ে মনির আত্মগোপন করেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিদেশ যাওয়ার এক মাস ১১দিন পরে গৌরনদী মডেল থানায় দায়ের করা দুটি মাদক মামলার ওয়ারেণ্টভূক্ত আসামি মনির।
পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুর তিনটায় গৌরনদী মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) মো. মহিউদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা এলাকা থেকে মনির সরদারকে গ্রেপ্তার করেন।
মনির সরদারের চাচা বেসরকারী কলেজ শিক্ষক প্রভাষক এস,এম, রাসেল অভিযোগ করে বলেন, ভাতিজা মনিরকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ আমাদের কাছে তিন লক্ষ দাবি করেন। টাকা না দিলে মনিরের অবস্থা বেহাল করে এক শত পিস ইয়াবাসহ মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেওয়ার হুমকি দেন।
মোসলেম সরদার অভিযোগ করে বলেন, অভাবি সংসারে একটু সুখের আশায় জমাজমি বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু কপালে সুখ নাই। দালালের খপ্পরে পরে সেখানে ভাল কোন কাজ পাই নাই। তাই তেমন কোন আয় রোজগার করতে পারে নাই, খালি হাতে কোন রকম খেয়ে পরে দেশে ফিরে আসেন পুত্র মনির। তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার মত অবস্থা নাই বিষয়টি দারোগা মহিউদ্দিনকে জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমারে বলেন, এতদিন বিদেশ থেকে এসেছে টাকা নাই, তয় মজা দেখাইতেছি বলেই মনিরকে মারধর শুরু করেন। নির্যাতনের বর্ননা দিতে বৃদ্ধ মোসলেম অঝর কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে আরো বলেন, পুলিশ মোর বাবাকে পিটিয়ে সারা শরীর দিয়ে রক্ত বাইর করছে। প্লাস দিয়ে হাতের বুড়ো আঙ্গুল চেপে রক্ত বাইর করেছে। এক পর্যায়ে ডান হাতের গোড়া ও কব্জি ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার বাবায় অন্যায় করলে আপনারা তারে মাইরা ফালান মুই কষ্ট পামু না। অন্যায় ছাড়া আমার বাবারে পুলিশ এই রহম মারছে। কার কাছে গেলে বিচার পামু, আল্লাহ তুমি এর বিচার কর।
মনিরের বোন শিল্পী বেগম(২৫) বলেন, আমার ভাইকে পুলিশ অমানবিক নির্যাতন করেছে। মুখ বেধে হ্যা-কাপ পড়াইয়া মাথা দুই ঠ্যাং এর নিচে ঢুকিয়ে পিটিয়ে পিঠ থেতলে দিছে। পানি পানি করে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে জ্ঞান ফিরলে পুনরায় নির্যাতন করেছে। দিনে ও সন্ধ্যার পরে এ নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে রাতে বড় স্যারে(ওসি) এসে ভাইর অবস্থা বেগতিক দেখে দারোগাকে গালাগাল করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে বললে দারোগা হাসপাতালে নিয়ে যান। এবং দারােগা মহিউদ্দিন চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে ভাইকে থানায় নিয়ে আসেন। আমরা দারোগাকে চিকিৎসা না দিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করলে আমাদেরকে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে দারোগা মহিউদ্দিন। মনিরের অবস্থার অবনতি ঘটলে মঙ্গলবার রাত পোনে ১টায় মনিরকে বরিশাল পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. মাহবুব আলম মির্জা বলেন, রাতে গৌরনদী মডেল থানার এএসআই মিহউদ্দিন এক রোগীকে নিয়ে এসে বলেন, মনির নামে রোগীকে গনপিটুনী (পাবলিক ফিজিক্যাল এ্যাসল্ট) দিয়েছে বলে হাসপাতালে ভর্তি করেন কিন্তু কিছুক্ষন পর চিকিৎসা না দিয়ে বরিশাল পাঠনোর কথা বলে নিয়ে যান্ । রোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত এবং ডান হাত ভাঙ্গা ছিল্।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গৌরনদী মডেল থানার এএসআই মো. মহিউদ্দিন টাকা দাবি ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, গ্রেপ্তার করতে গলে ধস্তাধস্তিতে সে হাতে ব্যাথা পেয়ে থাকতে পারে। আমি কারো কাছে কোন টাকা দাবি করি নাই। এ ব্যপারে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. ফিরোজ কবির বলেন, টাকা দাবির অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। হাত ভাঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, কিছুদিন আগে আছার খেয়ে মনিরের হাত ভেঙ্গে গেছে। মনিরের পরিবারটির সবাই মাদক ব্যবসায় জড়িত। মনিরের বিরুদ্ধে দুটি মাদক মামলার ওয়ারেণ্ট রয়েছে। তাছাড়া তার ভাইর বিরুদ্ধে ১৪টি মাদক মামলা রয়েছ্ ে। মামলা থেকে বাঁচতে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছে পরিবারটি। তবে এএসআই মহিউদ্দিন অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করেছে তার বিচার সে পাবে। এএসআই মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে বরিশাল পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে।